Click the image to explore all Offers

অণুগল্প ।। আনন্দাশ্রম ।। অশোক দাশ

 

আনন্দাশ্রম

অশোক দাশ


দেখতে দেখতে কেটে গেল পাঁচ -পাঁচটা বছর। আজকের দিনে শুরু হয়েছিল আনন্দাশ্রমের পথ চলা ।সেদিন ছিল পৌষ মাসের চার তারিখ। শীতের রাত ,দশটায় সব শুনশান। নিস্তব্ধ জনমানব শূন্য রাস্তাঘাট ।অফিসের কাজ সেরে ফিরতে বড্ডো দেরি হয়ে গেছে। হেমন্ত হন্তদন্ত হয়ে হাঁটতে থাকে। বাস স্ট্যান্ড থেকে তাদের বাড়ি মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ। হঠাৎ ভুত দেখার মত চমকে ওঠে। রাস্তার পাশে ওই গাছ তলায় কি যেন বসে আছে? ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ঠিক বুঝতে পারে না। ভূতের ভয় তার কস্মিন কালে ছিল না। তাই সাহসে ভর করে হেমন্ত এগিয়ে যায় এবং স্তম্ভিত হয়ে দেখে একজন বয়স্ক মহিলা বসে বসে কাঁদছে আর ঠান্ডায় থরথর করে কাঁপছে।
      হেমন্ত আগিয়ে যায় ঐ মহিলার কাছে, বলে কে আপনি? কোথায় আপনার বাড়ি? এত রাতে এখানে কেন ?কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। মহিলা শুধু অঝর নয়নে কেঁদে চলেছে। হেমন্ত মহিলাকে  বুঝতে পারে যে, ইনি কোন সম্ভ্রান্ত পরিবারের মহিলা যেকোন কারণে বিপদে পড়েছেন ।তাই হেমন্ত মহিলাকে বলে, মাসীমা আপনি আমার সঙ্গে চলুন এত রাতে কনকনে ঠান্ডায় ফাঁকা জায়গায় বসে থাকবেন না। মহিলা ইতস্তত করতে থাকে। হেমন্ত প্রায় জোর করে মহিলাকে হাত ধরে টেনে তোলে, মহিলা মাতৃ স্নেহে হেমন্তের বুকে আছড়ে পড়ে। অশ্রুধারায় ভিজে যায় হেমন্তের বুক। এই অনাস্বাদিত  মাতৃস্নেহের সোহাগে হেমন্তর চোখের জল বাঁধ মানে না। দুই নদীর অশ্রুধারা মিলেমিশে একাকার হয়ে, একই পথে বহে চলে।
    সেদিন হেমন্তর মনে উঁকি দিয়েছিল, ছেলেবেলায় মায়ের মৃত্যু শয্যায়  মায়ের শেষ ইচ্ছার কথা। মা সেদিন হেমন্তর হাত ধরে বলেছিল ,তুই বড় হয়ে মানুষের মতো মানুষ হোস। যাদের দেখার কেউ নেই, যারা অবাঞ্ছিত, যারা অনাদৃত লাঞ্ছিত, তাদের দেখার ব্যবস্থা করিস।
     কাজের চাপে মায়ের ইচ্ছা পূরণ চাপা পড়েছিল। সেদিন রাতে মাসিমাকে পেয়ে, সেই ইচ্ছা পূরণ করার অদম্য বাসনা, তাকে আনন্দাশ্রম  গড়ার অনুপ্রেরণা যোগায়।
   আজ পাঁচ বছর পূর্ণ হল ।এখন এখানে শতাধিক বিভিন্ন বয়সের মা-বোনেদের হাসিখুশি নাচ গান কলকাকুলিতে ভরে থাকে প্রাঙ্গণ। তারা অতীতের দুঃখ কষ্ট ভুলে আনন্দে মেতে থাকে ।নিজেদের মতো করে বাঁচতে জানে। অপরকে বাঁচার রসদ যোগায়।
     সকলে মিলে আজ আনন্দ আশ্রমের পঞ্চম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সাজানো হয়েছে সারা বাড়ি প্রাঙ্গণ কেক কাটা হবে, সব আয়োজন সম্পন্ন অপেক্ষার প্রহর গুনছে কখন আসবে তাদের নয়নের মধ্যমণি হেমন্ত। সকলের ভালোবাসার আপনজন।
   অবশেষে হেমন্ত আসলো। সকলের জন্য একরাশ উপহার নিয়ে। সকলে আনন্দে অভিভূত আপ্লুত। এবার সেই শুভ মহেন্দ্রক্ষন ।শঙ্খ ধ্বনিতে মুখরিত। হেমন্ত কেক কাটছে। তার চোখে আনন্দাশ্রু । সমবেত কন্ঠে শুরু হল তাদেরই কথা শুনে সুরে সংগীত 'শুভ জন্মদিন শুভ জন্মদিন শুভ জন্মদিন,
             আনন্দাশ্রমের পালকে যুক্ত হল আর এক বছর দিন।
ভাল থাক পৃথিবীর যত সন্তান,
সুস্থ সুন্দর থাক তাদের জীবন।
সন্তান সুখে থাকুক মাতার  আসিষ অম্লান,
যুগে যুগে কালে কালে স্নেহের ফল্গুধারা
                                 জ্বলে  দীপ   অনির্বাণ।
লাঞ্ছিত বঞ্চিত সব হারা আশ্রয়,
আমাদের স্বপ্নের আনন্দাশ্রম ।
শুভ জন্মদিন শুভ জন্মদিন শুভ জন্মদিন।।
==================

 
অশোক দাশ
 ভোজান ,রসপুর ,হাওড়া ,পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।











Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.