অঙ্কিতা পাল
সেদিন রাতে ঝমঝম করে বৃষ্টি হচ্ছিল , গ্রামের বাড়িতে আমি একাই ছিলেম।বিদ্যুৎ বিভ্রাট চারিদিক শুনশান কোথাও কোন জন মানব নেই । আমার ইমারজেন্সি লাইট এরও চার্জ শেষ, রাত প্রায় এগারোটা বেজে গেছে তাই নৈশ্য ভোজন সেরে সবে বালিশে শরীরটা হেলিয়ে দিয়েছি । আর কখন যে চোখটা লেগে এসেছে জানি নে। হঠাৎ করেই আমার ঘরের কাঁচের জালনার পাশে দুম করে একটা শব্দ শোনা গেল, আমি তড়িঘড়ি করে লাফ মেরে উঠলেম ; মনে হল কেউ যেন আধলা ইট ছুড়ে মারলো জানলা দিয়ে । আমি ভয়ে ভয়ে একটি মোমবাতি জ্বালিবার চেষ্টা করছিলেম , কিন্তু জানলাটা খোলা থাকার জন্য বাতাসে সেটি নিভে গেল। মোবাইলে চার্জ নেই সেজন্য কোন আলো জ্বালাতে পারছি না। ভয়ও লাগছে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, এমন সময় মনে হলো কেউ যেন বাইরের দরজায় কড়া নাড়ছে ঠক ঠক ঠক ঠক। আমি কোন উত্তর দিলেম না, তড়িঘড়ি করে আবার মোমবাতি জ্বালানোর চেষ্টা করলেম সেটি আবারও বাতাসে নিভে গেল। আমি শংকিত মনে জানলাটা বন্ধ করতে যাব এমন সময় একটি বিড়াল ম্যাও ম্যাও করে ডাকতে শুরু করল প্রচন্ড ভয়ে হাত থেকে মোমবাতি ও দেশলাই পড়ে গেল তার সাথে ঝোড়ো হাওয়া শন শন শন শব্দ । আমি তত্তড়িয়ে আসতে গিয়ে, খাটের পায়ায় আমার পা কেটে গেল দরদর করে রক্ত পড়ছে কিন্তু অন্ধকারে কোন ওষুধ বা মলম খুঁজে পাচ্ছি না। যাই হোক খড়াতে খড়াতে আবার বিছানায় গাটা এলিয়ে দিলেম। এ রাম গা ছমছমে পরিবেশ এর আগে কখনো আমার জীবনে আসেনি , তাই ভয়ে ভয়ে ঠাকুরের নাম নিচ্ছিলেম - হে ভগবান আমায় বিপদ থেকে উদ্ধার করো। এদিকে পা থেকে রক্ত পড়ছে প্রচন্ড যন্ত্রণা ঘুম আসছে না। এবার তো আরো ভয় পেয়ে গেলাম, শিয়ালের ডাক হুক্কা হুয়া আর তার সাথে মজা পুকুরটা থেকে ব্যাঙের ঘ্যানর ঘ্যানর ধ্বনি ঝিঁঝিপোকার ঝিঝি শব্দ কানে ভেসে এলো। বাগানে রড় তাল গাছ টার খশ খশ শব্দ রাতের আধারে যেন ভয়ংকর শোনাচ্ছিল আমি তো ভয়ে জড়োসড় হয়ে খাটের এক কোনে বসে রইলেম। এভাবে বেশ অনেকক্ষণ কেটে গেল, এরপর প্রকৃতি কিছুটা ঠান্ডা হলে ; জানলা দিয়ে ম্লান চাঁদের আলোক রেখা দেখা গেল চাঁদের আলো আমার বিছানার এক কোনায় পড়েছে।
হঠাৎ করে চোখ পরল বাহিরে জানালার দিকে মনে হল যেন সাদা শাড়ি পড়া ঘোমটা দেওয়া এক মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে আমি হাউমাউ করে চিৎকার শুরু করলেম - কে কে ওখানে দাঁড়িয়ে আছে? যেন কোন নীরব উত্তর। আমার এবার মাথা ঘুরছে আর গা হাত পা ঠকঠক করে কাঁপছে মনে হচ্ছে এখুনি আমার হৃদপিণ্ড টা স্তব্ধ হয়ে যাবে। তারপর শঙ্কিত মনে ঠাকুরের নাম করতে করতে কখন যে ঘুম এসে গেল জানিনে।এভাবে কখন যে রাত কেটে ভোর হয়েছে , পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এবার চোখ মেলে দেখি জানলার পাশে ওটা সাদা কাপড় পরা কোন মহিলা বা ভূত নয়, জানালার পাশে বকুল গাছটা এমন ভাবে এমন ভাবে চাঁদের আলো পরেছিল যেন মনে হচ্ছিল কেউ যেন সাদা কাপড় মুড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
যাইহোক মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, আমি গ্রামের বাড়িতে কখনোই আর একা থাকবো না ,এ এক ভয়ঙ্কর অনুভূতি। ঠিক যেন এক নিরালা প্রহর ।
এবার স্টেশন থেকে সোজা ট্রেন ধরে কলকাতায় শ্যাম বাজারের যাবো বাড়িতে যাব।
===================
ভাঙ্গড়। দক্ষিণ ২৪ পরগনা।