অ্যাসিড
সোনালী ব্যানার্জ্জী
হসপিটালে জ্ঞান ফিরতেই রিমা অনুভব করলো চারিদিকে প্রেস আর পুলিশের ভিড় । শরীরের আর মনের যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে আবার সে জ্ঞান হারায়। রণ স্কুলে দেখা করতে আসে রিমার সাথে।
রণ - "তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিতে পারো না। তোমাকে আমি প্রপোজ করেছি।কেন বার বার আমাকে ফিরিয়ে দাও!"
রিমা - "আমি তোমাকে কতবার বারন করেছি আমার সাথে স্কুলে দেখা করতে আসবে না! আমাদের মত গরীবের এইসব ভালোবাসা মানায় না! তুমি এখান থেকে যাও!"
রণ তাও সবসময় জ্বালাতন করতে থাকে। যতো রিমা ওকে না বলে রণের জেদ যেনো ততো বেড়ে যায়।
একদিন রাতে টিউশন করে বাড়ি ফিরছিল রিমা।
রণ রাতের অন্ধকারে রিমাকে একটা গলির মধ্যে হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে।
রণ - "আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না রিমা। আই লাভ ইউ রিমা!" বলে রিমাকে জড়িয়ে ধরে।
রিমা ওর সাথে পেরে ওঠে না। ধস্তাধস্তিতে রিমার কাধের জামাটা কিছুটা ছিড়ে যায়।
রিমা রণের নিঃশ্বাস নিজের শরীরে অনুভব করে।
প্রাণপনে চিৎকার করে হাত জোড় করে বলে, "প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ রণ ,আমাকে ছেড়ে দাও! আমার এতো বড় ক্ষতি করো না! '' কাঁদতে কাঁদতে হাত জড় করে রণের পায় লুটিয়ে পড়ে।
রণ রিমার চুলের মুঠি ধরে বলে,"আমাকে ঘুরিয়ে দিয়ে ঠিক করনি সোনা!''
রিমার আরো মুখের কাছে মুখ এনে বলে,"অনেক অনুনয় ,বিনয় করেছি কিছু লাভ হয়নি ।আমি যাকে চাই তাকে পেয়েই থাকি!''
রিমার মুখটা এক হাত দিয়ে তুলে ধরে। "আহা রে কি সুন্দর চাঁদ পানা মুখ।এই জন্যই তো আমি ফিদা হয়ে গেছি ডার্লিং!''
রিমা কোনো রকমে রণের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে গালে ঠাস করে একটা চড় মারে পেটের নিচে একটা সজোরে লাথি মেরেই প্রাণপণে দৌড়।
পেছন ফিরে না তাকিয়েই ঊর্ধ্বশ্বাসে এক দৌড়ে ঘরে গেটের কাছে এসে শ্বাস নেয়।
এরপরের কাহিনী খুবই করুন! মা বাবা সব শুনে পুলিশ কেস করে। পুলিসের ভয় রণ বলে, "আমি আর কোনোদিনও রিমাকে জ্বালাতন করবো না! আই প্রমিস!" বলে হাতে পায়ে ধরে।
নিজের ভুল স্বীকার করাতে রিমার ও মায়া হয়। একটা ছেলের জীবন নষ্ট করতে চায় না সে। কেস ফিরিয়ে নেয়।
তিন বছর রণকে দেখতে পাওয়া যায়নি। রিমা লোক মুখে শোনে, 'তিন বছর রণ বাইরে গিয়ে পড়াশোনা শেষ করে ও নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে এক অন্য মানুষে রূপান্তরিত হয়েছে।'
রণ আবার ফিরেছে ঘরে। রিমা এই তিন বছরে আরো সুন্দর ও পরিনত হয়েছে। কলেজের লাস্ট ইয়ারের পরীক্ষা চলছে সেই নিয়ে খুবই ব্যস্ত।নিজে কিছু টিউশন ও পড়ায়। রণ আসে রিমার বাড়িতে।
রণ- "কাকু আগে যা ঘটেছে মনে রাখবেন না। আমাকে ক্ষমা করে দিন। বলে হাত জোড় করে রিমার বাবা অপরেশ বাবুর কাছে দাঁড়ায়।
বলে,"কাল আমার জন্মদিন তাই রিমাকে ইনভাইট করতে এসেছি!"
