বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন :

গল্প ।। শাটার ।। প্রতীক মিত্র

 
শাটার
প্রতীক মিত্র

     পবন তিওয়ারি। দাবী করে বয়স নব্বই। আশেপাশে দেশওয়ালি যেসব ভাইএরা থাকে তারা বলে, না অত না হলেও আশি ছুঁই ছুঁই। সালকিয়ার কারখানা পাড়ার সরু গলিতে থাকে।কোনোক্রমে। বাইরের জগতের সাথে একটা শাটারের ফারাক। সেটা নামিয়ে দিলেই ওর নিজের পৃথিবী। সেখানে শুধু সে আর অগুন্তি থরে থরে সাজানো খবরের কাগজ। ঘরটার আশি শতাংশ সেই কাগজেই ভরে।বাকিতে পবন তাউ সেটুকুর মধ্যেই খাওয়া-ঘুম সামলে নেয়। হালকা হওয়ার বেলা লোহার ফ্যাক্টরির মালিক হারু দত্তের দয়ায় একটা বাথরুম পায় প্রয়োজনের সময়। মালিক বাঙালি হোক পবনকে খুব সম্মান দেয়। একদল কাগজ ওর কাছে রেখে যায়।অন্য দল সেগুলোই আবার নিয়ে যায় ওই কাগজ থেকে অন্য জিনিস বানাবে বলে। রিসাইকেল না কি যেন বলে সেই।ওর মতন নাকি আরো দু'একজন ছিল যাদের কাজ ছিল এমন কাগজ জমানো, তারা নাকি বয়োঃজনিত কারণে আপাতত অসুস্থ।বাড়ি পবনের হাজারিবাগে। শরীরের কারণে সেও এখানে আটকে।  শেষ যে কবে গেছে নিজেই ভুলে গেছে।ছেলে-নাতি ঘুরে গেছে। কোলকাতাও দেখে নিয়েছে তাকে দেখতে আসার ছুতোয়। কয়েক পা হেঁটে গেলে এক বিরাট বাঙালি শেঠের বাড়ি। পবনের স্বভাবের কারণেই হবে, সেও ওকে খুব পছন্দ করে।ওর বিরাট বাড়ির গম্ভীর শ্যাওলা ধরা পাঁচিলের সামনে পেতে রাখা বেঞ্চে মাঝে মাঝে পবন যেত আড্ডা দিতে। শেঠও থাকতো। চা-বিস্কুট-ডাবের জল-বিড়ি চলতো। শেঠের নাকি শরীর ভালো নেই। খবর নিতে পবন একবার গিয়েছিল। শেঠের বাড়ির চাকর-বাকরই এমনভাবে বাঁকা চোখে তাকালো যে পবনের আর সাহস হয়নি শেঠের খবর নেবে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হওয়ার মুখে পবন থালায় ভাত নিয়ে বসে। হাঁড়ি চড়ে ভাত সেদ্ধ হতে এক একদিন দেরি হয়। গরমে শাটার ফেলে যেমন রাতে থাকা যায় না তেমনই শীতে শাটার খুলে। এই ঘিঞ্জি গলিতেও যে তাপমাত্রা এত নেমে যাবে কে ভেবেছে। শীতের ওই দু'একটা রাত ওকে হাজারিবাগের কথা মনে করায়। এখন বর্ষা। ব্যাঙের হিসেও রাস্তা ভেসে যায়।বর্ষায় ঝামেলা যত না ওর তার চেয়ে বেশি কাগজগুলোর। কাগজ ভিজে গেলে ব্যবসার সব চৌপাট। তবে এতগুলো বছর হল তো। কয়েক পা হেঁটে গেলে হারু দত্তের বাড়ি। সেই বাড়ি থেকে সিঁড়ি দিয়ে উঠে বাথরুম। সেখান থেকে হাওড়া ব্রীজ দেখা যায়। রাতে ঝলমল করে জ্বলে। সে ব্যাটা এত ঝড়-ঝাপটায় টিকে গেলে পবনও এই ঝামেলা থেকে ঠিক পার পাবে। পবন তিওয়ারি। সকলের প্রিয় তাউ জি সালকিয়ার কারখানা পাড়ার ঘিঞ্জি সরু গলিতে থাকে।কোনোক্রমে। দাবী করে বয়স নব্বই। যদিও আশেপাশে যারা ওকে চেনে তারা বলে আশি ছুঁই ছুঁই হবে। বর্ষাটা নিয়ে একটু বিরক্তই আছে। কাগজ বলে কথা। তবে আশা রাখে পার পেয়ে যাবে। কাগজগুলো। মৃত্যুচিন্তা নিয়ে ও কখনও ভাবিত নয়। বাইরের জগতের সাথে একটা তো শাটারের ফারাক!
=================

প্রতীক মিত্র।
কোন্নগর, পশ্চিমবঙ্গ।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.