ছোটগল্প ।। খোলা আকাশ ।। দীপক পাল
ছবিঋন- ইন্টারনেট।
খোলা আকাশ
দীপক পাল
চলন্ত বাসের পাদানিতে ডান পা টা রেখে বাসের হ্যান্ডেল ধরে এক লাফে উঠে পড়লাম। তারপর ঠেলেঠুলে ভেতরে ঢুকতেই একজন ভদ্রলোক ' ওরে বাপরে ' বলেই আমার দিকে তেড়ে এলো ' আরে মশাই আপনার নিজের পায়ের প্রতি কি কোনো ভরসা নেই? আমার পা টাকে কি এজমালি পেয়েছেন নাকি?' ভীষণ লজ্জা পেলাম। বললাম, ' আমি ভীষণ লজ্জিত, আসলে এই বাসটা মিস হলে আমার ভীষণ ক্ষতি হয়ে যেত। তাই তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে অসাবধানে আপনার পা টাকে মাড়িয়ে ফেলেছি, মাফ করবেন '। ভদ্রলোক যেনো একটু নরম হলেন। বললেন,' ঠিক আছে ঠিক আছে, যান এখন ভেতরে যান, আমি পরের স্টপেজে নামবো '।
আমিও আরও ভেতরে গিয়ে ড্রাইভারের পেছনে একটা রড ধরে দাঁড়ালাম। বাসটা বেশ ভীড়। ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে কন্ডাক্টরের কাছে দম দম স্টেশনের টিকিট চেয়ে বললাম, ' স্টপেজটা আসলে আমাকে একটু নামিয়ে দেবেন ভাই '। হঠাৎ চোখে পড়লো সিলড টেন্ডার খামের একটা দিক ছিঁড়ে গেছে কিছুটা। চিন্তায় পরে গেলাম। কারণ সিলড্ টেন্ডার ছেঁড়া থাকলে একসেপ্ট করা হয় না, আর সরকারি অফিস যদি হয় তাহলে তো কথাই নেই। এদিকে আজকেই জমা নেবার শেষ তারিখ বেলা দুটোর মধ্যে। টেন্ডার ওপেন করার সময় বেলা তিনটেয়। কি যে করি একবার ভাবলাম। তারপর ঠিক করলাম একবার যখন বেরিয়ে পড়েছি তবে আর পিছনে ফিরবো না, যা থাকে কপালে দেখাই যাক।
হঠাৎ সম্বিত ফেরে কন্ডাক্টরের চিৎকারে। ' আউর কই হ্যায় স্টেশন উতারনেকো '। লাফ দিয়ে উঠলাম আমি আর আমাকে দেখে কন্ডাক্টর বললো, ' আপনেহিত বলা দম দম স্টেশন উৎরেঙ্গে, আইয়ে উতারিয়ে।' ঝটপট নামলাম বাস থেকে। রাস্তায় সবজির বাজার কিছু কিছু তখনো চলছে। প্রায় ছুটতে ছুটতে টিকিট কাউন্টারে গিয়ে শুনলাম যে এইমাত্র কল্যাণী সীমান্ত লোকাল বেরিয়ে গেছে স্টেশন ছেড়ে। বুঝলাম আজকের দিনটা আমার নয়। কিছুই ঠিক ঠাক হচ্ছে না। কল্যাণীর অফিসে পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। আমি যখন পৌঁছব তখন দেখবো সব শেষ হয়ে গেছে। পার্টনারকে সবটা ফোন করে জানালাম। তারও ইচ্ছে আমার কল্যানীতে যাওয়ার। অতএব চলো মন নিজ কাজে। গিয়ে দেখো না কি হয়। মিনিট পনেরো পরে একটা ট্রেন এলো। বেশ ভীড়। উঠে পড়লাম। কল্যানী স্টেশন থেকে বাসে করে যখন নির্দিষ্ট অফিসে পৌঁছলাম তখন সাড়ে তিনটা বেজে গেছে। গিয়ে শুনলাম তিনটার সময় টেন্ডার বাক্স থেকে টেন্ডার গুলো ওপরে নিয়ে গেছে। কয়েক লাফে ওপরে উঠে গেলাম। একজনকে টেন্ডার ওপেনের কথা জিজ্ঞেস করতে সে একটা ঘর দেখিয়ে দিল। হুড়মুড় করে ঢুকে গেলাম সেই ঘরে। ঘরটা বেশ বড়ো। একটা টেবিলে Ex.
