Click the image to explore all Offers

অণুগল্প ।।কুয়াশা ।। অশোক দাশ


কুয়াশা

অশোক দাশ


তখন পর্ণা- র বয়স ছিল পনেরো। দশমশ্রেণীর ছাত্রী। এখন পঁচিশ। আজ দশ বছর জীবন যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত সৈনিকের মতো, তার বাবা-মার স্মৃতি আঁকড়ে পড়ে আছে। কুয়াশা দেখলেই তাকে আতঙ্ক তাড়া করে ফেরে। মাকড়সার জালে আটকে যেমন পোকামাকড় ছটফট করে, ঠিক তেমনভাবে পর্ণা এই দশ বছরেও কুয়াশার ধোঁয়াশা কাটিয়ে উঠতে পারেনা। এই সর্বনাশা কুয়াশায় তার জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে তার প্রিয়জনদের।
    সেদিনও ছিল এমনই কুয়াশা। ভোর ভোর হই চই করতে করতে গোটা পরিবার বেরিয়ে পড়েছিলাম ফ্যামিলি ট্রুরে। গন্তব্য ছিল দিঘা। সমুদ্র বারবার টানে, সমুদ্র স্নানের মজা, উত্তাল ঢেউয়ের ছন্দ কার না ভালো লাগে! অনাবিল সৌন্দর্যের হাতছানি হৃদয় মনকে পুলকিত করে তোলে। হাই রোড ধরে তাদের গাড়ি ছুটে চলেছে একশো কিলোমিটার গতিতে। আলতো কুয়াশা ক্রমশ গাঢ় রূপ ধারণ করছে। রাস্তা অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। গাড়ির আলো ভেদ করতে পারছে না। পিছনের সিট থেকে বাবার চিৎকার ড্রাইভার ভাই আস্তে গাড়ি চালান। মুহূর্তের মধ্যেই একটা বিকট আওয়াজ সবকিছু উলটপালট করে দিলো।লরির সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা।

   আজও পর্ণা-র মানসপটে ভেসে ওঠে সেদিনের ভয়াবহ মর্মন্তুদ দৃশ্য। বাবার থেঁতলানো মাথা, মামার রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত দেহ ,মায়ের সংজ্ঞাহীন শরীর। আর আর্ত ক্ষীণ স্বর বাঁচাও ......
আর কিছুই মনে পড়ে না। কিভাবে হসপিটালে এলাম কারা নিয়ে আসলো কিছুই জানিনা। তিনদিন পর আমার জ্ঞান ফিরেছিলো।পরে শুনলাম আমার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই ।মামার একটা পা বাদ গেছে। আমার একটা মেজর অপারেশন হয়েছে।
     আজও প্রত্যুষে জানালা খুলতেই পর্ণা দেখতে পায় ঘন জমাট কুয়াশা। একশো ফুট দূরের বস্তু পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। উদাস মনে চেয়ে আছে পর্ণা অনাগত ভবিষ্যতের দিকে। দূর থেকে মাইকে ভেসে আসছে 'যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে'-- সবকিছু কি ভুলে থাকা যায়! মনের অজান্তে পর্ণা-র চোখ থেকে ঝরে পড়ে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রুধারা।
=========================
অশোক দাশ
ভোজান, রসপুর, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.