হাসি
প্রতীক মিত্র
আলাদা করে কোনো কথা হয়নি ওদের।ওই দোকানে চা'টা ভালো বানায় বলেই বোধহয় ওরা ওখানে যেত।দু'জনের কাজের জায়গা আলাদা।ট্রান্সফারেবল।যেকোনো দিন অন্য কোথাও পোস্টিং হয়ে যেতে পারে।ফলে একে অন্যের দিকে চোখ গেলেও কেউই তার বেশি আর এগোয় নি।দুজনের মাথাতেই যে রোমান্টিকতার ভূত। তাদের নিজেদের বেলা প্রেম জিনিসটা যে এত সহজে হয়ে যেতে পারে সেটা তারা কল্পনাও করেনি।ছেলেটি চা পানেও পটু নয় ।মেয়েটি চা টুকটাক খেলেও তা বাড়িতে।কলিগদের পাল্লায় পরে এমন করে মাটির ভাঁড়ে…! না। গুণাক্ষরেও যেন কলিগদের কেউ না জানে।ছেলেটা ভাবে।মেয়েটা ভাবে কেরিয়্যারটা বোধ হয় গেল। অথচ আলাদা করে কোনো কথা হয়নি একে অন্যের মধ্যে।ছেলেটা লাজুক।মেয়েটা বুদ্ধিমতী।কেউই আর তার সীমানা টপকায় না। শেষমেশ দু'তরফের কলিগরাই কমবেশি ব্যাপারটা নিয়ে মজা শুরু করে কাকতলীয়ভাবে। তাতে ওরা আরো ঘাবড়ে যায়।কলিগদের খিল্লি ওড়ানোর আগে যদি বা ওরা ভাবছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি আর যাই হোক চায়ের দোকানে যাবে না,কলিগরা মজা শুরু করায় ওরা গোঁয়ার্তুমি করে ১৪তে ঠিক হাজিরা দেয়।মেয়েটির সাথে একটি নতুন আনকোরা ছেলে এবং ছেলেটির সাথে একটি নতুন আনকোরা মেয়ে থাকায় দুজনে নিশ্চিন্ত হয়।যাক! আর কেউ খিল্লি ওড়াবে না।ছেলেটি মেয়েটির দুঃসম্পর্কের ভাই ছিল, মেয়েটি ছেলেটির বউদি।নিজেদের অবশ্য মনের কোথাও যে একটু খারাপ লাগে না তা নয়, তবে সেটাকে লুকোনো সহজ।সেটুকু পরিণত মনন তাদের আছে বলেই তারা জানে।
তারপর বেশ ক'মাস পরে ছেলেটি যখন সেই বউদি আর বউদির বরের সাথে কলকাতায় ঘুরছে, মুখোমুখি হয় ওই মেয়েটির।মেয়েটির সাথে সেই ভাই আর ভাইএর বান্ধবীও ছিল।ছেলেটি মেয়েটির চোখাচুখি হয়। একে অন্যকে দেখে কি বোঝে বিশেষ বোঝা যায় না।তবে হাসে। সেই হাসিটা অবশ্য না ছেলেটির সাথে যারা ছিল কিম্বা মেয়েটির সাথে যারা ছিল তাদের চোখে পড়ে।পড়লে তাদের কৌতুহল থেকে কথা না হয় অন্যদিকে যেত। এদের অসম্পূর্ণ আখ্যানের খালি ক'টা পাতা ভরে উঠতো কিছু হাবি এবং কিছু জাবিতে।হয়না।এসব কিছুই।যেহেতু হাসি বিনিময় আর কারো চোখে পড়েনি।
================
প্রতীক মিত্র
কোন্নগর-712235, পশ্চিমবঙ্গ