গল্প ।। অন্য জগৎ ।। সায়ন তরফদার
অন্য জগৎ
সায়ন তরফদার
(১)
বাড়ি
অর্ণব রায় একজন অর্থনীতির অধ্যাপক। ইতিমধ্যে সে কেউ কেউ সেটাকে কল্ একাকিত্বে ভুগছে এবং রাত্রে উদ্ভট সব স্বপ্ন দেখছে। যেমন আজ অর্থাৎ, এখন সে একটি যৌনসঙ্গমের দৃশ্য স্বপ্নে দেখছে। সেই দৃশ্যে সে-ই নায়ক। নায়িকাকে সে চেনে না। এক অচেনা নারী। এক অদ্ভুত নারী। চোখে-মুখে তার রঙিন নেশা। যেন হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিন বাতি জ্বলছে। অর্ণবের চোখে-মুখে তখনও বিষণ্ণতা।
হঠাৎ ঘুম ভেঙে উঠে বসল অর্ণব। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের পর ভিজে মাটি যেরকম হয়, তার ছিপছিপে শরীরের অবস্থা এখন তেমনই। ভোর চারটে সাতান্ন বাজে। গতকালের থেকে তিন মিনিট দেরীতে উঠেছে আজ। অথচ গতকালের মতন কোনো ভয়ঙ্কর স্বপ্ন আজ সে দ্যাখেনি। উঠে আয়নার সামনে আলস্য মাখা ভঙ্গিতে ব্রাশ করতে করতে সে ভাবছিল তার স্বপ্নের সেই নায়িকার মুখটি।
(২)
ক্লাসরুম
ছাত্র-ছাত্রীরা অপেক্ষারত তাদের অর্ণব স্যারের জন্য। এক ছাত্র বলল “ভাই, আজ স্যার কেইন্সের লিকুইডিটি প্রেফারেন্স থিওরিটা পড়াবেন। হেব্বি এক্সাইটেড আমি।“ আরেকজন বলে উঠল “এমন করছিস যেন তোর আবিষ্কৃত থিওরি এটা।“ প্রথম ছাত্রটি আবার মজাচ্ছলে বলল “আরে, কেইন্সকে ইকোনমিক্স শেখালো কে? আমি রে পাগলা, আমি।“ এমন সময় তাদের অর্ণব স্যার মুখে বিষণ্ণতা নিয়েই প্রবেশ করল ক্লাসে এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ক্লাস সুদ্ধ সবাই সমস্বরে “গুড মর্নিং” বলে উঠল। অর্ণব ঢুকেই চলে গেল ব্ল্যাক বোর্ডে লিখতে। রোজ যেমন করে। ব্ল্যাক বোর্ডে লিখতে লিখতে বলল “আজ তোদের পড়াব ‘Keynesian Theory of Liquidity Preference’.” লেখা শেষ করে মুখটা ছাত্র-ছাত্রীদের দিকে ঘোরাতেই প্রায় চমকে উঠল অর্ণব। একি! যে মেয়েটিকে সে রাতে স্বপ্নে দেখেছিল, সেই মেয়েটি তার ক্লাসে ছাত্রীরূপে প্রথম সারিতে বসে আছে। তার মুখটি ঠিক তেমনই উজ্জ্বল যেমন গতরাতে ছিল। এ কী করে সম্ভব? এই মেয়েটিকে সে কোনোদিন দ্যাখেনি। প্রথমবার সে দেখল স্বপ্নে আর দ্বিতীয়বার দেখছে এখন, এই মুহূর্তে। সোজাসুজি তার চোখ আটকে গেছে মেয়েটির চোখে। অর্ণব ভিত মুখে বলল “দাঁড়াও স্টুডেন্টস, আমি এক মিনিটে আসছি।“ বলেই সে ক্লাসের বাইরে বেরিয়ে গেল। এক ছাত্রী মজার ছলে আরেকজনকে বলে উঠল “স্যার বোধহয় ভুলে গেছেন। তাই বাইরে গেলেন কেইন্সকে জিজ্ঞেস করতে। হা হা হা।“
অপরজন প্রতিরোধের সুরে বলল “ধুস!”
বাইরে বেরিয়েই সে ফোন করল তার বন্ধু ইন্দ্রকে “হ্যালো ইন্দ্র?”
ইন্দ্র উত্তর দিল “হ্যাঁ বল ভাই। তোর গলাটা এমন আস্বাভাবিক লাগছে কেন? আবার কি…….”
“হ্যাঁ ভাই…আবার…আবার… মানে…”
“আরে ভাই শান্ত হ। শান্ত হয়ে বল। নাহলে এক কাজ কর, আমার চেম্বারে চলে আয়।“
“ওকে। তাই করছি। ইট উড বি বেটার টু টেল ইউ এভ্রিথিং ফেস টু ফেস।“
ফোন রেখেই সে এগোল ট্যাক্সির জন্য। কয়েক মুহূর্তে সে ভুলে গেল যে সে একজন অধ্যাপক। সে এখন ক্লাস করাচ্ছে। ছাত্রছাত্রীরা তার জন্য যে অপেক্ষা করছে, তা যেন মনেই নেই অর্ণবের। সে এখন একমাত্র তার বাল্যবন্ধু ইন্দ্রকেই চেনে। আর কিচ্ছু না। সে কেইন্স বলে কাউকেই চিনতো না। সে কোনোদিন অধ্যাপনা করেনি।
(৩)
ইন্দ্র’র চেম্বার
ইন্দ্র দু হাত দিয়ে পেন নাড়াচাড়া করতে করতে অর্ণবকে জিজ্ঞেস করল “তার মানে তুই বলছিস যে গত রাত্রে যেই মেয়েটিকে স্বপ্নে দেখেছিস, সে তোর ছাত্রী?”
“হুম।“
ইন্দ্র পেনটা টেবিলে রেখে, টেবিলের উপর প্রায় ঝুঁকে বলল “একবার ভালো করে ভেবে দ্যাখ তো যে তুই মেয়েটিকে কোনোদিন দেখিস নি?”
“না রে! আমি একদম নিশ্চিত।“
“তুই একটা কাজ করতে পারবি?”
“কী?”
“তুই প্রথমে কলেজের ডেটা চেক করবি। মানে ছাত্রছাত্রী সম্পর্কিত ডেটা। প্রত্যেকটা ছাত্রীর মুখ ভালো ভাবে দেখবি। শুধুমাত্র ঐ ডিপার্টমেন্টের নয়। প্রত্যেকটা ডিপার্টমেন্টের। পারবি?”
“হ্যাঁ, সে তো পারব। অফিস রুমে প্রায় সবার সাথেই আমার ভালোই সম্পর্ক। বললেই দেখিয়ে দেবে। কিন্তু সব ডিপার্টমেন্টের কেন?”
“হতে পারে অন্য ডিপার্টমেন্টের মেয়ে তোর ক্লাসে ঢুকে পড়েছিল। জ্ঞানের প্রতি খিদেওয়ালা লোকজনের তো আর বাংলায় অভাব নেই।“
“আচ্ছা তাই হবে। এখন তাহলে উঠি?”
