গল্প ।। মনের গহনে ।। শংকর ব্রহ্ম
ছবিঋণ - ইন্টারনেট।
মনের গহনে
শংকর ব্রহ্ম
সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, ডগি (আমাদের প্রিয় পোষা কুকুর) মানুষের স্বরে কথা বলছে।
-- দাদাবাবু, কে এসে একজন তোমাকে ডাকছে যেন ।
বিছানা ছেড়ে বাইরে এসে দেখি, সমীরণ বাবু ( বেদব্যাস সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ) -- আপনার গল্পটা দিন।
-- লেখা হয়নি ভাই, হলেই পাঠিয়ে দেব।
-- হয়নি কেন, আপনার জন্য প্রেসে দিতে পারছি না কপি।
-- তোমার বৌদি পিত্রালয়ে গেছে, তার পিতা খুব অসুস্থ , তাই লিখতে •••
-- বাপ্ রে, এই বয়সেও বৌদি ছাড়া চলে না দেখছি। সমীরণ বাবু ঠোঁট টিপে, মুচকি হাসলেন।
-- না মানে, তা নয় ঠিক। নিজের হাতে সব কিছু করে নিতে হচ্ছে তো। আমি কৈফিয়তের সুরে বলি।
-- তাড়াতাড়ি পাঠাবেন।
সমীরণ বাবু চলে গেলেন রহস্যময় হাসি হেসে।
সমীরণ বাবু চলে যেতেই ডগি এসে আমাকে বলে, লোকটা ভাল না দাদাবাবু। জানো, লোকটা পাজি বদমাইশ একটা।
-- কেন রে ?
-- তুমি যেদিন ছিলে না, সেদিনও এসেছিল লোকটা।
-- তাতে কি হল ?
-- বৌদিমণির কান ভারী করছিল। বলছিল, (তোমার সম্পর্কে ) এমন অপদার্থ লোককে নিয়ে যে কিভাবে আপনি সংসার করছেন বৌদি, জানি না ?
শুনে আমি হাসলাম।
-- তোমায় হাসি দেখলে, আমার পিত্তি জ্বলে যায়। আর হেসো না তো অমন দাঁত বের করে।
হাসলে আমার সামনের আক্কেল দাঁতটা বেরিয়ে পড়ে ঠিকই। আমি ওর কথা শুনে ঠোঁট বুজে, দাঁত ঢাকলাম।
-- লোকটার দৃষ্টিও কু, বৌদিমণিকে যেন চোখ দুটো দিয়ে চাটছিল।
-- কি যে বলিস, উনি খুব ভদ্রলোক মানুষ।
-- ভদ্রলোক না ছাই।
কেকা আমার বউ। সত্যিই রূপবতী বলা চলে ওকে। বয়স এখন প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি। মধ্য যৌবন, ভরা বসন্ত শরীরে খেলে বেড়ায়, দেখবার মতোই চেহারা বটে এখনও ওর ।
চোখ দুটি সত্যিকারের পটল চেরা, মাথা ভর্তি কোঁকড়া কালো চুল, মাঝে দু-একটি রূপলী রেশমসূতো, গায়ের রং দুধে-আলতা। বুক দু'টি ভারি, আনত। একবার ওর দিকে তাকালে, সত্যিই অন্য কোন চোখ দিকে ফেরানো দায় হয়ে ওঠে, এটা মিথ্যে নয়। হয়তো সেভাবেই সমীরণ বাবুর চোখ আটকে গিয়েছিল কেকার দিকে।
-- শুয়ে শুয়ে আর স্বপ্ন দেখতে হবে না, এবার উঠে পড়। অনেক কাজ পড়ে আছে, ডগি বলল।
ঘুমটা ভেঙে গেল। ঘুম ভেঙে যাওয়ায় দেখি, ডগি মশারীর ভিতরে মাথা ঢুকিয়ে, আমার ঘুম ভাঙাবার জন্য গাল চাটছে। তা দেখে আমিও ডগিকে আদর করে, বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম।
পরের সপ্তাহে যথারীতি সমীরণ বাবু তার বেদব্যাস সাহিত্য পত্রিকার জন্য আমার লেখাটা নিতে এলেন। তাকে ড্রয়িংরুমে বসিয়ে, ভিতরে গিয়ে কেকাকে দু'কাপ চা করতে বললাম। কেকার বাবা একটু সুস্থ থাকায়, সে পরশু বাড়ি ফিরে এসেছে।
আমি আমার লেখাটা ফাইল থেকে বের করে এনে, সমীরণ বাবুর হাতে দিলাম। তিনি লেখাটা তার ঝোলা ব্যাগে ভরে নিয়ে, একটু রসিকতার সুরে বললেন, বৌদি ঘরে ফিরেছে তাহলে?
