।। ওরা আসে ।।
সুমিত হালদার
রামভদ্র থাকতো মেদিনীপুরের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে। তার পুরো নাম রামভদ্র ঘোষ , বাড়িতে তার বৃদ্ধা মা, স্ত্রী এবং একটি পুত্র নিয়ে সংসার। রামভদ্রের বাবা মারা গেছে বহু দিন আগে । তাই অনেক অল্প বয়সেই তাকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে । প্রথমে অভাবের তাড়নায় গ্রামে দিন মজুরের কাজ করতে হতো তাকে কিন্তু গত এক মাস আগে ওর গ্রামেরই এক ভদ্রলোকের সুপারিশে ও কলকাতায় একটি নামি গুঁড়ো মশলার কোম্পানিতে কাজ পেয়েছে। ওর কাজটি ছিল বিভিন্ন মুদি দোকানে দোকানে ওদের কোম্পানির ট্রাকে করে মশলা ডেলিভারি করা। অর্থাৎ গাড়ির ড্রাইভারের সঙ্গে ও গিয়ে দোকানে দোকানে মশলার ব্যাগগুলি নামিয়ে দেওয়া। প্রথম প্রথম ওদের ডেলিভারি করতে বেশি সময় লাগতো না কারণ তখন গুঁড়ো মশলার চাহিদা ওতোটাও ছিলো না। কয়েকটা হাতে গোনা দোকানে ডেলিভারি দিতে হতো । কিন্তু রামভদ্রর চাপ বাড়লো তার কাজে ঢোকার ডেরমাস পর। এখন তাকে দিনে প্রায় ৩৫ টি দোকানে মশলা ডেলিভারি দিতে যেতে হয়। এখন ওর বাড়ি মানে ওর ভাড়া বাড়িতে ফিরতে প্রায় রাত ১০ টা বেজে যায়। আসতে আসতে যত দিন যেতে লাগলো চাপ আরো বাড়তে লাগলো আর তার সাথে সাথে রামের বেতনও বাড়তে লাগলো। রাম যখন প্রথম কাজে ঢোকে তখন ওর বেতন ছিল মাসে ৫০০ টাকা আর এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০০ টাকা। কাজে ঢোকার এই মাস পাঁচেক পর তবে ও একটু ছুটি নিয়ে নিজের গ্রামের বাড়িতে গেল কিন্তু বড়োবাবুর নির্দেশ তিন দিনের বেশি ছুটি দেওয়া যাবে না কারণ এখন কাজের প্রচুর চাপ । তাই ওগত্যা রামভদ্রকে তাড়াতাড়ি আবার কোলকাতায় ফিরতে হলো । বাড়ি থেকে ফেরার পর যেন তার কাজের চাপ আরো অনেকটা বেড়ে গেলো। এখন তারা মানে রামভদ্র এবং ড্রাইভার মাল ডেলিভারি করে বাড়ি ফেরে রাত প্রায় ১২ টার সময় । কিন্তু তার গ্রাম থেকে ফেরার আট দিন পর তার জীবনে একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো যা সে কখনও ভুলতে পারবেন না। সে দিন ছিলো শনিবার অন্য দিনের থেকে সেদিন ডেলিভারি দিতে আরো অনেক দেরি হয়ে গেলো। তখন রাত কটা হবে ওই ডেরটা কি দুটা, প্রতিদিনের মতো আজও ড্রাইভার ফুল স্পিড এ গাড়ি চালিয়ে আসছে। সারা দিনের এতো কাজের চাপে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল রাম, তাই ডাইভার এর পাশের সিটে একটু গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে আছে সে । আজ এতোটা দেরি হওয়ার একটি অন্যতম কারন হলো তাদেরকে আজ কলকাতা থেকে অনেক দূরে দূরে যেতে হয়েছিল। কারণ বর্তমানে শুধু কোলকাতা নয় তাদেরকে কলকাতার বাইরের দোকানও মাল ডেলিভারি করতে হচ্ছে। ওরা ফিরছে নর্থ কলকাতার হাইওয়ে ধরে। হঠাৎ একটু জড়োসর হয়ে সামের দিকে ঝুকে বসলো রামভদ্র। রাম দেখলো তাদের গাড়ি থেকে প্রায় কুড়ি ফুট দূরে একটি বড়ো পুকুরের পাশে একটি টাটাসুমো গাড়ি দাঁড় করিয়ে তার পাশে আট নটি কম বয়সী মানে উনিশ কুড়ি বছরের ছেলে মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যখন ওদের গাড়িটা ছেলে মেয়েগুলির প্রায় কাছে এলো তখন ওরা রামদের গাড়ির উদেশ্য করে হাত দেখিয়ে থামার জন্য অনুরোধ করলো। রামভদ্র ড্রাইভার কে একবার জীঙ্গেস করলো যে "ওরা কারা, এতো রাতে এই ভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে কেনো, ওরা কোনো চোর ডাকাত বা ছিন্তাই বাজ নয় তো"..?? ড্রাইভার তার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়েই ওই ছেলে মেয়েগুলির কাছে গিয়ে কয়েক সেকেন্ড গাড়িটা থামালো কিন্তু ছেলে মেয়েগুলির সাথে কোনো কথা হলো না। ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে গাড়ির পিছনের খালি মশলা রাখার ফাঁকা ডিক্কিতে উঠে পড়লো। রামভদ্রর মনে মনে খুব ভয় হতে লাগলো। সে বার বার সিটের পিছনে যে ছোট্ট কাঁচ টা থাকে সেটা দিয়ে পিছনের ছেলে মেয়ে গুলিকে লক্ষ্য লাগলো কিন্তু ড্রাইভারকে আর প্রশ্ন করে ব্যতিব্যাস্ত করলো না। গাড়ি তো দুরন্ত গতিতে ছুটছে। হঠাৎ একটা খোনা গলায় নাকি সুরে কিছু কথা রামভদ্র পিছন থেকে শুনতে পেলো। একটি ছেলে যেনো বলে উঠলো " কিঁরে এবার নামবিতো সব..??" কিন্তু ওরা ড্রাইভারকে গাড়ি থামোর বিষয়ে কোনো কিছু বললো না । রামভদ্র আর একবার পিছনের দিকে তাকালো কিন্তু এবার সে যা দেখলো তা তার সারা জীবন ভুলতে পারবে না । সে দেখলো পিছনে যেখানে কিছু ছেলে মেয়ে বসে কিছুক্ষণ আগে গল্প করছিলো সেখানে আছে এখন নটি নর কঙ্কাল , তাদের চোখ লাল ভাঁটার মতো জ্বলছে। এই দৃশ্য দেখে রাম তাড়াতাড়ি আবার সামনের দিকে ফিরে বসলো। সে এমনিতে সাহসী মানুষ কিন্তু এই রকম দৃশ্য সে এর আগে কোনো দিন দেখেনি। পরমূহুতেই সে বুঝতে পারলো যে পিছনের গুঞ্জনটা যেন হটাৎ করে থেমে গেছে। সে মনের মধ্যে আর বাইরে সাহস নিয়ে আর একবার পিছনের দিকে তাকালো কিন্তু এবার সে পিছনে আর কাউকেই দেখতে পেলো না। ড্রাইভার এতোক্ষণ পর নিজে থেকে সব ঘটনা খুলে বলতে লাগলো। এই ড্রাইভারের নাম হলো শ্যামসুন্দর বোনোয়ালি ,প্রায় ৫ বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছে, রামের অনেক আগে থেকেই ও এই কোম্পানিতে কাজ করছে । এবং এর আগে যখন শ্যামসুন্দর অন্য কোম্পানিতে কাজ করতো তখনও অনেক বার নাকি ওকে রাত করে ফিরতে হয়েছে আর তাই ওই রকম অনেক দৃশ্য ও অনেক বারই দেখেছে । আসলে যারা আজ গাড়ি তে উঠেছিল তারা নাকি প্রায় ৬ বছর আগে একটি রাতে কোনো এক জায়গা থেকে পিকনিক করে ফিরছিল আর ওই ছেলে মেয়ে গুল নাকি সেদিন খুব নেশাভান করেছিল তাই ওদের গাড়িটি নাকি ওই বড়ো পুকুরটিতে পড়ে যায় । ওদের অতিরিক্ত নেশার কারণে আর সাঁতার না জানার ফলে ওরা আর পুকুর থেকে উঠতে পারেনি সেদিন । সকালে পুলিশ অনেক খোঁজাখুঁজির পর নাকি ওদের দেহ ওখান থেকে খুঁজে পায় ততোখনে ওরা আর কেউই বেঁচে নেই। আর এই ঘটনাটার পর থেকেই নাকি "ওরা আসে" মানে ওরা মাঝে মাঝে ওই পুকুরের পাশে ঠিক ওই ভাবে মানে যেমন ভাবে আজ দাঁড়িয়ে ছিল তেমন ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে আর কোনো ফাঁকা গাড়ি পেলেই উঠে পরে তবে যদি কোনো গাড়ির ড্রাইভার যদি গাড়ি না থামিয়ে ওদেরকে গাড়িতে না তোলে তাহলে ওরা সেই ড্রাইভার কে মেরে দেয় আর যদি কেউ গাড়িতে তোলাট জন্য গাড়ি থামায় তাহলে ওরা গাড়িতে উঠে পড় আর নিজেদের গন্তব্যস্তলে নেমে পরে কিন্তু গাড়ির ড্রাইভার বা অন্য কারোর ক্ষতি করে না।
নাম:-সুমিত হালদারথানা:- ঢোলকহাট
পিন:-৭৪৩৩৪৮
জেলা:- দক্ষিণ ২৪ পরগনা
মোবাইল নাম্বার: -8392063380