“হুম, ওঠ। আর শোন একদম ভয়-টয় পাবি না।“
“ আরে না না।“
(৪)
কলেজ
কলেজে ঢুকেই অর্ণব দেখল যে সেই স্বপ্নের রূপসীটি তার দিকেই আসছে।
“কী হল স্যার? আপনি চলে গেছিলেন?” – অর্ণবকে জিজ্ঞেস করল মেয়েটি।
“না মানে একটা কাজ মনে পড়ে গেছিল। তাই আর কি!” কিছুক্ষণ থেমে অর্ণব আবার বলল “আচ্ছা চলি হ্যাঁ?”
“একি স্যার? তাহলে ক্লাস?”
“পরেরদিন করাব”- অর্ণব প্রায় যেতে যেতেই বলল মেয়েটিকে। কলেজ অফিস রুমে ঢুকতেই অর্ণব দেখল যে সুমনবাবু বসে কাজ করছেন। অর্ণব সুমনবাবু’র কাছে এগিয়ে গিয়ে ডাকলেন সুমনবাবুকে। সুমনবাবু অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বললেন “আরে অর্ণববাবু যে! বলুন কী মনে করে?”
“আসলে…” বলেই সুমনবাবুর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল তার চাহিদা।
“আরে এ কথা আবার ফিসফিস করে বলার কী আছে? সে দেখাতে আমার কোনো সমস্যা নেই।“ একটু খোঁচা মারার ভঙ্গিতে তিনি আবার বললেন “তবে ব্যাপারটা কী মশাই? হঠাৎ…”
“আরে না না, জোরে বলা যাবে না। কাউকে এসব কথা বলবেন না।“
“আরে ঠিক আছে, সে না হয় বলব না। তবে ব্যাপারটা কী? বলা যাবে?”
কী বলবে বুঝতে না পেরে অর্ণব বলল “সে, মানে, আজ নয়। অন্য কোনোদিন বলব। তবে বলুন দেখানো যাবে কিনা?”
“সে ঠিক আছে। তাহলে অন্য কোনোদিনই না হয় শোনা যাবে! আর হ্যাঁ দেখানো যাবে, অবশ্যই, তবে আজ নয় কাল। আজ ভীষণ ব্যস্ত। এই কাজটা আজই শেষ হয়ে যাবে।“
“আচ্ছা।“
এমন সময় শুভাশিষবাবু সুমনবাবুকে কিছুটা দূর থেকে ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে বললেন “আরে সুমনদা।“ সুমনবাবু ওঁর দিকে তাকাতেই আবার বললেন “টলিউডে উঠতি তারকা শুভমের একটা কেচ্ছা বেরিয়েছে, দেখেছেন? হা হা হা…”
এসব শুনেই অর্ণব মনে মনে এইসব পরনিন্দা-পরচর্চারত শুভাশিষবাবুকে মনে মনে গালাগাল দিতে দিতে চলে গেল। কয়েক সেকেন্ড বাদে গম্ভীর মুখে সুমনবাবু তাকিয়ে দেখলেন যে অর্ণব নেই, এবং পরক্ষণেই তিনিও সেই কেচ্ছায় তারকা শুভমের মুণ্ডপাত করতে লাগলেন।
(৫)
বাড়ি
ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি। অর্ণব বসে আছে কফি কাপ হাতে নিয়ে। কী ভাবছিল, ওই জানে। এমন সময় ফোন এল। ফোন ধরেই অর্ণব বলল “হ্যাঁ বল ইন্দ্র।“
“কী হল রে? ডেটা পেলি?”
“না রে। আজ হল না। কাল হবে।“
“ফাইন। তাহলে… ডেটা চেক করেই কাল সঙ্গে সঙ্গেই জানাবি।“
“ওকে ব্রাদার।“ বলেই অর্ণব ফোন রেখে দিল। তারপরেই সে শেলফ থেকে একটা বই খুলে পড়তে আরম্ভ করল। এভাবেই কেটে গেল সন্ধ্যেটা। বৃষ্টি যে কখন থেমে গেছে, অর্ণব তা খেয়ালও করেনি।
(৬)
রাত্রি
“স্যার, আপনি কেইন্সের থিওরিটা বোঝাবেন এখন?” বলল স্বপ্নের মেয়েটি।
অর্ণব ল্যাপটপে কাজ করতে করতে হঠাৎ প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে তাকাল, তারপর চমকে উঠে বলল “তুমি?”
“হুম। কেন, অবাক হচ্ছেন?”
“না মানে, তুমি ভিতরে ঢুকলে কী করে?” ভিত স্বরে জিজ্ঞেস করল অর্ণব।
তারপর মেয়েটি “হা হা” করে অট্টহাসি হাসতে লাগল। যেই হাসিতে একটা বিদ্রুপ মিশে আছে। আর সেই হাসির গতিবেগ বৃদ্ধির সাথে সাথে ছন্দ মিলিয়েই যেন অর্ণব নিজে পিছতে লাগল।
হঠাৎ, ঘুম ভেঙে চমকে উঠে অর্ণব প্রচণ্ড হাঁপাতে লাগল। আশেপাশে হাতড়াতে হাতড়াতে জলের বোতলটা অর্ণব নিয়ে ঢগঢগ করে জল খেতে লাগল।
(৭)
কলেজ
পরেরদিন কলেজে প্রবেশ করেই প্রথমে অর্ণব অফিস রুমে প্রবেশ করেই সুমনবাবু’র কাছে গেল।
“সুমনবাবু, আজ কিন্তু…” অর্ধেক বলে সুমনবাবুকে বোঝাতে চেষ্টা করল অর্ণব।
“হ্যাঁ, হ্যাঁ। একদম।“ কম্পিউটার ঘাঁটাঘাঁটি করে তিনি আবার বললেন “এই নিন, অর্ণববাবু। এখানে সব ডিটেইলস আছে। দেখুন।“
এরপর প্রায় দু-ঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পর অর্ণব সুমনবাবুকে কম্পিউটার হস্তান্তর করে বললেন “এই নিন হয়ে গেছে।“
“তাহলে কি এখন ব্যাপারটা…ইয়ে মানে---“ সুমনবাবু হাসি হাসি মুখে চিবিয়ে চিবিয়ে জিজ্ঞেস করলেন অর্ণবকে।
“পরে, পরে। সময় হলে সব বলব।“ বলেই অর্ণব সঙ্গে সঙ্গে অফিস রুম থেকে বেরিয়ে গেল। এবং ফোন বের করে কল করল ইন্দ্রকে।
“হ্যালো ইন্দ্র…”
“হ্যাঁ বল ভাই। খোঁজ পেলি?”
“না…কী আশ্চর্য লাগছে! ওরকম কোনো মেয়ের মুখ দেখলামই না।“
“হুম! যা ভেবেছিলাম!” ইন্দ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল।
“মানে? তুই জানতিস?”
“না না… তুই আমার চেম্বারে চলে আয়। বলছি সব। আসতে পারবি এখন?”
“হুম, আসছি।“
(৮)
ইন্দ্র’র চেম্বার
অর্ণব দরজার ধারে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল “আসবো?”
