জীবনের অনেকটা পথ পেরিয়ে এখনো যেন নিজেকে একাকী শূন্য মনে হয়। অনেক কিছু চিন্তাভাবনা পরিকল্পনা সবকিছু অপূর্ণ থেকে গেল। ইচ্ছে অনিচ্ছা ঘাত প্রতিঘাত বিবিধ দ্বান্দ্বিকতায় অবচেতন মনটা যেন ক্ষতবিক্ষত। জীবন যুদ্ধে পরাজিত সৈনিকের মত কোন রকমে বেঁচে থাকা। রয়ে যায় ভবিষ্যতের দায়বদ্ধতা কর্ম সম্পাদনের অঙ্গীকার। তবুও প্রাত্যহিক জীবনের নানান প্রতিকূলতাকে সাঙ্গ করেই পড়াশোনাটা চালিয়ে গিয়েছিল আসাদ। প্রথম থেকেই তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ভালোভাবে পড়াশোনা করে শিক্ষক হয়ে শিক্ষাদানের মহৎ কাজটাকে চালিয়ে যাওয়া।যাইহোক স্কুল শিক্ষকতার পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ হয়ে নিজের যোগ্যতায় সে ইচ্ছা পূরণের চাকরিটা পেয়েছিল। ইতিমধ্যে শিক্ষকতার পেশায় পাঁচ বছরের মধ্যেই সে নিজেকে অনেকটাই ধাতস্থ করেছে। তা কারণ দারিদ্রতা কে সঙ্গ করেই সে প্রতিমুহূর্তে চাক্ষুষ করেছে কিভাবে প্রতিনিয়ত দরিদ্র দিন আনে দিন খাওয়া প্রান্তিক পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র নিদারুণ অভাব অনটন এই সমস্ত সুপ্ত প্রতিভার বিকাশটাকে দারুন ভাবে বিলীন করে দিচ্ছে। মাঝে মাঝেই আসাদ ভাবে সরকারের এত সুযোগ সুবিধা প্রকল্প পরিকল্পনা তবুও স্কুল ছুট শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে কেন? কিছুটা ভাবনার প্রসারতা গভীর চিন্তন ও অধ্যাবসায়ের ফলে সে উপলব্ধি করেছে কোভিডের অতিমারির পর থেকেই সাধারণ মানুষের রুজি রোজগার টান পড়াতেই সংসারের হাল ফেরাতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নেমে পড়েছে বিভিন্ন ছোটখাটো কাজে। পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে গেলে তাদের চাই অন্নের সংস্থান। ভাত কাপড়ের নিশ্চয়তা যদি না থাকে পেটে যদি খাবার না পরে তাহলে কি বিদ্যা লাভ হয়?
তবুও আসাদ ভাবতে থাকে কিভাবে এই সমস্ত পরিবারের স্কুল ছুট ছেলে মেয়েদের আবারো স্কুলের আঙিনায় নিয়ে আসা যায়? কেবলমাত্র পাঠান পাঠকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে যাদেরকে নিয়ে বিদ্যালয় যারাই আসল সম্পদ যারাই দেশের কান্ডারী
সেইসব ড্রপ আউট ছেলেমেয়েরা অচিরেই পড়াশোনার জগত থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। লেখাপড়াটা শুধুমাত্র বড় বড় ডিগ্রী চাকরি-বাকরিওয়ার জন্যই লেখাপড়া মানে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মানুষ হওয়া। আর মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। সেখানেই লেখাপড়ার প্রাসঙ্গিকতা।
শিক্ষকতা পেশাটা কে ভালোবেসে আসাদ ছাত্র-ছাত্রীদের অনেক কিছু শেখানোর জানার আগ্রহটাকে বাড়িয়ে দিতে তাদেরকে পড়াশোনা কে ভালবেসে সম্মুখে এগিয়ে নিয়ে যেত প্রত্যহ ভাবতে থাকে।
স্কুলের ছুটির পর সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যক্তিগতভাবে কুলছুট ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে গিয়ে তাদের অসুবিধা সমস্যাকে উপলব্ধি করে মানবিকতার সাথে পাশে থাকার বার্তা দিয়ে তাদেরকে স্কুল-মুখী করে তোলা।
এভাবেই সে রুটিন মাফিক একদিন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র রাকেশের টিনের বাড়িতে হাজির। সেখানে তার মাকে জিজ্ঞাসা করে- রাকেশ কেন স্কুল যাচ্ছেনা?
- মাস্টার মশাই বুঝতেই পারছেন গরিবের সংসার। তার বাবাকে সবজির দোকানে একটু হাত লাগাতে যেতে হয়। তাছাড়া তার বাবার শরীরটাও খুব একটা ভালো নেই।
- কাকিমা আপনার কথা ছবি আমি বুঝতে পারছি। জীবনে বড় হতে গেলে পড়াশোনাটা একটু দরকার।
আমার কথাটা একটু ভেবে দেখবেন।
রাকেশের বাড়ি থেকে ফিরে এসে সে আবার দিন দুয়েক পর রাসেলের বাড়িতে হাজির। সেখানেও একই প্রশ্নের সম্মুখীন। তবুও নিরাশার মাঝেই সে লেখাপড়ার আবশ্যিক বার্তাটা দিয়ে রাখল। হয়তো পরিস্থিতির অনুকূলতায় সাধারণ মানুষের দিন যাপনের স্বাভাবিকতায় ফিরে আসবে এইসব কুলছুট ছেলেমেয়েরা তাদের প্রিয় শিক্ষাঙ্গনে। শিক্ষক শিক্ষিকার নিবিড় সংস্পর্শে জানার আগ্রহের পূর্ণতায় শ্রেণীকক্ষ গুলো আবারো শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে গমগম করে উঠবে। মানুষ গড়ার কারিগর হয়ে সে আবারও শিক্ষাদানের মহান ব্রতে নিজেকে শামিল করবে। সেই সুদিনের অপেক্ষায় আশাদের মননটা তীব্র আন্দোলিত হয়। প্রত্যাশার আলোয় পরীক্ষায় খুঁজে বেড়াই লক্ষ্যে পৌঁছানোর রূপরেখা।
====================
রচনা -পাভেল আমান -হরিহরপাড়া- মুর্শিদাবাদ