আজকের নারী কি চায় ?
প্রকৃত নারীবাদ না বিকৃত নারীবাদ !
জয়শ্রী ব্যানার্জি
প্রকৃত নারীবাদ কি ? কি ভাবেন আজকের নারীরা তাঁদের নারীবাদী ভাবনা নিয়ে? পুরুষ তান্ত্রিক শাসনে নারী ক্লান্ত । সত্যি কথা ! চান মুক্ত হতে । সাহসী হতে ,ভালো কথা ! এতে একটুও অন্যায় নেই ।সত্যি সারা জীবন নিজের সমস্ত ইচ্ছা ভিতরে রেখে , নিজের সব কিছু বিসর্জন দিয়ে ,অন্যের মন খুশি রাখতে সারাজীবন রক্ত চক্ষুর সামনে নিজেকে যান্ত্রিক করে তুলতে নারীর কষ্টই হয় । কত প্রতিভা যে নষ্ট হয়ে যায় এই করে ! যেসব নারীরা এই সব অবস্থার মধ্যে গেছেন তাঁরা জানেন । সেখানে আওয়াজ তোলা দোষের কিছুই নেই ! কিন্তু আমার প্রশ্ন সেই সব নারীদের যারা সব কিছু সুবিধা পেয়ে এবং নিয়ে , ফেক একটা নারীবাদী ভাবনার মুখোশ পড়ে সমাজে ঘুরে বেড়ান ।
নারীবাদী সেই মেয়েরা /মহিলাও খুব সাহসী । পাবলিকের সামনে পোষাক খুলতে একটুও ভয় বা লজ্জা পান না । মুখে একটাই সংলাপ এদের সারাক্ষণ my body my choice . খুব ভালো ।কিন্তু সেটা যদি জোর জবরদস্তি ভাবে অন্য কে দেখতে বাধ্য করা হয় তো সেটা নারীবাদী ভাবনা বলা চলে কি? না অশ্লীলতা?
পুরুষ অমুক পুরুষ তমুক তো সেই পুরুষ দের কেই দরকার পড়ছে শরীর দেখানোর তো! পুরুষ না দেখতে না চায়লেও জোর করে দেখাতে হবেই হবে ।
তাতে সেই পুরুষ টি হোক অন্য কারো প্রেমিক ,অন্য কারো স্বামী । এই যে নারীরা নিজেই নিজেদের এত অশ্লীল রীলস,ভিডিও,ছবি ছাড়ছে আজকাল এগুলোর সাথে পর্ণ ছবির ছবির সামান্যই তফাৎ হয়তো । কেনো নারীর কি ক্ষমতা নেই পুরুষের সামনে নিজের বিদ্যা, বুদ্ধি, ব্যক্তিত্ব তুলে ধরতে ?
নারী ও বেদ লিখুন ,উপনিষদ লিখুন। পুজো করুন সমস্ত বিধি আচার মেনে । শুধু নিজের সাজের এর বিজ্ঞাপন দিয়ে রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে বিয়ে দেওয়া অনেকেই পারবেন । এক জন প্রকৃত ব্রাহ্মণ বা ব্রাহ্মনী হয়ে উঠুন তিনি । গণিতে হারিয়ে দিন তিনি পুরুষ দের । বিজ্ঞানের প্রসার ঘটান। আবিষ্কারে হৈ চৈ ফেলে দিন । এমন কিছু করুন যা মহিলাদের সামাজিক অবস্থান নিয়ে চিন্তা ভাবনা ও কাজ করতে শেখাবে । যা মহিলাদের প্রগতিতে সত্যিকারের সাহায্য করবে ।কল্যাণকর গঠন মূলক কাজ ।পাশাপাশি পুরুষ দের সাথে তাদের সম্পর্ক প্রতিযোগিতার না, সহযোগিতার হোক । অনেক মহিলাই করেন ভালো কাজ , এবং তাঁরা জানেন প্রকৃত নারীবাদ কি ? তাঁদের জন্য এই কথা গুলি না, তাঁদের জন্য অশেষ শ্রদ্ধা আমার ! যাঁরা নারী বাদ নিয়ে বড়ো বড়ো কথা বলে সাহসিকতা টা দেখায় শুধু পোশাকে ,স্বেচ্ছাচারিতায় ..নীতিবোধ হীনতায়..!