ইন্দ্র সামনে পেশেন্টের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অর্ণবের দিকে নিক্ষেপ করে বলল “আরে আয় আয়।“
অর্ণব এসে পেশেন্টের পাশের চেয়ারটিতে বসলো। ইন্দ্র পেশেন্টকে প্রায় পাঁচ-দশ মিনিট ধরে ইন্সট্রাকশন দিল। তারপর পেশেন্টটি চলে যেতেই অর্ণবের সাথে কথোপকথনে যুক্ত হল ইন্দ্র।
“বল, তাহলে অ্যাট লাস্ট পেলি না?” জিজ্ঞেস করল ইন্দ্র।
অর্ণব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল “না!”
“আচ্ছা শোন। আপাতত যা দাঁড়াচ্ছে…তুই তোর মনের মধ্যে দুটো জগৎ তৈরি করে নিচ্ছিস।“
“মজা নাকি?”
“উফ! শোন না আগে।“ বিরক্ত হয়ে বলল ইন্দ্র। এরপর একটু শান্ত হয়ে বলল “তো যেটা বলছিলাম। তুই তোর মনের মধ্যে দুটো জগৎ তৈরি করে নিচ্ছিস। একটা বাস্তব আর আরেকটা কল্পনা। এখন তুই যেটা দেখছিস, সেটা হল বাস্তব। যদি এখন আমার পাশে সেই মেয়েটিকে দেখিস, তাহলে সেটা হবে কল্পনা। এটা একটা কমন মানসিক রোগ। অনেকের হয়। আশা করি বোঝাতে পারলাম।“
“মানে? এই রকম আবার হয় নাকি? আমি কল্পনায় জগৎ তৈরি করবো আর আমি জানবো না?”
“জানিস না বলেই তো এটা রোগ। আমি রোজ রাত্রে প্যারিস, নিউ ইয়র্কে ঘুরে বেড়াই। মানে কল্পনায়। একটা জগৎ তৈরি করি যেটা আমি নিজে থেকেই করি, তাই এটা কোনো ‘রোগ’ নয়। যেটা তুই কল্পনা করছিস, সেটা তোর কাছে অজ্ঞাত, তাই এটা ‘রোগ’। অর্থাৎ, তোর কাছে কল্পনাটা অজান্তেই ‘বাস্তব’ হয়ে উঠছে।“
“এক কথায়, আমি পাগল, তাই তো?”
“ধুর! পাগল কেন হতে যাবি? মানসিক রোগ মানেই কি সে ‘পাগল’? তুই একটা শিক্ষিত ব্যক্তি হয়ে এসব বলিস কী করে?” বিরক্ত হয়ে বলল ইন্দ্র।
“আমার রোগটা তাহলে এক কথায় কী?”
“সিজোফ্রেনিয়া।“
“তাহলে এর চিকিৎসা?”
“আপাতত কিছু ওষুধ দিচ্ছি, এগুলো মেইন্টেইন কর।“
(৯)
বাড়ি
ওষুধ ও জলের গ্লাস হাতে নিয়ে জানলা দিয়ে বাইরের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে ছিল অর্ণব। চোখে কিছুটা বিস্বাদ, কিছুটা আস্বাভাবিকতা। তারপর ঘোর কাটিয়ে ওষুধ খেয়ে চুপচাপ শুয়ে রইল। ভাবতে চেষ্টা করল অঙ্কিতা’র কথা। ওরা একসাথে তখন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করছে। অর্ণবের বিষয় ছিল অর্থনীতি আর অঙ্কিতা’র ছিল কগ্নিটিভিভ সায়েন্স। তার ভাবনায় ভেসে উঠল কলেজের লাইব্রেরী। সেই পুরনো ফেলে আসা দিন।
“ISI-তে ডাইনোসরের কঙ্কালটা কেমন লাগল?” অর্ণবকে জিজ্ঞেস করল অঙ্কিতা।
“ডাইনোসর? এখানে আবার ডাইনোসর আছে নাকি?”
“হায়! হায়! এটাও জানিস না?” বলেই ও অর্ণবের হাত ধরে আবার বলল “চল চল, দেখব চল।“
ওরা উঠে সেই ডাইনোসরের ঘরের সামনে গিয়ে কাচের দরজায় উঁকি দিয়ে দেখল।
“অসাধারণ! এটার নাম কী?” জিজ্ঞেস করল অর্ণব।
“বড়পাসরাস টেগরি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শতবর্ষ উপলক্ষে এটার নামকরণ হয় রবি ঠাকুরের নামে ‘টেগরি’ আর বড় পা, তাই ‘বড়পাসরাস’।“
“আরে স্যার?” একটি নারী কণ্ঠে কথাটা শুনেই চমকে উঠে সে অতীত থেকে ফিরে এল বর্তমানে। সব ভাবনার ইতি করে ধড়মড় করে উঠে বসল অর্ণব, এবং দেখল সেই স্বপ্নের নারীমূর্তি। অর্ণবের দিকে এগোতে এগোতে মেয়েটি অনুরোধ করল “স্যার, আমায় প্লিজ বোঝান না থিওরিটা!“ অর্ণবের সেই সময়ে একটুও মনে হয়নি যে সে কল্পনা করছে। এটা কল্পনা হতেই পারে না। এই তো স্পষ্ট দেখছে। স্পষ্ট মেয়েটা এগোচ্ছে অর্ণবের দিকে। ইন্দ্র নিশ্চয়ই অর্ণবের সাথে মজা করেছে। মেয়েটি এগিয়ে গিয়ে অর্ণবের গায়ে উঠে চুম্বন করতে চেষ্টা করল। কোনোমতে অর্ণব সেখান থেকে সরে গেল এবং ভয়ার্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল “কী চাও তুমি? কেন আসছ বারবার?” মেয়েটি পরিহাসপূর্ণ হাসির স্বরে বলল “এ বাবা! আপনি জানেন না? আমি তো আপনাকে চাই।“
“মানে?”
“মানে তো খুব সোজা স্যার। আপনি আমার সাথে স্বপ্নে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। আমি চাই যে আপনি এবার বাস্তবে সেই সম্পর্কের পুনরাবৃত্তি করুন।“
অর্ণব সারা অঙ্গে ভয় উত্তোলন করে বলল “বাস্তব? না এটা বাস্তব নয়…এটা, এটা কল্পনা। ইন্দ্র আমায় বলেছে।“
মেয়েটি হাসতে হাসতে বলল “মিথ্যে বলেছে…।“ মেয়েটি হাসতে লাগল তীব্রভাবে, ক্রমবর্দ্ধমান গতিতে। সেই সময় বিচলিত হয়ে অর্ণব ফোন ডায়াল করতে লাগল। ফোন কানেক্ট হতেই অর্ণব ভয়ে তীব্র বিচলিত হয়ে ফোনে বলল “হ্যালো ইন্দ্র…ভাই…মেয়েটা…সেই মেয়েটা।“ ইন্দ্র বাড়িতে বসে মদ্যপান করবে বলে ব্যবস্থা করছিল, ইতিমধ্যে অর্ণবের ফোন এল।
“দাঁড়া দাঁড়া…আমি আসছি।“ বলেই ইন্দ্র বেরিয়ে পড়ল গাড়ি নিয়ে অর্ণবের বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাড়িতে ও পাজামা-পাঞ্জাবি পরে থাকে। সেই পোষাকেই ও রওনা দিল। অর্ণবের বাড়ির কলিং বেলটি বেজে উঠতেই ও ছুটে গিয়ে দরজা খুলল।
“কী রে?---“ ইন্দ্রকে শেষ করতে না দিয়েই অর্ণব প্রচণ্ড ভয়ে বলল “তাড়াতাড়ি আয়।“ এরপর ওরা দুজনেই ঘরে গিয়ে দেখল ফাঁকা ঘর। ফাঁকা অর্থাৎ, মনুষ্যবিহীন তবে আসবাবপত্রযুক্ত।
অর্ণব চমকে উঠে আপন মনে বলল “কী হল, মেয়েটা কই? এক্ষুনি তো ছিল।“
“আরে, আগেরদিন তোকে কী বোঝালাম? সব ভুলে গেলি?” ইন্দ্র বলে উঠল অর্ণবকে।
অর্ণব রাগ প্রকাশ করে বলল “কী বুঝিয়েছিস, সেই কল্পনার থিওরিটা তো? রাখ তোর সাইকোলজি…আমি স্পষ্ট দেখতে পারছি আর তুই এটাকে কল্পনা বলে চালাতে চাইছিস? আমার সাথে ইয়ার্কি চলছে নাকি?”
