ঋতম পাল
প্রায় ২ বছর আগে এরকমই এক ভ্যালেনটাইনস ডে তে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছিল শালিনী ও সম্রাটের ভালোবাসার। শুধু মাত্র তাদের মান- অভিমানের জন্য তারা সম্পর্কে ইতি টেনেছিল। তারা দুজন দুজনকে খুবই ভালোবাসতো, সম্রাট চেয়েছিল যে তারা কলেজ জীবনে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে একটা ছোট চাকরি করে বিয়ে করে সুখী থাকতে, কিন্তু শালিনীর স্বপ্নটা অনেকটা উচুঁতে ছিল, সে চেয়েছিল জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার পর ঘর বাঁধতে। এই কারণে তাদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া না হওয়ায় তারা সম্পর্কটাকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু পরে সম্রাট শালিনীর স্বপ্নপূরণের প্রতি ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষাটা বুঝতে পারে, সে নিজেও প্রতিজ্ঞা করে যে সে নিজেও জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে।
এভাবে প্রায় ২ বছর সম্রাট- শালিনীর কোনো যোগাযোগ থাকে না, তাদের ফোনের কনট্যাক্ট লিস্টে দুজনের নাম্বার থাকলেও কেউ কাউকে কল বা ম্যাসেজ করত না, তারা দুজনেই নিজেদের জেদ, স্মৃতিটাকে আঁকড়ে ধরে বেচেঁ ছিল।
এরপরে হঠাৎই একদিন শালিনীর ফোনে একটা বড়ো অফিস থেকে কাজ এর অফার আসে, রীতিমতো শালিনী সেই অফিসে গেলো, waiting room এ সে অপেক্ষা করছে কখন তাকে ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকবে,তবে এবারে অপেক্ষার অবসান ঘটলো, ইন্টারভিউ রুম থেকে তাকে ডাকা হলো।
শালিনী ভেতরে গেলে দেখে যে অফিসের মালিক উল্টো দিকে মুখ করে বসে আছে, এরপর যখন অফিস এর মালিক উঠে দাড়ালো তখনই শালিনী অবাক হয়ে গেলো........
কারণ সেই অফিস এর মালিক আর কেউ না তার ই ভালোবাসার মানুষ সম্রাট। সেদিনের সেই সম্রাট এখন "এস-লাহিড়ী-কোম্পানি" র মালিক। কিছু সময়ের জন্য শালিনী থমকে গেছিলো, প্রথমে সে ভাবছিলো এটা স্বপ্ন নাকি সত্যি, এরপর যখন সম্রাট তাকে বললো- "ওয়েলকাম ম্যাডাম", তখন শালিনীর দুচোখ বেয়ে জল পরছে, এ কান্না আনন্দের, খুশির, শালিনী তাকে বললো।
তারপর শালিনী সম্রাটকে বলল যে "সেদিনের সেই ছেড়ে যাওয়া, লক্ষ্য পূরণের জেদ আমাদের এই মিষ্টি ভালোবাসাকে দ্বিগুণ করে তুলেছে", এছাড়াও শালিনী বলল যে তার বাবা চায়নি কোনো সামান্য গ্র্যাজুয়েট ছেলের হাতে তার মেয়েকে তুলে দিতে, তাই শালিনী চেয়েছিল যে তার ভালোবাসার মানুষটাকে একদম সফলতার চূড়ায় দেখতে।
এছাড়াও শালিনী বলল যে সে খুব খুশি হয়েছে, সম্রাট এতক্ষণ ধরে শালিনীর আনন্দ উপভোগ করছিল এবং তারপরে একটা কথাই বলল যে---
---" Will you marry me? " একথা শুনে শালিনী আনন্দে সম্রাটকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছিল।
এরপরে শালিনী তার বাবার কাছে সম্রাটকে নিয়ে যায়, সম্রাটের এতটা উন্নতি প্রথমদিকে শালিনীর বাবাকেও অবাক করিয়ে দিয়েছিল, এরপরে শালিনীর বাবা সম্রাটের সাফল্য লাভের কাহিনীর কথা শুনে শালিনীকে সম্রাটের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হয়।
এর কিছু দিন পরে ভ্যালেনটাইনস ডে তে আবার তারা সেই জায়গাতে গেল, যেখানে তাদের প্রথম ভালোবাসার সমাপ্তি ঘটেছিল। সম্রাট আগে থেকেই সেই জায়গায় একটা হোটেল রুম বুকিং করে রেখেছিল, এরপর তারা হোটেল এর বাগানে গিয়ে হোটেলে আগে থেকে অর্ডার করে রাখা কেকটা কাটল, এরপরে সম্রাট শালিনীকে ভ্যালেনটাইনস ডে তে আংটি পরিয়ে প্রেম নিবেদন করলো এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে বলল যে --
"তারা আর কখনোই কোনো পরিস্থিতিতে একে অপরকে ছেড়ে যাবে না, আর সেই দিনের সেই ছেড়ে যাওয়া তাদেরকে আজ লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে দিয়েছে, আর ২বছর পর তাদের এই সম্পর্ক তাদের ভালোবাসা কে দ্বিগুণ এবং আরো মিষ্টি করে তুলেছে", ওরা দুজনে এখন সেটা বুঝতে পেরেছে।
অবশেষে তারা দুজনেই একসঙ্গে তাদের ভালোবাসার ট্যাগলাইন হিসাবে তাদেরই বানানো একটা কথা বলতে থাকলো যে-
"মন যদি চায়,
পুরোনো ভালোবাসার টানে;
এভাবেও ফিরে আসা যায়..........। "
============================
নাম:- ঋতম পাল
ঠিকানা:- ৫/২/H/১, কাশীপুর প্রাণনাথ চৌধুরী লেন
কলকাতা:- ৭০০০০২