রিমার মা,বাবা রণকে দেখে অভিভূত হয়ে যান। এতো বিনয়ী ও ভদ্র ছেলে আগে কখনো দেখেনি।
ওর মিষ্ট ভাষা ও বিনয়ী ব্যবহারে মুগ্ধ হোন রিমার মা, বাবা।
অপরেশ বাবু- "নিশ্চয়ই বাবা রিমা যাবে।কালই তো ওর শেষ পরীক্ষা। সন্ধ্যেবেলায় পাঠিয়ে দেবো!"
রণের বাড়িতে রিমা তার কয়েকজন বন্ধুর সাথে আসে। চারিদিকে আলোর রোশনাই।
রিমা একটা কোল্ড ড্রিঙ্কস হাতে নিয়ে সুইমিং পুলের কাছে এসে বসে। ওখানে রণ এসে রিমার পাশে বসে।
দুজনে মিলে, পুরনো কথা, ভবিষ্যতের কথা বলতে থাকে কখন রাত গভীর হয় কেউ বুঝতে পারে না।
তার সাথে কোল্ড ড্রিঙ্কস ও স্নাক্স ও চলতে থাকে। বন্ধুরাও কে কোথায় চলে যায় কেউ জানে না। তাই ওদের গল্প চলতে থাকে, যতক্ষণ না রিমার শরীর মাটিতে এলিয়ে পড়ে।।
দুদিন পর---,
যখন রিমার জ্ঞান ফেরে অসহ্য যন্ত্রনা ছাড়া কিছুই মনে পড়ে না। ছয়মাস যমে মানুষে টানাটানি করে যখন একটু বোঝার মতো সেন্স আসে। রিমার বন্ধু এসে বলে, "সেইদিন অনেক রাতে তুই যখন ঘরে ফিরিস নি,কাকু আমার কাছে আসেন। পার্টিতেও তোকে না পেয়ে আমরা থানাতে ডায়েরি করি।
পরের দিন সকালে তোর বাড়ির সামনে আস্থাকুড়ে তোকে অজ্ঞান অবস্থায় পায় পুলিস। তোকে হসপিটালে ভর্তি করেন ও কাকুকে খবর দেন।
ধর্ষণ ও মুখটা এ্যাসিডে পোড়ানো হয়েছিলো বলে এটা পুলিস কেস হয়। আর তোর শরীরের ভেতর খুব কড়া ডোজের আফিম পেয়েছিলো। পুলিশ সূত্রে জানা যায়।
কিন্তু তোর বয়ান না পেলে কেউ কোনো স্টেপ নিতে পারছেন না। সেইদিন রাতে কি হয়েছিল সেটা তোর মুখেই সবাই শুনতে চায়।''
রিমার বন্ধু,পুলিস ও প্রেসের লোক উপস্থিত হলে, রিমা সব ঘটনা বলতে থাকে ।
-"মনে হয় কোল্ড ড্রিঙ্কসে কিছুতো মেশানো ছিলো! তাঁর জন্য আমি জ্ঞান হারাই সেই সুযোগে আমাকে -------!"
আর বলতে পারে না। গলায় যেনো কান্না গুলো দলা পাকিয়ে নামার চেষ্টা করে।
-"কিছু একটা কষ্ট---- ,
জ্বলন----, আ---আ-------- আর সহ্য করতে পারছি না! মুখটা থলথলে বস্তু------!
পুলিশ রণের বাড়িতে গেলে ,কেউ কোনো তথ্য দিতে পারে না রণের সম্পর্কে। কিছুদিন পর
মনের ও শরীরের যন্ত্রনা বহন করে হসপিটাল থেকে ঘরে ফিরে আসে রিমা ।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিজ্ঞা করে, "যতদিন না সমাজে রণের মতো মানুষরা যথাযথ শাস্তি পাচ্ছে সে মরবে না! বাঁচতে তাকে হবেই!অন্যায়ের শাস্তি তো পেতেই হবে।না হলে সমাজে মানুষ রুপী পশুদের বাসস্থান বাড়তে থাকবে! রাবনরা জিতে যাবে! মিথ্যের কাছে পরাজিত হবে সত্য! "
তাই নিজের মুখের পোড়া অংশে হাত বোলাতে বোলাতে বিড় বিড় করতে থাকে রিমা।।
*******সমাপ্ত*******
সোনালী ব্যানার্জ্জী।
ধানবাদ- ঝাড়খন্ড