“শান্ত হ। বস এখানে।“ বলে ইন্দ্র ওকে বিছানায় বসাল। জলের বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল “জল খা।“ অর্ণব বেশ কিছুটা জল খেয়ে শান্ত হল।
“আচ্ছা, আমি না হয় ইয়ার্কি করছি…” ইন্দ্র বলল অর্ণবকে। পায়ের উপর হাতের কনুই রেখে, আর মাথাটা হাতের পাতায় রেখে নিচু করা অবস্থায় বিছানায় বসেছিল অর্ণব। ইন্দ্র কথা চালিয়ে গেল “কিন্তু তুই বল যে তোর ঘর তো নিশ্চয়ই লক করা ছিল, তাহলে মেয়েটা ঢুকল কিভাবে? এখন নিশ্চয়ই বলবি না যে মেয়েটার কাছে ডুপ্লিকেট চাবি ছিল? আর যদি ঢুকল, তো গেল কিভাবে? আর কোনো দরজা ছিল?”
এবার অর্ণব মুখ উঁচু করে তাকাল ইন্দ্র’র দিকে।
“কিন্তু আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি স্পষ্ট দেখছি, যেমন ধর…যেমন ধর তোকে দেখছি এখন।“ অর্ণব যুক্তি দেখাতে চেষ্টা করল।
“তাই জন্যই তো এটা রোগ! আমরা কম বেশি প্রত্যেকেই কল্পনা করি। কল্পনার মাধ্যমেই আমরা বেঁচে থাকতে চেষ্টা করি। তবে কেউ কেউ সেটাকে কল্পনাতেই সীমাবদ্ধ রাখে আবার কেউ কেউ কখন যে কল্পনাটাকেই বাস্তব করে ফেলে, তা টেরও পায়না। যেমন ধর তোদের অর্থনীতির জনক, কী যেন নামটা?”
“অ্যাডাম স্মিথ।“
“হ্যাঁ রাইট। উনি, জানিস, নিজের সাথে নিজে কথা বলতেন।“
“কী! সত্যি?”
“হুম। তবে উনি নিজে ওটাকে কল্পনাতেই সীমাবদ্ধ রাখতেন নাকি বাস্তব করে ফেলেছিলেন, তা জানি না অবশ্য।“
ইন্দ্র একটা সিগারেট ধরাল। সিগারেটে একটা টান দিয়ে ইন্দ্র বলল “আজ রাতটা আমি এখানে থেকে যাচ্ছি, কাল আমার সাথে আমার বাড়ি যাবি।“
“তোর বাড়ি? কেন?”
“কারণ, তোকে আমি পর্যবেক্ষণ করতে চাইছি।“ বলেই আবার ইন্দ্র বলল “আচ্ছা, আমি পাশের ঘরে যাচ্ছি…পাশের ঘরে কোনো সমস্যা নেই তো?”
“না না, একদম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।“
“ওকে। গুড নাইট। ট্রাই টু স্লিপ।“
(১০)
পরেরদিন সকালবেলা
সূর্য যখন অফিসে জয়েন করে আলো দেওয়া শুরু করল, তখন উঠল অর্ণব। সে বরাবরই তাড়াতাড়ি ওঠে। উঠেই পাশের ঘরে দেখতে গেল ইন্দ্রকে। গিয়েই চমকে উঠল। সেখানে তো কেউ নেই। কোথায় ইন্দ্র? ফাঁকা ঘর। সঙ্গে সঙ্গে এদিক-ওদিক খুঁজল। সারা বাড়ি তন্ন-তন্ন করে খুঁজল। কেউ কোথাও নেই। সঙ্গে সঙ্গে ইন্দ্রকে ফোন করল অর্ণব। ইন্দ্র’র ফোন বেজে গেল। ও তখনও ঘুমাচ্ছে। ঘুম থেকে উঠে মিস্ড কল দেখেই ইন্দ্র অর্ণবকে ফোন করল “হ্যালো, সরি রে ভাই, ঘুমাচ্ছিলাম। বল। তুই ঠিক আছিস তো?”
“ঘুমাচ্ছিলিস? কখন বাড়ি গেলি? বলে যেতে পারতিস তো। আমি----“
ইন্দ্র অর্ণবকে থামিয়ে দিয়ে বলতে লাগল “দাঁড়া, দাঁড়া… আমি বাড়ি গেলাম মানে? কাল, চেম্বার থেকে? সে তো যেমন যাই, ৯টা। কেন বল তো?”
“আরে, কাল রাতে আমার বাড়ি থেকে কখন গেলি?”
“তোর বাড়ি? মানেটা কী? তোর বাড়িতে আমি গেলামই বা কখন?”
অর্ণব এবার হালকা রেগে বলল “ইয়ার্কি নাকি? এটাকেও ‘কল্পনা’ বলবি নাকি?”
“আরে ব্যাপারটা বল গুছিয়ে।“
“আরে বাবা, কাল রাতে তো আমি ফোন করলাম। কাল মেয়েটা এসেছিল, ভয় পেয়ে তোকে ফোন করলাম। তুই এলি তারপর। তারপর---“
ইন্দ্র অর্ণবকে থামিয়ে বলল “ওয়েট ওয়েট ওয়েট… তুই আমাকে কাল রাত্রে ফোন করেছিলিস, সেটা
ঠিক, তবে আমি তোর বাড়ি গেছি? আমি তো ফোনই ধরিনি। তখন তো আমার হুঁশ ছিল না। আমি
রাতে তো একটু মদ্যপান করি, তুই জানিস। আমি আজ সকালে তো তোর মিস্ড কল দেখলাম!
আজকেরগুলোও আর কাল রাতের একটা। অর্ণব প্রায় অবাক হয়েই বলল “হোয়াট? কী বলছিস কী? তুই
তো কাল রাতে আমার বাড়িতেই ছিলিস।“
“না রে। আমি বাড়িতেই ছিলাম। তখন আমি মদ্যপান করছিলাম।“
“তার মানে?”