Engineer চেয়ারে বসে টেন্ডার খামগুলো দেখে দেখে রেজিষ্টারে এন্ট্রি করছে। সামনে কয়েকটা বেঞ্চ পাতা। ছয়জন প্রতিনিধি তিনটে বেঞ্চে কাগজ কলম নিয়ে বসে আছে। আমি ' স্যার ' বলতেই Ex. Engineer আমার মুখের দিকে তাকাতেই আমি টেন্ডার খামটা ওনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম, ' খুঁজে পেতে একটু দেরি হয়ে গেল স্যার '। উনি অবাক হয়ে আমার দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে হাত বাড়িয়ে খামটা নিয়ে রেজিষ্টারে এন্ট্রি করতে লাগলেন। মনে হলো এটাই শেষ খাম। কারণ এন্ট্রি করেই প্রথমেই খামটা ছিঁড়ে আমাকে বসতে বললেন। আমিও একটা বেঞ্চে কাগজ কলম নিয়ে বসলাম। টেন্ডার দেরিতে ওপেন হওয়ার জন্য ভগবানকে মনে মনে প্রণাম জানালাম। Ex. Engineer এর প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানালাম মনে মনে।
অফিস থেকে যখন বেরোলাম তখন খুব হালকা মনে হলো নিজেকে। বুক ভরে চৈত্রের দখিন হাওয়া গ্রহণ করলাম। খোলা আকাশের দিকে চেয়ে থাকলাম খানিক। ঘন নীল আকাশ, দখিন হাওয়া, কোথাও একটা কোকিল ডেকে চলেছে একটানা।মনটা একদম ভালো হয়ে গেলো। আজকে আর অফিসে ফিরে যেতে ইচ্ছে করলো না। সামনে একটা পার্ক নাম পিকনিক পার্ক। এখানে কি আগে কোনো পিকনিক স্পট ছিল? এখনো কি আছে? কি জানি। কয়েকজন বাচ্চা ছেলে মেয়ে চেঁচামেচি করে খেলছে। সঙ্গে কয়েক জন মহিলা গার্জেনও আছে। হাঁটার গতিটা একটু কমিয়ে দিলাম। ভাবলাম কোন দিকে যাব।ট্রেনের টাইম তো জানিনা কখন আছে। ভাবতে ভাবতেই দেখি একটা বাস দ্রুত এদিকেই আসছে। দ্রুত রাস্তাটা ক্রস করে গেলাম। কারণ যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে বাসটা এদিকেই ঘুরবে স্টেশনে যাবার জন্য। স্ট্যান্ডে কয়েকজন লোক দাঁড়িয়েও আছে দেখছি। উল্টো দিকে বাসটা দাঁড়াতেই লোকজন নামতে শুরু করল এবং বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। একজন মহিলা রাস্তা ক্রস করে এদিকে আসতেই কেমন চেনা চেনা লাগলো। কাছাকাছি আসতেই চিনতে পারলাম আমার এককালের কলেজের সহপাঠিনী শুক্লাকে। সেও কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, ' সৌভিক না '? আমি হেসে বললাম, ' আপনিতো শুক্লা তাই না '? আমরা দুজনই দুজনকে হঠাৎ এই জায়গায় দেখে অবাক হলাম খুব। খুশিও হলাম কি একটু। বোধহয়। শুক্লার হাসিও কি সেজন্যই। কি জানি।
এই সেই শুক্লা যাকে ক্লাসে একটু দেখার জন্য কোনো দিন কলেজ কামাই করিনি। কিন্তু ও কোনোদিন সেটা জানতে পারেনি বা আমি তাকে বুঝতে দিইনি একেবারে। শুক্লা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে প্রফেসরদের লেকচার শুনত এবং তা নোট করতো। দু চারজন বন্ধু ছাড়া কারও সাথে মিশত না। কলেজে এসে সোজা ক্লাসগুলো অ্যাটেন্ড করতো তারপর সোজা কলেজ থেকে বেরিয়ে যেতো। তারপর বাসে উঠে চলে যেত। ক্যান্টিনেও বড় একটা যেতে দেখিনি। যদিও দুএকজন বান্ধবীর সাথে যেত কিন্তু বেশিক্ষণ বসত না। উঠে পড়ত। কলেজের এত হৈ চৈ, আড্ডা, চেচামিচি, ইউনিয়ন ইত্যাদি যেনো কিছুই ওকে স্পর্শ করতে পারতো না। আমিও এসবে খুব একটা জরাতাম না। তবে কলেজের পত্রিকায় বা দেয়াল পত্রিকায় একটু লেখা টেখা বেরোত। ব্যস। শুক্লাকে আমার বিশেষ ভালো লাগলেও ওর এই অতি গাম্ভীর্যের জন্য কোনো কথা বলার চেষ্টা করিনি বা সাহস করতে পারিনি কোনোদিন। অথচ আজকে আমাকে দেখে নিজেই এগিয়ে এসে আমি সৌভিক কিনা জানতে চাইলো। ওর এই বদলটা কি সময়কালের জন্য?
