Click the image to explore all Offers

গল্প ।। বরখাস্ত ।। সুতপা ব‍্যানার্জী (রায়)


 
 
বরখাস্ত

সুতপা ব‍্যানার্জী(রায়)


    নিমঝুরি গাঁয়ের ব‍্যস্ত হাটে সেদিন বাড়তি সতর্কতা। সবাই সবাইকে আঙুল তুলে দেখাচ্ছে-"ঐ যে ওপরে, ঐ দেখ ঝুলছে।" উর্দ্ধাঙ্গে কাপড় নেই,বটগাছ থেকে ঝুলছে একটা মানুষ, মাথাটাও শকুনিদের গ্রাসে গিয়ে প্রায় নেই। এ ওকে বলছে-"নামাবেক কে?" নীচের থেকে চেনাও যাচ্ছে না। কেউ বলছে বিপিন জ‍্যেঠু, কেউ বলছে এলাকার বাইরের লোক। কেউ চিৎকার করে বলছে-"আগে ছুঁয়ো নি কো,পুলিশ ডাক।" পুলিশে ছুঁলে আঠারো ঘা,এ কথা মর্মে মর্মে জানে বিলু বাগ্দী। তাই বন‍্যা,ভূমিকম্প,আগুন লাগা সবেতেই যে প্রাণের মায়া ছেড়ে আগে ছোটে সেও জুলজুলে চোখে দেখছে সব। পুলিশ আসতে ঐ অর্দ্ধেক শরীরটাকে নীচে নামিয়ে নিয়ে এল। জামাকাপড় দেখে কেউ চিনতে পারল না। বাজারের ভুলু কুকুরটা একবার বাজার,একবার গাছতলা ছুটতে থাকল। গ্রামের লোক ত্রস্ত হল এই ভেবে যে যদি দলাদলির কারণে খুন হয়ে থাকে তাহলে অন‍্য দলের লোক এলাকায় দাপিয়ে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেবে। আর পুলিশ এসে জোয়ান মদ্দদের জেলে ভরবে। এরপর কতদিন যে এলাকা উত্তপ্ত আর অশান্ত থাকবে। রোজগার বন্ধ,ছেলেমেয়েদের স্কুল বন্ধ হয়ে শুধু পেটের খিদেটা জেগে থাকবে। ওদের কথা সত‍্যি করে রাতেই পুলিশের ধরপাকড় শুরু হল
    কারণ লাশটা ছিল কোন এক কেষ্টবিষ্টু লোকের। শহরের কাগজে বিস্তর লেখালেখি হচ্ছে। বাইরের লোক বা সাংবাদিক এলে যা বলতে হবে চোঙা ফুঁকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ তা বলে দিয়ে গেছে। বাজারের অনেক দোকানীই ভয়ে দোকান খুলল না। গেরস্থও খিল দিয়ে রইল ঘরে। এ তো আর সাধারণ ঘরের কথা নয়,লাশ হোক আর যাই হোক বড় মানুষের লাশ। তাই সাড়া জাগানো প্রতিক্রিয়া তো হবেই। কলকাতার থেকে বিখ‍্যাত গোয়েন্দা অলকেশ এলাকায় এসে আছেন। থানাতে বসে অনেককেই তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। কেউ না এলে সোজা তার বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছেন। এলাকার বুকনা বাউড়ি একদিন তলব পেয়ে সোজা থানায় হাজির হয়ে বলল-"এজ্ঞে আমায় স্মরণ করার কারণ বুঝলাম না,আমি সিঁধেল চোর। আদার ব‍্যাপারী,খুনে আমার কী কাম।" 
    অলকেশ-"তোমার সূত্রে আমরা অপরাধ ও অপরাধীর কেন্দ্রে পৌঁছোব। তোমার সঙ্গে একটা ট্র‍্যাকিং আইডি থাকবে‌। তোমার চারপাশের সব আওয়াজ ওটার মাধ্যমে আমাদের কাছে এসে যাবে। তোমাকে আমরা আমাদের ইনফর্মার করে নিলাম।"
    "জীবন নিয়ে টানাটানি হবে না তো স‍্যার।" কাতর হয়ে পড়ল বুকনা। অলকেশ ওকে বুঝিয়ে ওনার প্রস্তাবে রাজী করিয়েছিল শেষবেশ। বুকনা একদিন সত‍্যিই কাজে এলো। হাত সাফাইয়ের কাজে বাজারে ঘুরছিল, সেখানে দুজন লোকের সন্দেহজনক কথা র‍্যাডার মারফত গিয়ে পৌঁছল অলকেশদের কানে। খুন করে পাওয়ার টাকা নিয়ে অসন্তোষ জনিত কথাবার্তা। এ তো একই দলের বিবাদমান দুই গোষ্ঠীর রেষারেষির গল্প। যাকে এর মধ‍্যেই ব‍্যবসার ভাগাভাগির কারণে কোন্দলের রঙ চড়ানো হয়েছে।
    লোক দুটোকে অনুসরণ করে চেপে ধরতেই বেরিয়ে এল আসল তথ‍্য। এ তো রাজনৈতিক শিষ‍্যের ক্ষমতার জন্য গুরুবধের কাহিনী যা আরুণির উপাখ্যানকে চ‍্যালেঞ্জ জানায়। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান উমাশঙ্কর নিজের পথের কাঁটা সরাতে প্রভাবশালী তমালবাবুকে লোক দিয়ে খুন করিয়ে খণ্ডবিখণ্ড করে ওভাবে গাছে ঝুলিয়ে প্রমাণ লোপ করতে চেয়েছিল। প্রকৃত অপরাধীকে জেলে পুরতে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল অলোকেশদের। সমর্থকদের ভুল বুঝিয়ে রাজনৈতিক প্রতিরোধ, মিছিল করিয়েও বিশেষ সুবিধে করতে পারেনি উমাশঙ্কর। আপাতত ক্ষমতার চেয়ারটাও আর দখলে নেই।
================

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.