অশোক দাশ
রামকমল বাবু পরোপকারী সজ্জন মানুষ।বয়স প্রায় সত্তর ছুঁই ছুঁই। বাড়িতে তার স্ত্রী লতাদেবী ছাড়া আছে সর্বক্ষণের সঙ্গী অক্ষয়। তাকে কাজের লোক বললে রামকমল বাবু দুঃখ পান। অক্ষয় তাদের জীবনে অসময়ের বন্ধু পরামর্শদাতা যা খুশি ভাবতে পারো।
তাদের একটি পুত্র সন্তান অরিন্দম। কর্মসূত্রে বিদেশে থাকে। বাবা-মাকে অর্থ পাঠানো, আর ফোনে বাক্যালাপ ছাড়া সে কোন কর্তব্যই পালন করে না। সেখানে সে তার সংসার নিয়েই ব্যস্ত। এতে রামকমল বাবুর কোন অভিযোগ নেই। তারা সুখে শান্তিতে থাকুক এটাই তার একমাত্র প্রার্থনা।
সেদিন অক্ষয় বাজার থেকে এসে বলছে, গিন্নিমা বাজারে ইলিশ আমদানি হয়েছে। বড় বড় পদ্মার ইলিশ ।আহা যেন রূপালী চাদর বিছিয়ে মাছের বাজার আলো করে আছে। কর্তা রামকমল বাবুর কানেও কথাটা গেল।
সেদিন ছিল শ্রাবণের প্রথম রবিবার। সকাল থেকেই আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেছে, ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। পূবালী হওয়ার ঝাপটা ঘরের জানালা ভিজিয়ে দিচ্ছে ।হঠাৎই রামকমল বাবুর মাথায় খেলে গেল এক মতলব।
অক্ষয় অক্ষয় বলে চিৎকার করতে লাগলে।
পড়ি মরি করে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো অক্ষয় - কর্তাবাবু আমায় ডাকছেন?
-হ্যাঁ ,আচ্ছা অক্ষয় আমাদের এই পাশের বস্তিতে কতজন মানুষ থাকে বলতে পারবি?
অক্ষয় মাথা চুলকোতে চুলকোতে বলে তা শত খানেক লোক হবে।
কর্তাবাবু অক্ষয়কে বলতে থাকে, এটা রিক্সা ডাক, আর কয়েকটা ব্যাগ নে, আমি আজ বাজারে যাব। আর যা বলছি শোন , রাঁধুনি ঠাকুর জনার্দনকে একটা ফোন লাগা, বলে দে আজ যেন এক্ষুনি তার লোকজন নিয়ে চলে আসে আমার বাড়ি। একশ লোকের রান্না করতে হবে।
রামকমল বাবু অক্ষয়কে নিয়ে বাজার ঘুরে ঘুরে তার মনের মতো বড় বড় কয়েকটা ইলিশ মাছ, অন্যান্য শাকসবজি কিনলো, বহুদিন পর বাজারে বিক্রেতারা ,পরিচিতরা রামকমল বাবুর সঙ্গে কুশল বিনিময় করল ।আনন্দে আত্মহারা হয়ে রামকমল বাবু ব্যাগ ভর্তি বাজার করে বাড়ি ফিরল। রামকমল বাবুর স্ত্রী কর্তার উৎসাহ দেখে বিস্ময় হতবাক।
ইতিমধ্যেই রাধুনী ঠাকুর জনার্দন তার দলবল নিয়ে হাজির। শুরু হলো রান্নার কাজ। ভাত, ডাল, ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে পুঁইশাকের ছ্যাঁচড়া, ভাজা ইলিশ, সরষে ইলিশ, ইলিশ মাছের ডিম দিয়ে চাটনি। সারা বাড়িটা ইলিশের গন্ধে ম ম করছে।
রান্না শেষে সমস্ত খাবার সামগ্রী ট্রলি বোঝাই করে ,রামকমল বাবু লতা দেবীকে নিয়ে হাজির বস্তিতে। ইতিমধ্যে বৃষ্টি থেমে গেছে। জোরে বৃষ্টি না হওয়ায় এলাকার মাটি তেমন ভিজে ওঠেনি, রাম কমল বাবুকে দেখে বস্তিবাসীর সকলে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। কারণ উনি মাঝে মধ্যেই বস্তিতে আসেন ,তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় সাহায্য করেন, কারো অসুখে-বিসুকে ওষুধ কিনে দেন। এরকম একজন পরোপকারী মানুষকে তারা দেবতার মত মান্য করে।
রামকমলবাবু বস্তির সকলকে তাদের এলাকার মধ্যে যে ফ্লাট সেন্টার আছে, সেখানে আসতে বলেন। সকলে হইহই করে একত্রে মিলিত হয়। সকলের জন্য বসার ব্যবস্থা করা হয়। খাবার পরিবেশন করা হয়। পরম তৃপ্তিতে সকলেই খেতে থাকে ।আহা ইলিশের ঘ্রাণে সারা বস্তি যেন মুহূর্তে জেগে উঠেছে।
মনে মনে রামকমল বাবু বলতে থাকেন একা খাওয়ার মধ্যে যে তৃপ্তি সকলকে খাওয়ানোয় তার আনন্দ তৃপ্তি দশ গুণ।
রামকমল বাবু পরম সুখে, মুখে আনন্দ হাসি নিয়ে বলে ওঠেন ,আজ সার্থক হলো ইলিশ উৎসব।
--------------------------------------
অশোক দাশ
ভোজান, রসপুর, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।