- আপনি কি এখানেই থাকেন? কই এর আগে কোনো দিন তো দেখা হয়নি আপনার সাথে?
- না আমি এখানে থাকিনা। নিজের কাজেই একটা সরকারি অফিসে গিয়েছিলাম। কাজ মিটেছে এইবার বাড়ি ফিরবো। আমি থাকি কলকাতার ইন্টালিতে।
- আপনি কোথায় চাকরি করেন?
- আমি কোথাও চাকরি করিনা। দুই বন্ধু মিলে ছোটখাটো একটা ব্যবসা চালাই ইন্টলিতে। ওতেই আমার ও মায়ের কোনরকমে পেট চলে যায়।
- কেন আপনার বাবা বা আর কেউ?
- বাবা মারা গেছেন অনেকদিন। দিদির বিয়ে হয়ে গেছে দাদা বউ বাচ্চা নিয়ে আলাদা থাকে আর আমি এখনও বিয়ে করিনি।
- জানেন আমারও বাবা মারা গেছেন গতবছর। আমি এখানে একটা উচচমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজী টিচার। এখানে একটা বাড়িতে ভাড়ায় আছি। বাড়ির মালিক থাকেন কলকাতায়। তিনি হাই কোর্টের একজন জাজ। ওনার ছেলে মেয়েরা থাকে বাইরে। তাই তিনি বোধহয় এই বাড়িটা বিক্রি করে দেবেন। আমি বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান। বাবা মারা যাবার পর মাকে আমি আমার কাছে এনে রেখেছি। আমাদের বাড়ি খড়দহ।
এই সেই শুক্লা যে কিনা একসময় নিজের চারপাশ একটা বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখতো। আজ সে নিজেই কতো কথা আমায় বলে গেলো অতি সহজ ভঙ্গিতে।
- কি হলো? চুপ করে গেলেন যে? চলুন আমার সাথে আমার বাড়িতে। চা খাওয়াবো। আপনাকে দেখে মা খুব খুশি হবেন। মা এতক্ষণ ঘর বার করছে নিশ্চয়ই। যতক্ষণ না বাড়ি ফিরবো সেটা মা করতেই থাকবে।
- চলুন তাহলে। আজ না হয় অফিসে আর নাই গেলাম।
আমি শুক্লার পেছন নিলাম। মিনিট দুয়েক হাঁটতে শুক্লার বাড়ি পৌঁছে গেলাম। দোতলা বাড়িটা খুব সুন্দর করে বানিয়েছেন জজ সাহেব। একতলার বারান্দায় এক মাঝ বয়সী মহিলাকে গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শুক্লা বললো, ' দেখলেন তো মা দাঁড়িয়ে আছে ঠিক। কি বলবো আর '। কাছে যেতেই গেটের দরজাটা খুললেন তিনি। আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুক্লাকে জিজ্ঞেস করলেন, ' কে ইনি '? শুক্লা বললো,' আমার খুব পরিচিত মা ' , তারপর আমাকে ডেকে বললো, ' কি হলো, আসুন '। আমি বারান্দায় উঠে শুক্লার মাকে প্রণাম করে বললাম, ' আমার নাম সৌভিক মাসিমা। এখানে একটা অফিসিয়াল কাজে এসেছিলাম। হঠাৎ বহুদিন পরে ওর সাথে দেখা হয়ে গেলো '। এবার শুক্লা বললো, ' জান মা, আমি আর সৌভিক একই কলেজে একই ক্লাসে পড়তাম। কিন্তু শুনলে তুমি অবাক হবে যে আজই আর এক্ষুনি ওর সাথে প্রথম আলাপ হলো '।
শুক্লার মা বোধহয় কথাটাকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারলো না, বললো,'যাহ তাই কখনো হয় নাকি। এতো দুচার দিনের ব্যাপার না, একসাথে তোরা পড়েছিস তিন বছর '। তাহলে?'