“তার মানেটা…তুই আজ এগারটায় আমার চেম্বারে আয়।“
(১১)
ইন্দ্র’র চেম্বার
ফাঁকা চেম্বার। আপাতত কোনো পেশেন্ট আসেনি। এমন সময়ে অর্ণব ঢুকল। অর্ণবকে দেখেই ইন্দ্র
বলল “আয়। আয়।“
অর্ণব চেম্বারে ঢুকে সামনে তিনটি চেয়ারের মাঝখানেরটায় বসে পড়ল। ইন্দ্র বলল “কেসটা যা
শুনলাম, তাতে দাঁড়াচ্ছে যে আমি কাল রাতে তোর বাড়ি গিয়ে রাতে ছিলাম, রাইট?
“এক্সাক্টলি…” একটু থেমে অর্ণব আবার বলল “কাল রাতে ওষুধ খেয়ে আমি শুয়েছি, তারপরই মেয়েটা
এল।“ এবার ও উত্তেজিত হয়ে বলতে লাগল “ও প্রায় আমার গায়ে উঠে চুম্বন করতে যাচ্ছিল। আমি
প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়ে তোকে ফোন করেছিলাম। তুই ধরে বললি যে আসছিস। তার কিছুক্ষণ পরেই
তুই এলি। তোকে ঘরে নিয়ে গেলাম। গিয়েই অবাক হয়ে দেখলাম যে কেউ নেই। তারপর তুই কল্পনা
বাস্তব নিয়ে কীসব জ্ঞান-ফ্যান দিলি…তারপর বললি যে আমাকে তুই তোর বাড়িতে রেখে পর্যবেক্ষণ
করবি।
“হুম…বাট, আমি কাল সারারাত বাড়িতেই ছিলাম। ইভেন, চেম্বার থেকে ফিরে কোথাওই যাইনি।“
“তার মানে?”
“তার মানে এটাই যে তুই আমাকেও কাল কল্পনা করেছিস। আর হ্যাঁ, তোর কল্পনা করা বাস্তব থেকে
আইডিয়াটা এল যে তোকে আমি আমার বাড়িতেই রাখব। তাতেই সুবিধা হবে।
“তুই কি কল্পনা কল্পনা করে কোনো উপন্যাসের প্লট খুঁজছিস? সবই কল্পনা?”
“আরে শান্ত হ রে! তাছাড়া আর কী? তোর কাছে অন্য কোনো কারণ আছে? যুক্তি আছে?”
অর্ণব মাথা নিচু করে চুপ করে রইল। ইন্দ্র কিছুক্ষণ থেমে বলল “তোকে আজ রাতে আমার বাড়ি নিয়ে
যাচ্ছি। চেম্বার থেকে সোজা তোর বাড়ি গিয়ে তোকে রিসিভ করে নেব।“
“আচ্ছা, তুই, মানে এখন তুই কি কল্পনা না বাস্তব।“
“তোর কী মনে হয়?” ইন্দ্র কপালে হালকা ভাঁজ ফেলে জিজ্ঞেস করল।
“আমার তো মনে হচ্ছে যে এই জেনারেশনটাই একটা স্বপ্ন। তুই স্বপ্ন, তোর চেম্বার স্বপ্ন, অঙ্কিতা স্বপ্ন
ছিল, এত বৈজ্ঞানিক আবিস্কার স্বপ্ন, কেইন্স বলে কেউ কখনো ছিল না, সব স্বপ্ন, সব সব। হঠাৎ,
একদিন ঘুম ভাঙবে। উঠে দেখব, আমরা এখনো আদিম মানুষ। ঘুম ভেঙে দেখব, কোনো গণতন্ত্রের
পরিহাস নেই, নাগরিকত্ব নেই, কিচ্ছু নেই। দেশ আমাদের পৃথিবী।
(১২)
রাত
ইন্দ্র অর্ণবের বাড়ির সামনে এসে গাড়ির হর্ন বাজাতেই অর্ণব নীচে নেমে এল এবং গাড়ির মধ্যে ঢুকে
গেল। ইন্দ্র ড্রাইভ করে এগিয়ে চলল তার নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে। ইন্দ্র ড্রাইভ করতে করতে অর্ণবকে
জিজ্ঞেস করল “কী রে, আজ কিছু হয়েছে?”
“না না। আজ কিছু হয়নি।“
“মেয়েটাকে দেখতে কেমন রে? প্রেম করার মতো?”
“কেন, প্রেম করবি?”
“ইস, করা গেলে কিন্তু বেশ হত! দ্যাখ, কল্পনাতেও মেয়েরা তোকে চুমু দিতে চাইছে।“
“মেয়েরা? আরও মেয়ে কল্পনা করছি নাকি আমি?”
“ঠিক আছে একবচন। বহুবচন ব্যবহার করার জন্য দুঃখিত। কিন্তু বাস্তবে তো কম মেয়েকে চুমু খেয়ে
বেড়াসনি!
“হ্যাঁ, তুইও কল্পনা করছিস, বুঝলাম।“
“কল্পনা? এটা যে কল্পনা নয়, সেটা তুইও জানিস।“ একটু থেমে ইন্দ্র বলল “শালা, তোর বর্তমানের প্রিয়
কবির একটা বই পড়লাম সেদিন।“
“সে তো অনেকেই প্রিয় কবি। তো, কার কোন বই পড়লি আবার?”
“কবি কৌশিক। ওঁর ‘চুমুতে সর্বনাশ’ বইটা পড়লাম। পড়ে শালা তোর কথাই মনে হল। মনে হল,
তোকে ডেডিকেট করেই লিখেছে।“ অর্ণব হাসছে ক্রমাগত এবং ইন্দ্র বলে চলল “শালা, সব কবিতায়
শুধু চুমু আর সেক্স।“
“ওটাই তো শিল্প, বেঁচে থাকার রসদ।“
“চুমু শিল্প?”
“হ্যাঁ, আলবাত শিল্প। তুই শিল্পের বুঝিসটা কী?”
“উফ, বড় শিল্পী এসেছে রে ! কী সৌভাগ্য আমার!”
কথা বলতে বলতে বাড়ি এসে গেছে। ওরা গাড়ি থেকে নেমে বাড়িতে ঢুকল।
(১৩)
রাত ৯টা। ইন্দ্র’র বাড়ি।
রাতে আবার বৃষ্টি নামলো। প্রায় মুষলধারে। জানলার সামনে দাঁড়িয়ে অর্ণব এক দৃষ্টিতে বৃষ্টি উপভোগ
করছিল। যেন ও আর এখান থেকে নড়বে না। ও যেন বৃষ্টির ফোঁটাগুলোকে বলছে “আমিও কি
তোমাদের সাথে ঝরতে পারিনা? তোমাদের মতো বৃষ্টির ধারা হয়ে কাটাতে পারিনা বাকি জীবনটা?”
এমন সময় ইন্দ্র ঘরে প্রবেশ করল কবিতা আবৃত্তি করতে করতে…
“বৃষ্টির ফোঁটা ঝরছে ঝরুক, তোমার ঠোঁটের গভীরে
এই আষাঢ়ে তুমিও ঝরো, আমার প্রাণের অচিরে।“
আচমকা কবিতা শুনে অর্ণব ঘোর কাটিয়ে তাকাল ইন্দ্র’র দিকে এবং বলল “বাবা রে! হঠাৎ কাব্য করছিস?”
