ধ্রুবতারা
অশোক দাশ
আজ অবিনাশের মনটা একদম ভালো নেই ।আজ তিন দিন হল তার প্রাণের বন্ধু অখিলেশ মারা গেছে। এখনো বিশ্বাস করতে পারে না অবিনাশ। চোখের সামনে বার বার ভেসে ওঠে, সদা হাস্যময় প্রাণোচ্ছল অখিলেশের মুখ। সে ছিল তার অভিন্ন হৃদয় বন্ধু। আপদে-বিপদে উৎসবে অনুষ্ঠানে যে সব সময় থাকতো তার পাশে। স্কুল- কলেজ, খেলাধুলা, যাত্রা- নাটক, কর্মক্ষেত্র সবই এক সূত্রে গাঁথা। শুধু তফাৎ ছিল লেখালেখির ক্ষেত্রে। আমাকে প্রায়সই বলতো, তোদের এই মন গড়া লেখা, কলমের খোঁচায় কাকে মারছিস, কাকে রাখছিস, কার বিয়ে দিচ্ছিস, কার বিয়ে ভাঙছিস, আমার একদম পছন্দ নয়। পারবি আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে ?আমাকে প্রশ্ন করতো।
অখিলেশ প্রিয় প্রাণের বন্ধু আমার,কেহ তোকে মনে না রাখলেও, আমি তোকে আজীবন মনের মনিকোঠায় সযত্নে ধরে রাখবো ।আমার লেখনীতে তোকে জীবন্ত করে রাখবো চিরটা কাল।
অখিলেশ বলতো, আমি এসেছি একা , চলে যেতে হবে একা। প্রিয়জনেরা তিন দিন কাঁদবে। তারপর আস্তে আস্তে সব ভুলে যাবে। তখন দেখবি শুরু হবে আমার নামে কত কুটকচালি কথা। ছেলে মেয়েরা বলবে আমাদের জন্য কিছুই করেনি ।বউ বলবে সারা জীবন জ্বালিয়ে মেরেছে। কারন কি জানিস আমার সঞ্চয়ের ঘর শূন্য ।ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স বলে আমার কিছুই নেই। আমি চিরদিন মনে করে এসেছি আমার সন্তান- সন্ততিরাই আমার ব্যাংক ব্যালেন্স।
অথচ তুই তো জানিস কি পরিশ্রমটাই না করেছি। আট ঘন্টা জায়গায় বার ঘন্টা ডিউটি করেছি । ছেঁড়া জুতো সেলাই করে চালিয়েছি মাসের পর মাস। পরিবার-পরিজনের মুখে হাসি ফোটাতে জীবন বাজি রেখেছি।
অবিনাশ মনে মনে ভাবতে থাকে কথাগুলো অখিলেশ একদম সঠিক বলেছিল। কারণ এখনই শুরু হয়ে গেছে গুঞ্জন। কত জনে কত কথা বলছে। তার একান্ত আপনজন যারা, তারাও কত রকম উল্টোপাল্টা বলে চলেছে।
সংসার তোকে মনে না রাখলেও, তোর সামাজিক কর্ম মহীয়ান হয়ে থাকবে সমাজের বুকে। তোর উদ্যোগে সকলের সহযোগিতায় গড়ে ওঠা স্কুল ক্লাব খেলার মাঠ তোর নিজ হাতে বসানো চারা গাছ আজ মহীরুহ হয়ে কত প্রানীকুলকে বাঁচার আশ্বাস যোগাচ্ছে।
সবকিছু কি ভুলে থাকা যায়! ভোলা যায় না, তোর মরমী আর্ত মানুষের প্রতি সহমর্মিতার উপখ্যান। তুই বেঁচে থাকবি চিরটা কাল আমার বক্ষ পিঞ্জরে। তুই বেঁচে থাকবি পথহারা মানুষের কাছে রাতের আকাশে ধ্রুবতারা হয়ে। সূর্য অস্তমিত হলেও রাঙিয়ে যায় গোধূলি আকাশ।
==============
অশোক দাশ
ভোজান ,রসপুর, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ , ভারত।