বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন :

অণুগল্প।। বন্ধন ।। অশোক দাশ

                                                                 ছবিঋণ - ইন্টারনেট

বন্ধন

অশোক দাশ

 

'ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা,
যমের   দুয়ারে   পড়লো   কাঁটা।
যমুনা    দেয় ‌‌   যমকে     ফোঁটা ,
আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা'।
 
 -------পুরান কথিত যমরাজ কাত্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে বোন যমুনার বাড়িতে আশায়, বোন পঞ্চ ব্যঞ্জন রন্ধন করে খাওয়ায়। যমরাজ বোনের হাতের রান্না পরম তৃপ্তিতে খেয়ে বোনকে আশীর্বাদ করে বলেন, যে ভাই এই দিন বোনের বাড়ি গিয়ে বোনের হাতের রান্না খেয়ে আসবে, তার অকাল মৃত্যুর ভয় কেটে যাবে।
  কোন কোন পৌরাণিক কাহিনিকার বলে থাকেন, ভগবান কৃষ্ণ নরকাসুর দৈত্য বধ করে , এই দিন তার বোন সুভদ্রার কাছে আসেন । সেই সময়ে কৃষ্ণের বোন সুভদ্রা ভাইয়ের কপালে টিকা বা ফোঁটা দিয়ে ভাইকে মিষ্টি খাইয়ে, তার গৃহে স্বাগত জানায়। সেই থেকেই চলে আসছে এই ভাই ফোঁটা উৎসব।
    পুরান যাই বলুক, ইতিহাসে যাই ঘটুক ,  বাস্তবে ভাই- বোনের অটুট বন্ধনের , অকৃত্রিম ভালবাসার, মিলনের মধুর পবিত্র উৎসব।

   এই গল্পে নিভা আর নির্মল কোলের পিঠে ভাই বোন। একসাথে বেড়ে ওঠা ।মান- অভিমান, ঝগড়া খুনসুটি, খাবার ভাগ করে খাওয়া , স্কুল কলেজ পড়াশোনা সব সবকিছু। একে অপরকে ছেড়ে তারা থাকতে পারে না। একের দুঃখে অপরে কাঁদে, একের আনন্দে অন্যজন আনন্দে মাতে। প্রতিবছর নিভা দেবী ভাইকে ভাইফোঁটা দেয়, উপহার তুলে দেয়, নিজে হাতে রান্না করে খাওয়ায়। এই একটা দিনই ভাই নির্মল দিদির পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে। নিভা দেবী তাকে জড়িয়ে  স্নেহ আদরে ভরিয়ে দেয়।
    হঠাৎই একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে আনন্দের হাটে বিষাদের কালো ছায়া নেমে আসে। নিভাদেবী তারি কলেজের একজন সহপাঠীকে ভালবেসে ফেলে। সব কিছু জানাজানির পর নিভা দেবীর রক্ষণশীল রাসভারী পিতা তাকে ঘরে আটকে রাখে এবং ওই ছেলেটির সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার আদেশ দেন।
    ভালোবাসার মর্যাদা রাখতে নিভা দেবী ভাই নির্মলের সহায়তায়, বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে, তার ভালোবাসার মানুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, এবং ঘর বাঁধে।
    একথা শোনার পর নিভা দেবীর পিতা চিরকালের জন্য তার বাড়ির দরজা বন্ধ করে দেন। এবং মেয়ের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এছাড়াও বাড়ির সকলের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি করিয়ে নেন, যে নিভার সঙ্গে  সম্পর্ক রাখবে, তার সঙ্গেও এ বাড়ির কোন সম্পর্ক থাকবে না।
   তারপর থেকে প্রতিবছর নির্মল লুকিয়ে তার দিদির বাড়ি যায় ভাইফোঁটা নিতে। নির্মল যে দিদি ছাড়া বাঁচতে পারে না। দিদিও ভাইকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে মন চায় না।
     কেটে গেছে চল্লিশ বছর। ভাই নির্মল অষ্ট আর্থারাইটিসে আক্রান্ত। চলার শক্তি নেই। দিদি নিভা দেবীর ও চুলে ধরেছে পাক চোখে কম দেখেন। এই অশক্ত শরীরে নিভা দেবী ভাইফোঁটার দিন ভাই নির্মলকে ফোঁটা দেবার জন্য তাঁদের জানালার বাইরে এসে দাঁড়ায়। নির্মল ও জানালার গরাদ ধরে বসে পড়েন। দিদি নিভা দেবী বুকের ব্যথা,চোখের জলকে সংবরণ করে হাসিমুখে ভাইয়ের কপালে এঁকে দেয়‌ ভালোবাসার রক্ত তিলক। মনে মনে বলতে থাকে 'ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা যমের দুয়ারে পড়লো কাঁটা '।
---------------------------

অশোক দাশ
ভোজান, রসপুর, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.