- মা তুমি জান না উনি যা গম্ভীর ছিলেন কি বলবো। একটু আধটু লেখা লেখি করতেন আর কলেজের ম্যাগাজিনে ও দেয়াল পত্রিকায় ওনার লেখা খুব বেরতও। ওই জন্য ওনার হয়তো একটু গর্ব ছিল। আর বন্ধুরাও তার ছিল সব লেখকের দল। এছাড়া আর কারও সাথে মিশত না বা পাত্তা দিত না। তাহলে কি করে আলাপ হবে বলতো।'
একি বললো শুক্লা। আমি ওর সম্মন্ধে যা ভাবতাম, সেটা কি আমার সম্মন্ধে ও ও ভাবত। সেটা কি সত্যি না মন গড়া। নাকি কথার ছলে মাকে এ কথা বললো। তাই কি কখনো সত্যি হয়। ঠিক বোধগম্য হলো না। শুক্লা বলে,
- আপনি একটু বসুন আমি একটু চেঞ্জ করে আসি। বলে পর্দা সরিয়ে বেরিয়ে গেলো।
মাসিমা বললেন, ' তুমি বাবা কোথায় থাকো কি কর? ঘরে আর কে কে আছে '?
একসাথে এতগুলো প্রশ্নের উত্তর দিলাম। শুক্লা কে যা বলেছিলাম সেগুলোই বলে গেলাম। শুনে। মাসিমা বললেন, ' তুমি বাবা একটু বসো আমি তোমাদের জন্য চা বানিয়ে আনছি কেমন '। মাসিমা বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।আমি জানালার ধারে গিয়ে দাঁড়ালাম। জানালার বাইরে উন্মুক্ত আকাশ দেখা যায়। ঘন নীল আর বহুদূর পর্যন্ত দেখা যায়। কেমন শান্ত পরিবেশ। কোকিল ডেকে চলেছে আবার কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে। পর্দা সরিয়ে শুক্লা ঘরে ঢুকলো। এবার ওকে অন্য রকম দেখাচ্ছে। মাথার চুল খুলে দিয়েছে। প্রসাধনের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে সারা ঘরে। বয়স কম হলেও একটা হালকা রঙের তাঁতের সারিতে ওকে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে। বললো,
- একি আপনি এখনো দাঁড়িয়ে আছেন। বসুন।
- এই বেশ জানলা দিয়ে খোলা আকাশ দেখছিলাম। এবার চা খেয়ে পালাবো। বহুদূর যেতে হবে।
- মা এখন খুব যত্ন করে আপনার জন্য লুচি ভাজছে।
আমাকে বলেছে ছেলেটা অনেকক্ষণ আগে ঘর থেকে বেরিয়েছে আবার যেতেও অনেকক্ষণ লাগবে, শুধু চা খাওয়ালেই কি হয়। তুই যা ও ঘরে ছেলেটা একা বসে আছে। মুখটা শুকিয়ে গেছে, ক্ষিদে পেয়েছে নিশ্চয়। তবেই বুঝলেন তো চট করে আপনার আর যাওয়া হচ্ছে না।
- আচ্ছা ঠিক আছে। এমনিতেই আমার ফিরতে একটু রাত হয়, আজ না হয় আর একটু রাত হবে। আমার মাও আমার জন্য খুব চিন্তা করে যতক্ষণ না ঘরে ফিরি। যদি বলি কেন এত চিন্তা করো, আমার কাজটাইত এরকম। বলে তুই কি বুঝবি আমার জ্বালা।
- আপনি দেখছি একটুও পাল্টান নি বলুন।
- পাল্টাই নি একটুও, তাই কখনো হয়?
- হয় হয় আপনার হয়। জানেন কলেজে আমার একটিমাত্র ছেলেকে ভালো লাগতো আর সেটা হলো আপনি। কিন্তু আপনি সেটা কোনদিন জানতেই পারলেন না। কখনো চোখাচোখি হলেই আপনি চোখ সরিয়ে নিতেন। কেন মশাই আমি কি আপনাকে বশ করে ফেলতাম? অবশ্য আপনার তরফ থেকে আপনি ঠিকই করতেন। কারণ লেখক বন্ধুদের নিয়ে এবং আপনাদের লেখা নিয়ে আপনি এত ব্যস্ত থাকতেন তখন যে আপনার আশে পাশে কে কি ভেবে বসে আছে তা দেখতে আপনার বয়ে
গেছে। কি ঠিক তো?
