অণুগল্প ।। উল্লম্ফন ।। চন্দন মিত্র
উল্লম্ফন
চন্দন মিত্র
'বাবা তুমি বিড়ি খাবে না। লুঙ্গি পরবে না।'
বড়োই ফ্যাসাদে পড়েছি ছেলেকে নিয়ে। পৈতৃক মুদিখানার কাঠের তক্তাপোশে বসে ক্যাশবাক্স সামলাই। তা লুঙ্গি পরব না তো কী কোটটাই পরব! বিড়ির নেশাটা ধরে ফেলে শরীর ক্ষয় করছি। এবার সিগারেট ধরে অর্থক্ষয়ও করতে হয় বুঝি! দোকান থেকে ফেরার পথে এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে বাড়ি ফিরি। ছেলে দেখে বলে, 'এটা সিগারেট? এ তো ছোটোলোকে খায়। শোনো, ফাইভ ফাইভ ফাইভ খাবে।'
নাইনে পড়া ছেলের বায়না সামলাতে সামলাতে আমরা দু-লোক হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। কেন যে হুজুগে মেতে ছেলেকে নামি স্কুলে ভর্তি করেছিলাম! সব ইংরেজি বই। আমরা দু-লোক সেসব দাঁতে কাটতে পারি না। মাসে মাসে ফোন পাল্টায়। একদিন আমার বহুকালের বাহন বুড়ো সাইকেলটা এক লাথিতে ফেলে দিয়ে বলল, 'বুড়ো ভাম কোথাকার! একটা হায়াবুশা কেনো।' নাম শুনে আমার ভিরমি খাবার জোগাড়! তার মা বলল, 'তা কেনো না বাপু। বাবুও মাঝেমাঝে চালাবে।'
একদিন মাঝরাতে বাথরুম করতে উঠে বাবুর ঘরের জানলার ফাঁক দিয়ে দেখি— বাবুর পড়ার টেবিলের উপর মোমবাতি জ্বলছে। তার শিখার উপর একটি কাগজ ধরে বাবু যেন কী করছে। ভাবলাম সিগারেট ধরাবে। না, মোটেও তা নয়। দেখি বাবু একটি নোট পাকিয়ে নলের মতো করে ঠোঁটে নিয়ে সেই কাগজের উপর লাগিয়ে টান দিচ্ছে। মনে হয় বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষা হবে! আশ্বস্ত হয়ে শুতে গেলাম।
===================
চন্দন মিত্র
ভগবানপুর (হরিণডাঙা)
ডায়মন্ড হারবার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
সূচক- ৭৪৩৩৩১