“কেন কবিতা কি তুই একাই পড়িস?”
অর্ণব হালকা হেসে বলল “না, তা নয়। তো, তোর লেখা এটা?”
“না না…আমি আবার লিখতে পারি নাকি? এটা কবি সায়নের লেখা।“
“ধুর! এই সায়ন একদম জঘণ্য লেখে। ওকে নিয়ে সবাই যা আদিখ্যেতা করে না!”
“খারাপ কী?”
“ধুর শালা, তুই কবিতাই বুঝিস না। আজেবাজে কবিতা পড়িস। তুই কৌশিকের কবিতা পড়ে
বাজে ক্রিটিসাইজ করলি আর সায়নের কবিতা পড়ে প্রশংসা করছিস? এই কবিতাটায় ঠোঁট নেই?
তোর তো চুমুতে আপত্তি!
“আরে বাবা! এত রেগে যাওয়ার কী আছে? কী এমন বললাম?”
ইত্যাদি কথোপকথন শেষ হয়ে ওরা ডিনার করে শুয়ে পড়ল।
(১৪)
রাত ১টা
রাতে ঘুম না আসায়, অর্ণব চুপচাপ দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিল। হঠাৎ ইন্দ্র ঢুকল আবার।
“কী রে!” ইন্দ্র ডাকল চিন্তারত অর্ণবকে।
“কী, ঘুমাস নি?”
“আমি তো ঘুমাই না।“
“মানে? ইয়ার্কি মারিস না, মাঝ রাতে। যা শুয়ে পর।“
“দাঁড়া, একজন দেখা করতে এসেছে তোর সাথে।“
অর্ণব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল “কে?”
ইন্দ্র দরজার দিকে মুখ করে কাকে যেন “এসো” বলে ডাকল। সঙ্গে সঙ্গে ঢুকল অর্ণবের স্বপ্নের সেই রূপসীটি। এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই চমকে উঠল অর্ণব। অর্ণব ইন্দ্রকে ভয়ার্ত স্বরে বলল “কী রে, ওকে কোথায় পেলি? শী ডাজেন্ট এক্সিস্ট…” ভয়ে হালকা তুতলে গিয়ে আবার বলল “ইউ টোল্ড মি।
“শী এক্সিস্টস, অর্ণব। এই দ্যাখ, পরিষ্কার এক্সিস্ট করছে।“
“তুই তো বলেছিলি…”
ইন্দ্র অর্ণবকে থামিয়ে দিয়ে বলল “সবাই এক্সিস্ট করে…কেউ কল্পনায়, কেউ বাস্তবে, কেউ কল্পনার বাস্তবে। তুই যাকে এক্সিস্ট করাতে চাস, সেই-ই এক্সিস্ট করবে, তোর বিশ্বাসের কাছে।“ অর্ণব সঙ্গে সঙ্গে দৌরে পাশের ঘরে গেল এবং দেখল নাইট ল্যাম্পের আলোয় কেউ একজন শয্যাশায়ী। ভয় ভয় অর্ণব টিউবটা জ্বালিয়েই চমকে উঠল। দেখল ইন্দ্র শুয়ে আছে। পিছন দিক থেকে অর্ণব কানের কাছে দীর্ঘ টানে “স্যা----র” শুনেই কেঁপে উঠে সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে মেয়েটিকে দেখেই ভয়ে “আ………!” করে চিৎকার করে উঠল। এবং ইন্দ্র ঘুম থেকে উঠে খাটের থেকে নেমে দাঁড়াল এবং এদিকে দরজার কাছে এল আরেক ইন্দ্র। ঈন্দ্র খাটের সামনে থেকে চমকে বলল “কী রে, কী হয়েছে? কী ব্যাপার?”
ইন্দ্র দরজার সামনে থেকে অট্টহাসি হাসতে লাগলো।
অর্ণব খাটের দিকে তাকিয়ে ভয়ে তুতলে গিয়ে বলল “এই দ্যাখ” বলে অর্ণব হাত দিয়ে দরজার দিকে নির্দেশ করে বলল “তুই দাঁড়িয়ে তো!” ততক্ষণে মেয়েটি প্রায় ভ্যানিশ। ইন্দ্র খাটের সামনে থেকে অর্ণবের দিকে এগিয়ে গিয়ে আস্বস্ত করার ভঙ্গিতে বলল “ভাই, ভাই ভাই, ওটা আসল নয়, ওটা Hallucination...ওটা বাস্তব নয়।“ অর্ণব মুখ হাত দিয়ে চেপে নিচু করে রেখেছিল। ইন্দ্র ওর কাঁধে হাত দিয়ে আবার বলল “তাকা আমার দিকে তাকা।“ ও তাকাতেই ইন্দ্র বলল “আমি বাস্তব, ওখানে কেউ নেই।“ এমন সময়ে অর্ণব দরজার দিকে তাকাতেই ইন্দ্র ওখান থেকে ওর দিকে এগিয়ে আসতে থাকে এবং অর্ণব দৌরে খাটের কাছে গিয়ে খাটে মুখ গুঁজল। এমন সময় ইন্দ্র কাছে গেল।
ইন্দ্র বলতে লাগল “তাকা তাকা, এদিকে তাকা। কেউ কোথাও নেই।“ কিছুক্ষণ থেমে আবার “আরে তাকা না। আমি আছি তো! কেউ কোথাও নেই। তুই তাকা এদিকে।“ অর্ণব তাকাতেই আবার চমকে উঠল। দু’জন ইন্দ্র পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। অর্ণব এবার তীব্র ভয়ে চিৎকার করে বলে চলল “দু’জন, দু’জন…।” ইন্দ্র ডানদিক থেকে বলল “আমার দিকে তাকা…আমি বাস্তব। আমি আর তুই ছাড়া এখানে আর কোথাও কেউ নেই।“
ইন্দ্র বাঁদিক থেকে বলল “এ দিকে তাকা…আমি বাস্তব। আমি ছাড়া এখানে আর কোথাও কেউ নেই।“
এরকম দীর্ঘক্ষণ দুই ইন্দ্রের কথোপকথন শুনে, আসল ইন্দ্রকে কিছুতেই চিনতে পারল না অর্ণব। হাত দিয়ে চোখ ঢেকে চিৎকার করতে করতে অর্ণব এক সময়ে অজ্ঞান হয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পর…
খাটের উপর শুয়ে জ্ঞান ফেরার পর অর্ণব চোখ খুলে দেখল ইন্দ্র পাশে বসে আছে।
অর্ণব আবার ভয় পেল তবে পূর্বের থেকে কম মাত্রায়। কারণ, ওর এনার্জি কমে গেছে। ও বলল “তুই…তুই…কল্পনা না বাস্তব?”
“আমি বাস্তব। সম্পূর্ণ বাস্তব।“ ইন্দ্র অর্ণবকে আস্বস্ত করার ভঙ্গিতে বলল।
অর্ণবের ভয় একটু কমলে(বলা বাহুল্য যে পুরপুরি কমেনি), ইন্দ্র ওকে ওষুধ দিল।
“এই নে… ঘুমের ওষুধটা খেয়ে নে। তোর পর্যাপ্ত ঘুম দরকার।“ বলে ইন্দ্র ওষুধ এগিয়ে দিল অর্ণবের দিকে। অর্ণব ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়ল। ইন্দ্র পাশের ঘরে চলে গেল।
(১৫)
পরেরদিন গাড়িতে
“এবার কি বলবি যে কোথায় যাচ্ছি?”
