অণুগল্প ।। সাঙাত ।। চন্দন মিত্র
সাঙাত
চন্দন মিত্র
বৈশাখের মধ্যরাত। পার্কের পাঁচিলের বাইরে বৈদ্যুতিক খুঁটির তলায় ভ্যানের উপর শুয়ে বিড়ি টানছে সুরথ। চোলাইয়ের ঘোরের সঙ্গে নিকোটিনের সংগতে সে বেশ একটা ফুরফুরে ভাব পায়। মাসখানেক আগে লক্ষ্মী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। সেভেনে পড়তে পড়তে সুরথ ভ্যানের হ্যান্ডেল ধরেছিল। তার কয়েক বছর পরেই সে লক্ষ্মীকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। তার ভ্যানচালক শ্বশুর আপত্তি করেনি। ভালোই চলছিল। তারপর কোথা থেকে চলে এল টোটো নামের অদ্ভুত যান ; ছাউনি থাকায় রোদে-বৃষ্টিতে সমস্যা নেই, ভ্যানের মতো পায়ের জোরে চলে না, চলে বিদ্যুতের বলে। দেশে চাকরিবাকরি দুর্লভ হয়ে ওঠায় শিক্ষিত বেকারেরাও নিঃসংকোচে টোটোর হ্যান্ডেল ধরে সংসারধর্ম শুরু করে দিয়েছে। সুরথের মতো ভ্যানচালকদের কেউ কেউ টোটো চালানো শিখে পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। সুরথ পারেনি।
ভ্যানে শুয়ে সুরথ এইসব সাতপাঁচ ভাবতে থাকে। হঠাৎ পার্কের অন্ধকার কোণে তার চোখ চলে যায়। কী যেন নড়ে ওঠে অন্ধকারে। নেশার ঘোরে সে ঠিক বুঝতে পারে না। গা শিরশির করে ওঠে তার। শিরদাঁড়ায় একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে যায়। সে অন্য দিকে চোখও ঘোরাতে পারে না। সেই ছায়া মূর্তি হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে তার ভ্যানের দিকে। সুরথ আশ্বস্ত হয় ভূতপ্রেত অন্তত নয়। তবে কি বাঘ-ভালুক ? না তাও নয়। সেই চতুষ্পদ ভ্যানের কাছে এসে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে আছাড় খায়। সুরথ তাকে চিনতে পারে। বাবুদের মেজো ছেলে। মস্ত বড়ো অফিসার। মাসখানেক আগে তারও বউ পালিয়েছে। সুরথ জানে সে কথা। সে কোনোক্রমে ভ্যান থেকে নেমে তাকে তুলে ধরে। বিলিতি মদের গন্ধ নাকে আসায় সুরথ আমোদ পায়। বাবুর হাতে ধরা আধখাওয়া বোতলটি দেখে সে খুব পিপাসার্ত হয়ে পড়ে। তুলে ধরার উপহার হিসাবে মেজোবাবু বোতলটি সুরথের দিকে এগিয়ে দেয়।
===================== |
|