উপলব্ধি
জয়শ্রী সরকার
সুজয়ের টাই ঠিক করতে করতে অন্বেষা বললো, "অফিস থেকে ফেরার পথে রবীন্দ্রনাথের 'শেষের কবিতা' উপন্যাসটা এনো তো। পেলে অবশ্যই আনবো বলে দ্রুত বেরিয়ে গেল সুজয়।
নিঃসন্তান অন্বেষা নিজেকে নিয়ে বসলো। অনেক কাটাছেঁড়া করলো সুজয়ের টাই ঠিক করতে করতে অন্বেষা বললো, "অফিস থেকে ফেরার
পথে রবীন্দ্রনাথের 'শেষের কবিতা' উপন্যাসটা এনো তো। পেলে অবশ্যই আনবো বলে
দ্রুত বেরিয়ে গেল সুজয়।
নিঃসন্তান অন্বেষা নিজেকে নিয়ে বসলো। অনেক কাটাছেঁনিজেকে। যেন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই নিজের প্রতিপক্ষ। সুগভীর ভাবনা পেয়ে বসলো অন্বেষাকে। এতদিন নিজের কথাই ভেবেছি। পরস্পরকে ভালোবেসে আমাদের বিয়ে। সুজয় কেন ওর অক্ষমতাকে স্বীকার করে না ----- একবারও ভেবেছি? সুজয়ের যন্ত্রণা এমনিতেই কুরে কুরে খাচ্ছে ওকে। সেখানে আমিও যদি ....... । কথায় কথায় নারীনির্যাতন নিয়ে সোচ্চার হ'ই আমরা। কিন্তু পুরুষের যন্ত্রণা, তার অন্তর্দহন কোনোদিন হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছি কী? পুরুষের ঘাম দেখলেও অশ্রু দেখতে পাই কী? নিজেই নিজেকে আত্মবিশ্লেষণের এ্যানাটমি টেবিলে বসিয়ে ডিসেকশন করছে অন্বেষা। আমূল পরিবর্তন এলো অন্বেষার মধ্যে। এও কী সম্ভব?
সেদিন সন্ধ্যে থেকেই প্রচন্ড ঝড়, সেইসঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি। অন্বেষার অন্তরেও চলছে তোলপাড়। প্রশ্নের পর প্রশ্নে বিদ্ধ করছে নিজেকেই। দু'চোখে বাঁধভাঙা বৃষ্টি। একসময় শান্ত হ'লো আকাশ। ঝড়ও গেল থেমে। অন্বেষা আকুল হয়ে অপেক্ষা করছে সুজয়ের জন্য। অবশেষে, সুজয় এলো। একেবারেই কাকভেজা। "শেষের কবিতা" কিন্তু অক্ষত। টাওয়েল নিয়ে অন্বেষা ছুটে এলো। অফিস ব্যাগ থেকে বইটা বের করে অন্বেষার হাতে দিলো। খুশিতে আত্মহারা অন্বেষা। রাত্রে একান্তে সুজয়কে বললো, "অনাথ শিশুদের জন্য একটা আশ্রম গড়তে চাই, তুমি পাশে থাকবে তো? দু'বাহু দিয়ে সুজয় ওর প্রশস্ত বুকে অন্বেষাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে নিলো ..….....
==================
জয়শ্রী সরকার,
দিনান্তিকা, প্রেমবাজার, খড়গপুর,
পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