“আমার বন্ধু’র নার্সিং হোমে। বন্ধু’র বলতে, ও ওখানে ডাক্তার। তোর ব্যাপারে ওর সাথে কথা হয়েছে। তোর চিকিৎসাটা ওখানেই হবে।“
“তাহলেই আমি সুস্থ হয়ে যাবো?”
“দ্যাখ, তোকে মিথ্যে বলব না। সত্যি বলতে, এই রোগ থেকে একদম কিওর হওয়া সম্ভব নয়। তবে…“
অর্ণব ইন্দ্রকে থামিয়ে দিয়ে মুখে অভিমানের ছাপ ফুটিয়ে তুলে জিজ্ঞেস করল “তার মানে? চিরদিন…তাহলে কিসের চিকিৎসা? কেন দরকার, যখন সুস্থ হবই না?”
“আরে পুরো কথাটা শোন। পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব নয় ঠিকই, কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসা, থেরাপি এটা কমাতে সক্ষম এবং কন্ট্রোল করতে পারবে। ডোন্ট ওয়ারী। ও আমার খুব ভালো বন্ধু। চিকিৎসাটা ও নিজেই করবে। ভরসা করতে পারিস।“
এবার নার্সিং হোমে পৌঁছল ওরা দু’জন।
নার্সিং হোমে এলে অর্ণবের বরাবর নিজেকে অসুস্থ মনে হয়। সে নার্সিং হোমে ঢুকেই দেখতে লাগল সব মানুষদের। সে সেসব মানুষদের মানসিক অবস্থা বোঝার দৃষ্টিতে তাদের প্রতি তার দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে লাগল এবং হাঁটতে লাগল ইন্দ্রকে অনুসরণ করে। এবারে তারা একটি রুমে ঢুকল।
ভিতরে ল্যাপটপে মুখ গুঁজে কর্মরত এক ব্যক্তি’র প্রতি ইন্দ্র তার শব্দ ছুঁড়ল “আসবো?”
“আরে আয় আয়।“ ল্যাপটপ ছেড়ে দরজার দিকে তাকিয়ে উতফুল্ল ভঙ্গিতে বলল ব্যক্তিটি। ইন্দ্র আর অর্ণব ভিতরে ঢুকে চেয়ার টেনে নিয়ে বসল।
“হ্যালো, আমি ডঃ দত্ত, সায়ক দত্ত।“ অর্ণবের দিকে হ্যান্ড শেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল সায়ক। তারপর আবার বলল “আমি ইন্দ্র’র কাছে আপনার ব্যাপারে শুনেছি সব। ডোন্ট ওয়ারী।“
ইন্দ্র অর্ণবকে বলল “সায়ক আর আমি একসাথে পড়াশোনা করেছি। ও কলেজে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল।“
“তোরা বেস্ট ফ্রেন্ড কি আমাকে সম্পূর্ণ কিওর করতে পারবি? তা তো পারবি না।“ হালকা রাগে আবৃত হয়ে অর্ণব বলল। সায়ক এবার জবাব দিল “দেখুন অর্ণববাবু, আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড কী, কোনো বেস্ট ফেন্ডই পারবে না। কারণ, এ রোগ থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব নয়। আমাদের উপর বিশ্বাস রাখুন, আমরা এটাকে কন্ট্রোল করে দেব।“
অর্ণব কিছু বলল না। চুপ করে রইল।
“আপনি আজ ভর্তি হয়ে যান। আমি ব্যবস্থা করছি।“ সায়ক বলল অর্ণবকে। সায়ক কথাটা বলেই একটা ফোন করল, কিন্তু কী বলল তা অর্ণব খেয়াল করল না।
সায়ক ফোন রেখে জিজ্ঞেস করল অর্ণবকে “আচ্ছা, আপনি সেই স্বপ্নের মেয়েটি আর ইন্দ্র ছাড়া আর কাউকে কি দেখেছেন, আই মিন, ইম্যাজিন করে?” অর্ণব কিছু বলল না। সে এখনো অন্যমনস্ক। এবার ইন্দ্র ওকে আলত করে ঠেলতেই, ও নড়ে চড়ে বসে ইন্দ্রকে বলল “হ্যাঁ…হ্যাঁ… বল। একটু আরকি…!”
সায়ক আবার বলল “বলছি যে, আপনি সেই স্বপ্নের মেয়েটি আর ইন্দ্র ছাড়া আর কাউকে কি দেখেছেন, মানে ইম্যাজিনেশনে?”
“আপাতত না।“
“আচ্ছা, কত দিন বাদে বাদে হয় তাও, অ্যাপ্রক্সিমেটলি?”
“নির্দিষ্ট থাকে না কিছু।“
“ওকে।“
অর্ণবকে সেদিন ভর্তি করা হল নার্সিং হোমে। একটা শকের প্ল্যানিং করা হচ্ছিল ডাক্তারি মহলে।
(১৬)
রাত
রাতে অর্ণব নার্সিং হোমে শুয়ে ভাবছিল যে এখানে তার ঘুম আসবে কিনা! এখানে আসা অব্ধি সে মানসিক ও শারীরিকভাবে দুর্বলতা বোধ করছে। চিরকাল তার নার্সিং হোমে গেলে তাই-ই হয়। আস্তে আস্তে তার চোখের সামনের দৃশ্য বদলাতে লাগল। সে পৌঁছে গেছে এক যুদ্ধক্ষেত্রে। সে এক আঘাতপ্রাপ্ত সৈনিক। সে শুয়ে আছে মাটিতে। তার সারা শরীরে ধুলো লেগে। হঠাৎ, সে দেখছে যে তার দিকে রাইফেল তাক করে এগিয়ে আসছে অঙ্কিতা। তার সারা শরীর সেনার পোষাকে আবৃত। পাশ থেকে একে একে আবির্ভূত হচ্ছেন শুভাশিষবাবু, সুমনবাবু। তাদের প্রত্যেকের শরীরে সেনার পোষাক আর হাতে রাইফেল।
অর্ণব প্রচণ্ড ভয় পেয়ে ওদের জিজ্ঞেস করল “কী চাও তোমরা? কেন এসেছ?”
অঙ্কিতা রাইফেল তাক করা অবস্থাতেই বলল “আমরা আসিনি তো! এসেছিস তো তুই, আমাদের কাছে।“
সুমনবাবু পরিহাসের সুরে বললেন “কী মশাই, আজও আপনি সেই ব্যাপারটা বললেন না কিন্তু!”