তাদের জন্য ।
নারী মাত্রেই দেবী এই যে কথাটা সেই কথার মর্যাদা নারী কি রাখছেন ? যে ভারত বর্ষে নারীর বস্ত্র হরণ এর জন্য মহাভারতের যুদ্ধই বেঁধে গেছিলো সেখানে আজ কি নির্লজ্জের মতো নিজেরাই নিজেদের সকলের সামনে উন্মোচন করছে এখন । নারী ও তো ট্রেনের কামরা তে তাড়াহুড়ো করে উঠে পড়া কোনো অসহায় পুরুষ কি ছেলে কে ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ভিকটিম কার্ড এর সুযোগ নিয়ে বহু নারী পুরুষের ওপরে মিথ্যা শ্লীলতাহানি বা রেপ কেস দেন । বহু নারী আছেন যত স্বামীর ওপরে চরম অত্যাচার চালান । ইচ্ছা করে অনেক তুচ্ছ কারণে ডিভোর্স নিয়ে বহু টাকা দাবি করেন। শুধু মাত্র টাকার লোভে।
কত পুরুষের সাথে প্রেমের অভিনয় করে তাঁর টাকায় বিলাসিতা করেন । অবশেষে সব পাওয়া হয়ে গেলে সেই পুরুষ টিকে ছেড়ে দিয়ে নতুন পুরুষ খোঁজেন ।
নারীও অন্যের বাচ্ছা কে হিংসা করেন ।এমন কি খুন অব্দি করেন এমন বহু ঘটনা আছে । নারী হয়েও নিজের পুত্র বধূর উপরে ,বা শাশুড়ি র উপরে অকথ্য অত্যাচার চালান । স্বভাবে অতি শয়তান এমন বহু নারীর সমাজে দেখা মেলে । সুতরাং নারী মাত্রই দেবী এই কথা টা একদম ভুল । আর পুরুষ মাত্রেই ধর্ষক সেটাও না ।
একদল পুরুষ নারীদের উৎসাহিত করেন , নারী যা খুশি পড়বে ওদের ইচ্ছা । যা খুশি পড়ুন কিন্তু তার মধ্যেও তো একটা শালীনতা থাকবে ,রুচি বোধ থাকবে ,স্থান কাল পাত্র থাকবে। তাঁরা সেটা মানেন কি ?
যে পুরুষ তাদের উৎসাহিত করেন তিনি বাজার চান। নিজের লালসা চরিতার্থ করতে চান । তাঁর পণ্য সামগ্রী বিক্রী করার জন্য পাত্র চায় । নারী সেই জলের মত যে পাত্রে রাখা হবে তার আকার ধারণ করে । ছোট থেকে তার মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় রূপ আসল ,শরীর আসল ।সেটাকেই সব সময় সাজিয়ে রাখতে হয় ,পুরুষ দেখে তৃপ্ত হবেন ।
নারীও তাই করতে শেখেন ।অথচ পুরুষ কে কিন্তু এ কথা শেখানো হয়না । তাঁরা করেন ও না । তাঁদের চিন্তা ভাবনা নারীদের তুলনায় উন্নত হয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে।সেখানে বেশির ভাগ নারী সাজ পোশাকেই সময় কাটিয়ে দেন ।এমনকি ডিগ্রি প্রাপ্ত ,ইনকাম করা অনেক মেয়েই আছেন যাঁরা সমাজের জন্য কোনোদিন কোনো কল্যাণ মূলক গঠন মূলক কোনো কাজেই অংশ নেন না শুধু সাইকো পেশেন্টের মতো সাজ পোশাক আর শুধুই নিজের স্বার্থ টুকু তেই মেতে থাকেন । এনারাই পুরুষ বিরোধী বেশি হন আবার এনারাই পুরুষ দের জন্য নিজেকে সাজিয়ে তোলেন অনাবরত।এবং পুরুষ যদি এনাদের তারিফ না করেন তো এনারা একধরনের মানসিক অসুখে ভোগেন ।
দুঃখের বিষয় একজন শিশু কি ছাত্র ছাত্রী যাঁদের প্রথম আদর্শ বলে দ্যাখে , সেই টিচার দের মধ্যেও সেম জিনিস দেখা যাচ্ছে আজকাল । কিছু মহিলা টিচার যত না পড়াশোনা শিখিয়ে ছাত্রীদের মধ্যে কোথায় উঁচু মানসিকতার ভাবনা নিয়ে আসবেন তা না করে নিজের ফ্যাশন স্টাইল তুলে ধরতে সদাই ব্যস্ত । ছাত্রীরা যদি তাদের টিচার কে সব সময় অতি আধুনিক ছোট পোশাকে আর সাজগোজে মেতে থাকতে দ্যাখেন ফেসবুকে, তো তাদের মানসিকতা ও সেই দিকেই এগোবে ।
এই অতি আধুনিক নারীরা নিজেদের মান সম্মান বিসর্জন দিয়ে নিজেদের পণ্য করেই রাখলো চিরকাল।
তার ওপরে আছে সিনেমার নায়িকা দের চূড়ান্ত অশ্লীলতা। অনেক নায়িকা কে বলতে শুনেছি তারা নাকি ডিরেক্টর দের হাতের পুতুল । সিনেমার প্রয়োজনে যা করার করেন ।বেশ কিন্তু সিনেমার বাইরে তাঁরা যেভাবে নিজেদের অতি অশ্লীলতার সাথে প্রদর্শন করেন তা কি সমাজ কে কলুষিত করে না ?