ঠিক এই মুহূর্ত গুলোর জন্য আমি একদম প্রস্তুত ছিলাম না। ভেতরে ভেতরে দ্রবীভূত হতে লাগলাম। কি বলবো শুক্লাকে আমি? যেটার উল্টো দিকটা নিয়ে আমি ভেবেছিলাম সর্বদা। হায় রে এটা কি করেছি। আমি যে হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম একদম ভুল বুঝে। তবে কি আমি একাই অপরাধী? বললাম,
- জান শুক্লা, আমারও তোমাকে খুব ভালো লাগতো। তোমাকে একটু দেখব বলে আমি একদিনও কলেজ কামাই করতাম না। পরে দেখলাম তুমি তোমার চারপাশ একটা অদৃশ্য বেড়া দিয়ে দিয়েছ। দুচারজন তোমার বন্ধু ছাড়া আর কাউকে তুমি তোমার গণ্ডির মধ্যে প্রবেশ করতে দিতে না। শুধু ক্লাসের সময়টুকু ছাড়া তোমাকে আর কোথাও দেখা যেত না। তারপরেই আমি একদম নিজেকে গুটিয়ে নিলাম। চোখাচোখি হলেও ভাবতাম সেটা হঠাতি হয়ে গেছে। এর কোনো মানে নেই '।
- বুঝলাম, এটা আমাদের দুজনেরই ভুল বোঝাবুঝি। আমরা কি নতুন করে শুরু করতে পারি না?
- সেটাই তো করা উচিত শুক্লা। আজ বিকেলের আকাশ বড় নীল। কোথাও মেঘ নেই। আজ থেকে আমাদের পথ চলা শুরু হবে ওই খোলা আকাশের নিচে। শপথ নিলাম '।
মাসিমা দুহাতে দুটো গরম গরম লুচি আর কষা আলুর তরকারির প্লেট টেবিলে নামিয়ে রাখলো 'নাও এটুকু খেয়ে নাও বাবা। আমি চা নিয়ে আসি। ' আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, ' আপনারটাও নিয়ে আসুন মাসিমা আমরা একসঙ্গে বসে খাবো। চা পরে হবে। আপনারটা যদি না আনেন তবে আমি এ প্লেটে হাত দেবো না '।
- আচ্ছা আচ্ছা আনছি, পাগল ছেলে। বলে উনি বেরিয়ে গেলেন। পরক্ষনেই ফিরে আসলেন হাতে একটা প্লেট নিয়ে। বললেন, ' পারও বাবা তুমি। তুমি বুঝি তোমার মার সাথে একসাথে বসে খাও '?
- হ্যাঁ মাসিমা। আমি বাড়িতে না ফেরা পর্যন্ত মা চা ছাড়া কিছু খায় না। আমি তাই মার কাছে একসাথে বসে খাবার জন্য জেদ করি এবং খাইও একসাথে।
- বাহ্, খুব ভালো লাগলো। তোমাদের মত এমন মায়ের বাধ্য ছেলে হলে মায়েদের আর কি চিন্তা।
চা খেয়ে উঠে পড়লাম। ওরাও আমার পেছন পেছন বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। মাসিমা বললেন,
- আবার আসবেত বাবা?
- নিশ্চয় আসবো খুব শীঘ্রই।
- এবার তাহলে তোমার মাকে নিয়ে এসো। দুজনে একটু একসাথে গল্প করতে পারবো মন খুলে।
- আচ্ছা মাসিমা নেক্সট একটা ছুটির দিনে মাকে অবশ্যই নিয়ে আসবো। এখন তাহলে আসি।
- সাবধানে যেও। দুজনেই বললো একসাথে।
বেরিয়ে পড়লাম রাস্তায়। এখানে এখনো একটু একটু ঠাণ্ডা আছে। সন্ধ্যে হয়ে গেছে আগেই। একটা বাস আসতেই উঠে পড়লাম। আজ সারাদিনের ছবিটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো পর পর।
-------------------
তোর লেখা আমাকে অবাক এবং
উত্তরমুছুনখুব মুগ্ধ করেছে। এতো একদম সিনেমার চিত্রনাট্য লেখা। তোর হাতে এত সুন্দর অনুভূতিপূর্ণ ব্যতিক্রমী চিন্তন লুকিয়ে আছে। লেখার মধ্যে এজমালি শব্দ আমার বাড়তি পাওনা। আর ও লেখার জন্য অপেক্ষা করছি বন্ধু