পরিপ্রেক্ষিতে
প্রতীক মিত্র
পল্লব দু'দিন পড়াতে যেতে পারেনি। কোচিং সেন্টার থেকে অগুন্তি ফোন এসেছে। কোনোটা ধরেছে, কোনোটা ধরেনি। ধরেই বা লাভ কি।মিথ্যেই তো বলতে হবে। যদিও মজাটা হচ্ছে এইসব জায়গায় সত্যি চট করে লুকিয়ে রাখা যায় না। স্টেশন থেকে কোচিং --- কতটাই বা দুর?বাড়িতেও যেটা বলেছে, সেই কারণটাই অন্যদেরও বলেছে। জ্বর। ফলে বাড়ি থেকেও ফোন এসেছে একাধিক। মা স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত। দেবারতি নিজের কাজে ব্যস্ত। যেন কিছুই ঘটেনি। পল্লব নিজেও চেষ্টা করছে ছন্দে ফেরার। পারছে না। ব্যাপারটা যে বিয়ে। ওরা বিয়ে করে নিয়েছে। তারপর কি জানা নেই। দেবারতির বাড়ি থেকে বেশ ক'মাস ধরেই তাড়া দিচ্ছিল বিয়ে নিয়ে।ফলে ওদের উপায় ছিল না। পল্লবের তরফে দুজন আর দেবারতির তরফেও ক'জন বন্ধু ছিল সাক্ষী হিসেবে। দেবারতির বন্ধুরা ভালোই জানে এ বিয়ে তার বাড়ি থেকে মেনে নেবে না।ফলে যেদিনই জানাজানি হবে সেদিনই চরম ঝামেলা হবে। পল্লবের বন্ধুরা অত কিছু জানেনা।তারা এলাকার নয়। তারা এত প্যাঁচ-পয়জার জানবে কি করে?পল্লব ওদের বন্ধু। বেচারা বিপদে পড়েছে। তাই ওরা ভাবলো একটু উপকার করবে। ব্যস! পল্লব ভালো ছেলে। চাকরি আজ না হয় কাল পেয়েই যাবে। কোর্সটা শুধু শেষ হওয়ার অপেক্ষা। ওর দেশের বাড়ি ঘুরে এসেছে ওরা। যথেষ্ট অবস্থা সম্পন্ন। এখনই বললে ওকে আর দেবারতিকে ওর বাড়ির লোকেরা বিনা রোজগারেই বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে। পল্লবের বাড়ির আলাদা কোনো বাছ বিচার নেই। খালি শহুরে মেয়ে বলে তারা একটু কেমন কেমন চোখে দেখতে পারে এটাই যা চিন্তা। দেবারতি সাবলীল। বেশ সাবলীল যেন কিছুই ঘটেনি। পল্লব ছন্দে ফিরতে পারেনি। বিষয়টা ও তেমন কাউকে শেয়ার না করলেও সাক্ষী দেওয়া বন্ধুদের একজন দেখেছে পল্লব কেমন দ্বিধাগ্রস্ত ছিল সই করার আগে। দেবারতি পারে।আবেগকে লুকিয়ে রাখতে পারে।পল্লব পারেনা। গ্রামের ছেলে বলেই কি?অবশ্য এটা বন্ধুটার একান্তই নিজস্ব অভিমত। কেননা পল্লব নিজে এইসব বিভাজনে বিশ্বাসী নয়।তবে কি বয়স?বয়সটা দুজনেরই অল্প। দেবারতি নৈর্ব্যক্তিক থাকতে পেরেছে সেটা কি তার জোরালো মানসিকতা নাকি তার জেদ যে বাড়ির গোঁয়ার্তুমির কাছে সে হার মানবে না। একে অন্যের প্রতি ভালো লাগাটা একটা জল থইথই দিনে বাসে সেই যে শুরু হল সেটা যে ভালোবাসায় বদলে একদিন বিয়ের পরিণতি নেবে সেও বোধ হয় ভাবেনি। কিন্তু বিয়ে একবার যখন কাগজে-কলমে করে ফেলেছে আর পেছনে ঘুরে তাকানো নয়। ও জানে লোকে পল্লবকে ওর ব্যাপারে অনেক কিছু বলবে, বলেওছে। তবে পল্লব আর ওর বোঝাপড়া ওদের নিজস্ব বিষয়। ওর দায়িত্ব পল্লবকে নিতে হবে কেন ওরা দুজনেই একে অন্যের দায়িত্ব নেবে। বরং চাপ ওর বেশি। ওর বাড়ির শুধু গোঁয়ার্তুমি নয়, গোঁড়ামিও আছে। ব্যাপারটা যত জলদি পল্লব বোঝে তত ভালো। ও নিজের পড়া, পার্ট-টাইম কাজ, বাড়ি সব সামলেও পল্লবকে ফোন করেছিল।সে ধরেনি। মেসেজের রিপ্লাই দেয়নি। সশরীরে গিয়ে কথা বলতে হবে। সে নাকি কোচিং এও যায়নি। পল্লব আর যাই হোক ভীতু বা ভেজাল নয়। খালি সময় কাটানোর জন্য যদি এই সম্পর্ক তাহলে তার ইঙ্গিত ওর মধ্যে আগেই পাওয়া যেত। পল্লব নির্ঘাত একটু ঘাবড়ে গেছে। দেবারতি সব সামলে নেবে।সব।
====================
প্রতীক মিত্র
কোন্নগর-৭১২২৩৫, পশ্চিমবঙ্গ