মুকুটমণিপুর ভ্রমণ
সেখ নাসিবুল আলি
অফিস থেকে
তিনদিন ছুটি পাওয়া গেল। বান্ধবী ফারহানা ঠিক করল মুকুটমণিপুর বেড়াতে যাওয়া হবে। একগুয়েমি
জীবন যন্ত্রণা থেকে আনন্দ পাব। মুকুটমণিপুর তো বাঁকুড়া । আমাকে
লালমাটি পলাশ মহুয়া বেশি করে টানে। একটু আধটু লেখালেখি করি। তাই আমি
রাজি হয়ে গেলুম। আমরা মোট পাঁচ জন। তারা হল দীঘলগ্রামের ভূমিপুত্র
শ্রী তপনকুমার দে। তিনি একজন সম্পাদক ও প্রকৃতি প্রেমিক। বড়োজোড়া
কবি অশোক চট্টোপাধ্যায় । তিনি একজন নিরঙ্কারী মানুষ। নীল
অবসাদ, নীলাঞ্জনা কাছে নতজানু দুটি
কবিতার বই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী ফারহানা খাতুন।ফরসা লম্বা ধর্ম প্রাণা। আমি
আর আমার বোন আয়েশা খাতুন। গাড়ি ভাড়া করা হল। তরিৎগতিতে
গাড়ি ছুটছে।গাড়ির জানলার ফাঁক দিয়ে দেখি, কোথাও সবুজ আমবন, কোথাও বা
শেওলা ভরা পুকুর ঘাট। মাঝে মাঝে ফাঁকা মাঠ।ফুরফুরে বয়ে আসছে বাতাস।
সোনামুখীতে দাঁড়িয়ে সকালের নাস্তা করে নেওয়া হল।সঙ্গে ছিল লুচি
আলুর দম রসগোল্লা । এরপর বিষ্ণুপুর শহরের হাইরোড ধরে
- আবার গাড়ি ছুটতে লাগল। মাঝে মাঝে সাঁওতাল ,বাউরী ,বাগদি পল্লি দেখা গেল।তাদের ছোটো ছোটো মাটির ঘর। সকাল
দশটার সময় আমরা এসে পৌঁছুলাম মুকুটমণিপুরে।
উঠলাম হোটেল মালঞ্চে। মনোরম
পরিবেশ খুব সুন্দর থাকার জায়গা। দুপুর লাঞ্চ সেরে। একটু
বিশ্রাম করে নিলাম। আমরা বিকেলে মুসাফিরানা ভিউ পয়েন্ট দেখতে
গেলাম। একটি সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য । শুধু কেবল পাতার ফাঁকে ফাঁকে নরম রোদ এসে
মুসাফিরানা ভিউ পয়েন্টের ঘাসে ঘাসে পড়ছে। কাঁসাই নদীর জল বড়ো
নীল, আয়নার মতো অতি স্বচ্ছ। নীল আকাশের ছায়া; কী সুন্দর রোদ, যেন মহুয়ার মতো সকল
সময় অশোক বাবু আর
তপন বাবুর মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। নৌকা চলতে থাকে, হেলে দুলে আমি
জল ছুঁয়ে যায়। ফারহানা কাগজের নৌকা ভাসিয়েছে।
কংসাবতী আর কুমারী নদীর মিলন
স্থলে এলাম। গোধূলির সৃর্য অস্ত বড়ো মনোরম লাগে। কত ছোটো ছোটো টিয়া পাখি উড়ছে। এই
প্রসন্ন সন্ধ্যা নিবিড় শীতল বাতাস নির্জন দু নদীর মোহনায় যে
শোভা ফুটেছে তা ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করে না। হোটেলের দিকে ফিরে যেতে
রাত সাড়ে আটটা. আলপনা দেওয়া রাস্তায় হাটতে
বেশ ভালো লাগছিল। মাটির ভাঁড়ে গরম চা খেতে খেতে। এদিকে অশোক বাবু
জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন কবিতা আবৃত্তি করে।
আমরা সকলে শুনে মুগ্ধ হলাম। রাত দশটা ভাত ডাল পটল
ভাজি খাওয়া দাওয়া সেরে নিই।তারপর যে যার বিছানায় শুয়ে পড়ি। পরের দিন সকালে লেবু চা খেয়ে আবার বেড়িয়ে
পড়লাম।বনপুকুরিয়া হরিণ পার্ক। ফারহানা হরিণকে গাছের পাতা খাইয়ে
আনন্দ লাভ করে। অশোক বাবু সেলফি তুলে । বোন আয়েশা রাজহাঁস দেখে হাততালি দেয়। কত
কথা কত হাসি । আমরা পথে লাঞ্চ সেরে নিই । তারপর রানিবাঁধ দেখতে রওনা
হলাম। এখানে আমরা বিপদে মুখে পড়ি। একটি শঙ্খচূড় সাপকে মারলাম। তারপর
শুশুনিয়া পাহাড়ে চড়ার মজা এক অন্য রকম। বিকেলে আকাশ যেন আমাদের মাথার কাছে
নেমেছে। আমরা সন্ধ্যা নামতে নামতে ফিরে এলাম। মুকুটমণিপুরের মালঞ্চ
হোটেলে। রাতে খাওয়া দাওয়া করে নেওয়া হয়। ফারহানা
বলল- আমি সকালে আপনাদের কিছু উপহার দেব। যদি আমর ভালোবেসে নেন। আমরা
বললাম অবশ্য নেব। তৃতীয়
দিন সকালে আমরা ব্যাগ পত্র নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। হোটেলের সমস্ত কিছু টাকা
মিটিয়ে। আমরা ঠিক নিই।অম্বিকানগর আর ঝিলিমিলি ফরেষ্ট দেখে ফিরে
যাব।
অম্বিকানগর গ্ৰামে অবস্থিত
অম্বিকানগর মন্দিরে
অশোকবাবু আর তপনবাবু পৃজা দেন। আমরা অপেক্ষা করি। ঝিলিমিলি ফরেষ্ট ভিতর
প্রবেশ করি। পথের দু পাশে শাল মহুয়ার গাছ ডালে ডালে মাথা ঠেকে এক হয়ে
আছে। এই অভিনব দৃশ্য মনে যে আনন্দ দেয়, তার তুলনা নেই ।
হঠাৎ শোনা গেল আগুণের পরশমনি গান
গাইতে গাইতে চলে যাচ্ছে এক
সাঁওতাল যুবতী। তার মাথাতে কাঠের বোঝা। আমরা খুশি বারোশো টাকা দিলাম। সে আমাদের
বিনয় নম্র ব্যবহার আমাদের সকলকে মুগ্ধ করেছে। ফারহানা আমাদের ধূতি
পাঞ্জাবী উপহার দেয়। আমরাও সৌজন্যতা বোধে শাড়ি আর হিজাব দিলাম। আমাদের
গাড়ি চলল- বাড়ি ফিরার পথে মনের মধ্য চার দিকে বাতাসে যেন মহুয়ার ফুলের গন্ধ
মদিরতা সৃষ্টি করে আছে।
::::::::;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;;::::::::০::::::::::::::::::::::::::
গোপালপুর, পোঃ খাড়রা, থানা ইন্দাস।
জেলা- বাঁকুড়া।