আমিও হেসে বললাম, হ্যাঁ। আপনি একটু বসুন, চা করতে বলেছি তাকে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই কেকা দু'কাপ চা হাতে নিয়ে ড্রয়িংরুমে এসে ঢুকল। সেন্টার টেবিলে চা রাখতে গিয়ে তার বুকের উপর থেকে কাপড়টা পড়ে যাচ্ছিল, সেটাকে অদ্ভুত কায়দায় কনুই দিয়ে চেপে, সেন্ট্রার টেবিলে চা দু'কাপ রাখল সে। তারপর ফিরে যাচ্ছিল কেকা রান্নাঘরে, তাই দেখে, সমীরণ বাবু কেকাকে বলল, বৌদি আপনার বাবা কেমন আছেন এখন?
একটু ভাল আছে, বলল কেকা।
চিন্তা করবেন না, সুস্থ হয়ে যাবেন তিনি।
শুনে একটু মলিন হেসে কেকা চলে গেল ড্রয়িংরুম ছেড়ে।
চা শেষ করে সমীরণ বাবু উঠলেন। সেই সময় কেকা কাপ-ডিস নিতে ড্রয়িংরুমে আবার এলো।
সমীরণ বাবু তাকে দেখে বলল, বৌদি, চ-টা যা খেলাম না, অমৃত যেন। কারও হাতের এমন চা খাইনি কখনও।
কেকা তা শুনে লাজুক ভঙ্গীতে বলল, যাহ্, কী যে বলেন?
সত্যি বলছি বৌদি। বলে সমীরণ বাবু চলে গেলেন সেদিন মতো।
পিসিমার অসুস্থতার খবর শুনে, আমি সেদিন অফিস থেকে ঘন্টাখানেক আগে বেবিয়ে, পিসিমাকে দেখতে গেছি হুগলীর শ্রীরামপুরে। অফিসে বের হবার সময় কেকাকে বলে গেছিলাম, আজ পিসিমাকে একবার দেখতে যাব, বাড়ি ফিরতে রাত হবে। কেকা শুনে বলেছিল, আচ্ছা, সাবধানে যেয়ো। আমি হেসে বলেছিলাম, তুমি অতো চিন্তা কোরো না তো, আমি সাবধানেই যাব। তুমি সাবধানে থেকো, বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে ছিলাম।
রাতে বাড়ি ফিরে এসে দেখি, কেকা গম্ভীর মুখে সোফায় বসে আছে বিষন্নভাবে। হাতের ব্যাগটা টেবিলে রেখে, আমি তাকে বললাম, কী হয়েছে, এভাবে বসে আছো কেন?
কেকা মাথা তুলে এবার আমার মুখের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, আজ সন্ধ্যায় সমীরণ বাবু এসেছিলেন। তোমায় খুঁজলেন, আমি বললাম, উনি তো বাড়িতে নেই।
সমীরণ বাবু বললেন, ফিরবেন তো? আমি একটু বসে যাই তাহলে।
আমি বললাম, ওনার ফিরতে আজ রাত হবে।
শুনে তিনি হেসে বললেন, তবে আজ কী আমার অমৃত স্বাদ মিটবে না?
আমি ভাবলাম, উনি চায়ের কথা বলছেন। তোমার বন্ধু বলে কথা, এক কাপ চা খেতে চাইছেন, না বলে ফিরিয়ে দেওয়াটা অসৌজন্য হবে ভেবে, আমিও হেসে ওনাকে ভিতরে এসে বসবার কথা বললাম। উনি ভিতরে ঢুকে বসে ব্যাগটা টেবিলে রাখলেন। আমি বললাম, আপনি একটু বসুন, আমি চা বানিয়ে আনি। আমি রান্না ঘরের দিকে যাব এমন সময় উনি সোফা থেকে উঠে আমার আচল ধরে নিজের দিকে আকর্ষণ করে হেসে বললেন, সে অমৃত নয়।
উল্টো দিকের সোফায় ডগি বসেছিল। ও তৎক্ষণাৎ সমীরণ বাবুর উপর ঝাপিয়ে পড়ে, মুখটা কামড়ে ধরল। সমীরণ বাবু কোন রকমে ডগিকে ছাড়িয়ে ব্যাগটা টেবিল থেকে তুলে নিয়ে, ঘর থেকে ছুটে পালালেন। ডগির চোখ মুখ দেখে তখন বোঝা যাচ্ছিল যে, সে এতটা রেগে গেছে যে সমীরণ বাবু না পালালে, তাকে আজ ছিন্নভিন্নি করে ফেলতো। কী কান্ড হতো তাহলে বলো তো?
শুনে আমি বললাম, ডগি যা করেছে, ঠিকই করেছে। আমি হলেও তাই করতাম।
কেকা এবার কান্নায় ভেঙে পড়ে, আমার বুকে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমি তাকে নিবিড় ভাবে বুকে চেপে ধরে,আদর করে, মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম।
----------------------------------------------------------------
SANKAR BRAHMA.
8/1, ASHUTOSH PALLY,
P.O. - GARIA,
Kolkata - 700 084.
PHONE NUMBER - 98306 36623 (Whats App).
----------------------------------------------------------------