স্মৃতিকথা ।। মায়ার পৃথিবী ।। শংকর ব্রহ্ম
ছবিঋণ- ইন্টারনেট।
মায়ার পৃথিবী
শংকর ব্রহ্ম
নতুন বছরে, আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে চমকে উঠলাম। এ কী চেহারা হয়েছে আমার। চোখ দুটো কোটরে বসে গেছে। চোয়ালের হনু বেরিয়ে এসেছে। চামড়া হয়ে উঠেছে খসখসে। মৃত্যুর ছোঁয়া লেগেছে যেন। শরীরটা ক'দিন ধরেই খারাপ যাচ্ছে। তবে এতটা খারাপ হয়েছে বুঝতে পারিনি। দু'হাজার তেইশ সাল তবে আর কাটবে না আমার?
মায়ার এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে এবার, এ কথা ভাবতেই মনটা হু হু করে উঠল। খারাপ হয়ে গেল খুব। একান্ত মনমরা হয়ে পড়লাম।
কিন্তু অনামিকা ! উনিশ-শো ঊন-নব্বুয়ে যার সাথে গাঁটছড়া বেঁধেছিলাম আমি। কত ঝগড়া অশান্তির পরও এতদিন একসঙ্গে কেটেছে আমাদের।
আমার অণু পাগলী, আমি মরলে তার যে কি হবে, ভাবি আমি? আমায় খুব ভালবাসে সে, আমায় ছাড়া আর কিছু জানে না। খুব কাঁদবে নিশ্চয়ই। হয়তো কাঁদতে কাঁদতে চোখ লাল করে ফুলিয়ে ফেলবে।
আর কেকা? যার সঙ্গে পরিচয় তারও কয়েক বছর আগে। আমাদের বাড়ির একটা বাড়ির পরেই থাকত। সে হয়তো কোন খবরই পাবে না। দূরে কোথায় যেন বিয়ে হয়েছে তার।
অনেকদিন আগে কবে যেন সে আমাদের বাড়িতে একটা শিউলী গাছ লাগিয়ে ছিল সে। বালিকা বয়স তখন তার। সে গাছ এখন অনেক বড় হয়েছে। ফুলে ফুলে ভরে যায়। সকালে গাছের নীচে যেন সাদা সাদা হীরের কুচি ছড়িয়ে পড়ে থাকে।
সুগগ্ধে মেতে উঠে বাতাস,আমার জানলার দিকে ছুটে আসে। সেই গন্ধ নিয়ে যদি কেকার কাছে পৌঁছে দিতে পারতাম। মনে মনে ভাবি আমি, আর তার জন্য খুব আপসোস করি।
সেই শিউলিগাছটা আজকাল যুবতী নারীর মতো হাতছানি দিয়ে কাছ ডাকে আমাকে, কেউ জানে না। শুধু আমি জানি।
তার নীচে কিছুদিন আগেও গিয়ে বসেছি। এখন আর পারি না। সামর্থে কুলায় না। গাছটার দিকে তাকিয়ে থাকি অসহায়ের মতো। গাছটাও করুণ ভাবে তাকিয়ে থাকে যেন আমার দিকে।
পৃথিবীর সব মায়া কাটিয়ে এবার আমায় চলে যেতে হবে ভেবে নতুন বছরে মনটা খুব ভেঙে পড়ে। মনেহয় আমি খুব ক্লান্ত। আর বইতে পারছি না আমার ভার। আসুক তবে এই অসহায় ক্লান্তির সমাপ্তি।
আমি এখন তারই প্রতীক্ষায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি যে এই নতুন বছরে। এ কথাটা কেউ জানে না আর। শুধু আমিই জানি।
এই পৃথিবী ছেড়ে যেতে যেতে আমি মনে মনে নিয়ে যাব আমার অনামিকা আর কেকার স্মৃতি, সেটাও অজানা থাকবে সকলের কাছে। শুধু আমিই জানব।
SANKAR BRAHMA.
8/1, ASHUTOSH PALLY,
P.O. - GARIA,
Kolkata - 700 084.