Click the image to explore all Offers

নিবন্ধ ।। দুর্নীতি এবং বর্তমান সমাজ ।। বারিদ বরন গুপ্ত

 

দুর্নীতি এবং বর্তমান সমাজ

বারিদ বরন গুপ্ত

বর্তমানে খেতে খামারে, কলকারখানায়, বাসে ট্রেনে, অফিসে আদালতে, হাটে বাজারে, যেখানেই যায় না কেন, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হলো দুর্নীতি। সবার অভিযোগ সেই একই, দুর্নীতি নিয়ে ! কিন্তু দুর্নীতির কোথায় কিভাবে জন্ম হচ্ছে , কিভাবে এর প্রসার ঘটছে, সেই নিয়ে কিন্তু আলোচনা তেমন গড়ে উঠছে না, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি হচ্ছে, এটাই সকলের নজরে আসছে, এর জন্মদাতা যে বর্তমান সমাজ এবং সমাজ ব্যবস্থা সে ব্যাপারে কিন্তু সকলেই নীরব।

নীতিহীন কাজ হল দুর্নীতি, অর্থাৎ যে কাজকর্মের মধ্যে কোন নীতি খুঁজে পাওয়া যায় না, বলতে গেলে নীতি বিরুদ্ধ কাজ হলো দুর্নীতি!
বর্তমান সমাজে এই নীতি বিরুদ্ধ কাজের পরিমাণ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, কিছুতেই দুর্নীতিকে ঠেকানো যাচ্ছে না! দুর্নীতিগ্রস্তরা বিভিন্ন কৌশলে নীতির পাশ দিয়ে দুর্নীতির প্রশ্রয় নিচ্ছে , যার ফলে দুর্নীতি নির্ণয় করা ও খুব কঠিন হয়ে পড়ছে!

এখন প্রশ্ন হলো দুর্নীতিকে কেন ঠেকানো যাচ্ছে না ? কারণ একটাই দুর্নীতিগ্ৰস্থরা নীতির পাশ দিয়ে কৌশলে দুর্নীতির সুযোগ নিচ্ছে! যা সাধারন মানুষের কাছে বোধগম্য হওয়া খুব কঠিন! বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি তাদের এই কাজে ভীষণভাবে সাহায্য করছে! তাছাড়া অনেক সময় দুর্নীতিগ্রস্তদের আড়াল করার বর্তমানে চিরাচরিত নীতি হয়ে উঠেছে। যার ফলে উত্তরোত্তর দুর্নীতি বাড়ছে, একে কিছুতেই রোখা যাচ্ছে না, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বছরের পর বছর কোটে মামলার পাহাড় জমছে!

সমাজ হচ্ছে দুর্নীতির কারিগর, প্রতিনিয়ত বুদবুদ এর মত দুর্নীতি বাড়ছে, অনেক সময় দুর্নীতিগ্রস্তরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, সমাজে এর একটা বিরূপ প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে, জনগণ সমাজ ও রাষ্ট্রের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে, বিক্ষোভ বিতৃষ্ণা দানা বাঁধছে! যুব অসন্তোষ দিন দিন বাড়ছে!

বর্তমানে দুর্নীতি কিছুটা দেখাদেখি চাষ প্রকৃতির হয়ে উঠছে। আগেই বলেছি সমাজ দুর্নীতির বুদবুদ, আর এই বুদবুদ গোটা সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে। দুর্নীতি কে কিছুটা পুকুরে কচুরিপানার বাড়ার সাথে তুলনা করা যেতে পারে, আজকে দেখলেন একটা, দুদিন পরে দশটা, ধীরে ধীরে কয়েকদিনের মধ্যেই গোটা পুকুরটা কচুরিপানা দখল করে নেয়। কুকুর দূষিত হয়ে ওঠে, দুর্গন্ধ ছড়ায় দিকে দিকে ! দুর্নীতি ও তাই কচুরিপানার মত গোটা সমাজটাকে খেয়ে ফেলছে! গোটা সমাজ দুর্নীতির মালায় দুলছে ! অতএব দুর্নীতিকে সমূলে নিমূল না করতে পারলে কচুরি পানার মতই তা সমগ্র সমাজ জীবনে অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে!

সামাজিক কার্যাবলীর নিরিখে বলা যায়, সমাজ একটা নিয়ন্ত্রণ মূলক প্রতিষ্ঠান, সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। সমাজ নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণত দুটো ব্যবস্থা রয়েছে এক বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা, দুই অবিধিবদ্ধ ব্যবস্থা! বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা যেমন আইন কানুন আদালত ইত্যাদি! এই প্রক্রিয়ায় সমাজকে বেঁধে ফেলে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জারি করা হয়, আর অবিধিবদ্ধ ব্যবস্থা হল সমাজের মূল্যবোধের জাগরণ, অর্থাৎ সমাজে আদর্শ রীতিনীতির চর্চা বাড়ানো, যাতে সমাজবদ্ধ মানুষ দুর্নীতির পথে পা না বাড়ায়।

বর্তমানে সমাজ প্রচন্ডভাবে গতিশীল! বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি সমাজকে প্রচন্ড ভাবে গতিশীল করে তুলেছে। গতিশীল সমাজ জীবন যেমন প্রগতির লক্ষণ, তেমনি দুর্নীতির আগমন কে সূচিত করে। বর্তমানে গতিশীল সমাজ মানুষকে প্রচন্ডভাবে লোভী করে তুলেছে, বস্তুগত সংস্কৃতি মানুষকে প্রচন্ড ভাবে আকর্ষণ করছে, ফলে আদর্শ ন্যায় নীতি মূল্যবোধ প্রভৃতি  অবস্তুগত সংস্কৃতি দ্রুতহারে পিছিয়ে পড়ছে ! যার কারণে সমাজ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে!

তাহলে কি সমাজ থেকে দুর্নীতিকে হাটানো যাবে না? অবশ্যই যাবে! সমাজ থেকে দুর্নীতি হ্রাস করতে বা হটাতে‌ থানা পুলিশ আইন আদালত প্রভৃতি বিধিবদ্ধ ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করতে হবে, দুর্নীতিগ্রস্তদের যাতে উপযুক্ত সাজা হয় সেদিকে নজর দিতে হবে, সমাজ সংগঠনকে জাগাতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্তদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। সমাজের ন্যায় নীতি মূল্যবোধ আদর্শ প্রভৃতি অবিধিবদ্ধ ব্যবস্থার চর্চা বাড়াতে হবে , সর্বোপরি দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটা স্থায়ী সুঠাম ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, তবেই সমাজ থেকে দুর্নীতিকে হটানো যাবে ।

পরিচিতি::বারিদ বরন গুপ্ত, মন্তেশ্বর পূর্ব বর্ধমান, কবি, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ,গবেষণামূলক লেখালেখিতে যুক্ত আছেন!
=============
 




Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.