ছবিঋণ - ইন্টারনেট।
তানপুরার কথা
আরতি মিত্র
তানপুরাটা বাজছিল। ঠিক দশটা নাগাদ সপ্তাহের ঐ একটা দিন বাজে, সঙ্গে তবলা আর সুর তোলে অপর্ণাদি। কী ভীষণ ভালো লাগে!
আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনি, কতই বা বয়স তখন আমার, এই দশ কি এগারো হবে। আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন আমিও সুরে সুরে ভাসিয়ে নিয়ে যাবো সকলকে। তখন হাতপাখাই আমার তানপুরা। যা শুনি তাই গেয়ে ওঠে মন। পূজোর গানগুলি সব শেখা হয়ে যায়। কিন্তু তানপুরা আমার স্বপ্নই থেকে যায়। সময় তার নিজের নিয়মে এগিয়ে চলে। প্রকৃতির মতো জীবনে আসে বসন্তের ছোঁয়া, মধুকরের গুঞ্জন ঘুরে বেড়ায় ফুলের পাশে মধুর লোভে। প্রস্তাব আসে স্বপ্ন সার্থক করার। লুফে নেয় মন। যে পথে পা বাড়ায়, সে যে অন্ধকার পথ জানা ছিল না তার। যৌবনের আনন্দে বোঝে না মন।একদিন সর্বস্ব খুইয়ে এসে দাঁড়ায় ভাঙা মনের কোণে। হারিয়েছে সবটুকু বিশ্বাস সরলতার কারণে জীবন দুঃস্বপ্নের হয়ে ওঠে।
সেদিন স্বপ্নে ষোল বছরের একটা মেয়ে এসে বলে, কিরে চিনতে পারছিস আমায়?
- মুখটা চেনা চেনা লাগছে। কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছি না।
- সুমনা, ভুলে গেলি এর মধ্যে?
- কে সুমনা?
- সেই যে বেণী দুলিয়ে সহজ সরল মেয়েটা স্কুলে যেত, মনে পড়ে না?
- কি করে আর মনে পড়বে? সে তো কোথায় হারিয়ে গেছে। তার ম্লান স্মৃতি মাঝে মাঝে মনে পড়ে যায়।
- তারপর এখন কেমন আছিস বল?
- ভাল মন্দ ঠিক জানি না, তবে আছি।
- ষোল বছরের রূপ ধরে তুই আবার আমার কাছে এলি কেন?
- আছে, আছে। কারণ আছে বলেই তোকে দেখতে এসেছি।
- বেশ শুনি কি কারণ?
- একজন তোর কথা জানতে চায়।
- কে সে?
- তা জেনে আর কি হবে?
- তবু তুই বল শুনি।
- যে তোকে স্বপ্ন সার্থক করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, নষ্ট করেছিল।
- তার সাথে তোর পরিচয় হলো কি করে?
- সে যে ক্যানসারে ভুগে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। সে এখন তোর কথা ভাবে। মনে করে তার সেই পাপেই সে এখন এমন মৃত্যু যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছে যেমন তোকে কষ্ট দিয়েছিল সে'সময়।
শুনে মনটা আমার কেমন বিষণ্ণ হয়ে যায়। ভাবি তাকে তো আমি কোন অভিশাপ দিইনি, তার অপরাধের জন্য। তবে কি প্রকৃতি কাউকেই ক্ষমা করে না। তার ন্যায্য পাওনা মিটিয়ে দেয়।
তাই বোধহয় সে আজও তার কথা ভাবে।
কখন ঘুমটা ভেঙে গেছে। উধাও হয়ে গেছে স্বপ্নটাও। আমি কেমন ঘোরের মধ্যে বিষণ্ণ মনে বসে আছি বিছানার উপরে। তার কথা আজ খুব মনে পড়ছে কেন?
======================
Arati Mitra.
267/3 Nayabad. Garia.
Kol. 700094