আধুনিকতার সংজ্ঞা কি অশ্লীলতা? নিজেকে আধুনিক ,বা নারীবাদী প্রমাণ করার জন্য কি পাবলিকের সামনে পোশাক খুলতে হবে? ছোট পোশাকে ঘুরতে হবে ? বোরখা আর বিকিনির মাঝেও ও অনেক সুন্দর শালীন ড্রেস থাকে ।
অতি নারীবাদী প্রমাণ এর জন্য পিরিয়ড ডেট জানাতে হবে? অন্তর্বাস ছুঁড়ে ফেলতে হবে?
পুরুষ আর নারী দুটি আলাদা প্রজাতি । এদের শরীর মন দুটোই আলাদা বৈশিষ্ট্যের। কর্ম , বিদ্যা তে এক হোক কিন্তু যা আলাদা সে টুকু তো মানতে হবে ।এমন কিছু জিনিস যা নারীকেই মানায় এমন কিছু জিনিস যা পুরুষ কেই মানায় । জোর করে সব হয়না । ভালো লাগে না সেগুলো। পুরুষ তো দিনরাত এত সাজে না । অশ্লীল ছোট পোশাকে ঘোরে না কই নারী সেটা তো দেখে না ,শেখে না । নারী বিদ্রোহ করে অন্তর্বাস না ফেলে দিয়ে, ফেলতে শিখুক যত মেকাপের সামগ্রী। অশ্লীলতা । ভিকটিম কার্ডের অপব্যবহার ।
বাজারে নিজেকে সাজানোর অনেক সামগ্রী পাওয়া যায় । সুন্দর পোশাক ঠিক মেকাপ তাকে কতটা সুন্দর আকর্ষণীয় করে তুলবে তার জন্য নারীর যত্ন আর চিন্তার শেষ নেই ।কিন্তু যা তার নিজের কাছে থাকে বিদ্যা বুদ্ধি ব্যক্তিত্ব ব্যবহার যা তাকে একজন প্রকৃত মানুষ কি প্রকৃত নারী করে তুলবে সেই ব্যাপারে কোনো উৎসাহ নেই তাদের ।
উলংগ রাজা কবিতায় যেমন বলা ছিল যে নাকি পাপী বা বুদ্ধি হীন সে রাজার কাপড় দেখতে পাবে না তেমনি এখন তেমন একটা কথা চালু আপনার মানসিকতা ঠিক করুন। আমি বলি মানসিকতা যথেষ্ট ভালো আছে ।আগে ,হে বুদ্ধিহীনা , নিজেকে পণ্য করে, অন লাইনের প্রস্টিটিউট করে তোলা অসভ্য ফেক নারী গণ তোমরা তোমাদের আচরণ ঠিক করো । প্রকৃত নারী হও। বিকৃত রুচির নারীতে পরিণত হয়ে যেও না । নিজেকে তৈরি করো আগামী দিনের জন্য ,নিজের বিদ্যা বুদ্ধি ব্যক্তিত্ব শক্তি দিয়ে পৃথিবী গড়ে তোলো । সেই আসল নারীবাদ।
-------------------------------------------------
পূর্ব বর্ধমান।