শুভাশিষবাবু রাগতভাবে বললেন “সেদিন তো মশাই, খুব বিরক্ত হয়েছিলেন আমার উপর। মুখে না বললেও বুঝতে পারি মশাই।“
অর্ণব চোখদুটো হাত দিয়ে চেপে প্রায় চিৎকার করে বলতে লাগল “চলে যাও…চলে যাও। আমি কিছু করিনি, আমি কিছু জানি না।“ এমন সময় নার্স ছুটে এসে ওকে সামলায়, এবং ইতিমধ্যে ওর সব ইল্যুশন কেটে গেছে। হার্ট-বিট বেড়ে গেছে। এবং ডাক্তারকে ডাকতেই ডঃ দত্ত এসে হাজির। ব্যাপারটা কোনো মতে সামলে ওকে ওষুধ দিয়ে ঘুম পারানো হয়।
(১৭)
পরেরদিন সকালে সায়ক ও ইন্দ্র কথোপকথনরত
“দ্যাখ, ব্যাপারটা সিরিয়াস দিকেই এগোচ্ছে। আমরা, বলতে গেলে, অনেক তাড়াতাড়িই চিকিৎসার ডিসিশনটা নিয়েছি। এর চেয়ে দেরী হলে আরও বাড়াবাড়ি কিছু হত।“ বলল সায়ক।
“হ্যাঁ, তা ঠিক। কাল রাতের ঘটনাটা যা বললি…ব্যাপারটা বড্ড সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে।“
“দ্যাখ, চিকিৎসার ব্যবস্থা হচ্ছে। আজই করার চেষ্টা চলছে।“
“ফাইন।“
(১৮)
চিকিৎসা
অর্ণবকে শক দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান এবং কাতর স্বরে অর্ণব চ্যাঁচ্যাচ্ছে। কিন্তু সেই কাতর স্বর শুনে
কষ্ট পাওয়ার মতন কেউ নেই। যে ছিল, সে আজ বিবাহিতা এক নারী। অর্ণবের কথা ভাববার মতন
তার সত্যিই সময় নেই। সেদিন অর্ণব গেছিল অঙ্কিতার কাছে তার ভুল জানতে। দোতলার দিকে সিঁড়ি
বেয়ে উঠতে উঠতে অর্ণব ভেবেছিল যে, ও ওর ভুল ঠিকই শুধরে নেবে। অর্ণব যেতেই তাকে ঘরে
বসতে দিয়ে অঙ্কিতা চলে যায় ঘর থেকে। কাজের মেয়েটা চা দিয়ে যায়। সেদিন একা একা বসে
থাকতে থাকতে নিজেকে খুব উপেক্ষিত, মূল্যহীন মনে হচ্ছিল অর্ণবের। আগাগোড়া তারা একই সাথে
চা খেয়ে এসেছে। আজ একা একা খাচ্ছে। ও কি চা খেতে এসেছে এখানে? ও তো কথা বলতে চায়। হঠাৎ,
অঙ্কিতা ঘরে ঢুকে বসল চেয়ারটা টেনে। আজকে দারুণ লাগছে ওকে। কালো ড্রেসে ওকে বরাবর ভালো
লাগে। গজ দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা হাসিটা যেন ঠিক গ্রামবাংলার সৌন্দর্য। তবে আজ গম্ভীর মুখ। এটাও যদিও কম সুন্দর নয়। অঙ্কিতা সেদিন আবারও বলেছিল “তোর জানা উচিত, তোর ভুলটা। সব আমি বলে দিতে পারব না।“ তবে আগের মতো আজও অর্ণব বুঝল না যে তার কোন ভুলের কথা বলা হচ্ছে।
ইনফ্যাক্ট, তার বিশ্বাস যে সে কোনো ভুল করেনি।
শক প্রক্রিয়া শেষ হতেই সায়ক বেরোল ভিতর থেকে।
“দ্যাখ, আশা করি, ওকে কন্ট্রোল করা যাবে নিশ্চিত। তবে ওষুধগুলো ঠিক করে যদি কন্টিনিউ করে।“
ইন্দ্রকে আস্বস্ত করে বলল সায়ক।
“হুম। সেটাই ট্র্যাজেডি।“ বলল ইন্দ্র।
(১৯)
এক মাস পর
“এখন কেমন লাগছে?” অর্ণবকে ফোনে জিজ্ঞেস করল সায়ক।
অর্ণব হাতে কফির কাপ নিয়ে বলল “এখন ফ্রেশ অনুভব করছি।“
“আর হচ্ছে ওরকম?”
“হ্যাঁ। তবে কম পরিমাণে এবং কম ভয়ঙ্কর।“
“ফাইন। আচ্ছা, আপনি কিন্তু ওষুধটা কন্টিনিউ করবেন, যেরকম বলেছি।“
অর্ণব কফিতে একটা চুমুক দিয়ে বলল “অবশ্যই। একদম একদম।“
“আচ্ছা, কোনো অসুবিধা হলেই জাস্ট কল মি, ডোন্ট হেজিটেট।“
“আচ্ছা।“
“রাখছি তাহলে।“
“হুম।“
ফোন কেটে দেখল ইন্দ্র’র মিসড কল। এতক্ষণ ফোনে কথা বলার সময় অবশ্য ও টের পেয়েছিল যে
একটা কল ঢুকছে। অর্ণব ফোন করল ইন্দ্রকে।
“কী করিস? কার সাথে কথা বলছিলিস এতক্ষণ? আজব মাইরি!” ফোন ধরেই রেগে বলল ইন্দ্র।
“আরে সায়কবাবু’র সঙ্গে।“
“ও! আরে শোন না, টুবাইদা এসেছিলেন। আবার সেই পারটিতে যাওয়ার জন্য বলছিলেন। বলছেন যে
আমরাই যুব শক্তি, না এগোলে কি বিপ্লব হবে!“
“কী? কবে?”
“কাল রাতে। সারারাত মদ্যপান করলাম। লোকটা আগের মতোই রয়ে গেছে। তোকে খুব মিস করলাম।
“এখনো নেশা কাটেনি নাকি আজ নিউজ পেপার দেখে ইয়ার্কি মারছিস?”
“মানে? নিউজ পেপার? বুঝলাম না ভাই। কেসটা কী?”
“আরে কাল সন্ধেবেলায় রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে টুবাইদা খুন হয়েছেন। আজকে সব সংবাদমাধ্যমের ফ্রন্ট
পেজে খবর।“
“কী বলছিস কী? টুবাইদা তো আজ সকালে আমার বাড়ি থেকে গেল। এই জাস্ট গেল আর তোকে ফোন করে যাচ্ছি কন্সট্যান্ট। তুই তো ধরছিলিস না।
“মানে? তুই খবরের কাগজটা দ্যাখ একবার।
অর্ণব বলতেই ইন্দ্র খবরের কাগজ খুলে চমকে উঠল। ফ্রন্ট পেজে টুবাইদার ছবি আর হেডলাইন “রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে খুন কলকাতার টুবাই ঘোষ।” দেখেই প্রায় চমকে উঠল ইন্দ্র। হাত থেকে ফোন পড়ে গেল। ও বসে পড়ল সামনের চেয়ারে। এদিকে অর্ণব ফোনে উত্তেজিত ভাবেই “হ্যালো হ্যালো” বলতে লাগল, কিন্তু ইন্দ্র’র কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। ===================
সায়ন তরফদার (SAYAN TARAFDAR)
সোদপুর, উঃ ২৪ পরগণা, কলকাতা ৭০০১১৩, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত যুক্তরাষ্ট্র
যোগাযোগঃ 9123079092