তর্পণ
অশোক দাশ
শারদ আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। নদীর ধারে মেঠো আলে কাশ ফুলের মেলা ।আকাশে- বাতাসে ভাসে আগমনী সুর ।আর কদিন পরে শুরু হবে মহালয়া ।নদীবক্ষে ভোর থেকে শুরু হবে পিতৃ তর্পণ।
ভাস্করের মন আজ ভারাক্রান্ত, বিষন্নতায় ভরা। ভাস্করের মনে পড়ে আজ থেকে ঠিক এক বৎসর পূর্বে ,এই মহালয়ার পূন্য লগ্নে তাদের পিতৃদেব তাঁদের ছেড়ে, সংসারের মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে, ইহলোক ত্যাগ করেন।
বাবা ছিলেন এ সংসারের বটবৃক্ষ ।তারই সু- শীতল ছায়ায় আমাদের বেড়ে ওঠা। পূর্ণতা প্রাপ্তি ।সংসারের জন্য কি অমানুষিক পরিশ্রম না করেছেন!
মনে পড়ে প্রতিটা উৎসব অনুষ্ঠানে ,বাবা নিজে ছেঁড়া পোশাক পরে তালিমারা স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে, আমাদের সকলের জন্য নতুন জামা, জুতো কিনে দিতেন। সকলের হাসিমাখা মুখ দেখার জন্য। ওভারটাইম কাজ করে ,আমাদের পড়াশোনা, শখ, আহ্লাদ মেটাবার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন।
অতিরিক্ত পরিশ্রমে ভগ্নপ্রায় শরীরে অসুখ লুকিয়ে রেখেছেন ।কাউকে ঘুনাক্ষরে বুঝতে দেয়নি। কারো উপর কোন অভিমান অভিযোগ না করে নিরবে নিঃশব্দে চলে গেলেন পরপারে।
ভাস্কর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে তোমার জন্য কিছুই করতে পারেনি বাবা ,তুমি শুধু আমার পিতা ছিলে না, তুমি ছিলে প্রতিবেশীদেরও অভিভাবক বন্ধু সুজন। সকলের আপদে-বিপদে সামর্থ্য মতো তুমি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে কার্পণ্য করতে না।
তাই তোমার স্মরণে, প্রতিবছর এই মহালয়ার পবিত্র দিনে ,অনুষ্ঠিত হবে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি রূপায়ণ। এ আমার অঙ্গীকার ।তোমার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। তোমার ভালোবাসার মর্যাদা রাখতে এ আমার আন্তরিক পিতৃতর্পণ।
====================
অশোক দাশ
ভোজান, রসপুর, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।