দিনে হলুদ দুর্গা রাতে কেলে কালী
প্রদীপ কুমার দে
ঘুমিয়েও শান্তি নেই। হালার বউ দিনেরাতে, গ্যাজ গ্যাজ করেই চলেছে। শোবার সাথে সাথেই চিৎকারে বাড়ি মাত করে দেয়। রাতেও এত জোরে গালি পাড়ে যে ছাদে পেঁচারাও বসতে ভয় পায়। আশেপাশের ফ্ল্যাটের ঘরের জানালা দরজা খোলার আওয়াজ আসে, উৎসুক প্রতিবেশীদের এক বুক প্রার্থনা জারি হয়, লড়াইটা যেন জমে যায়। বউ নাচার,
-- পেয়েছো আমার মত বউ তাই খাটিয়ে নিচ্ছো, না হলে এই কুলাঙ্গার বংশে কেউ সাধে আসে?
অনেকটা সময়েই চুপ থাকি। আমাদের শিক্ষিত ভদ্র বংশের কথা ও জানে না, বরং ওই অভদ্র পরিবার থেকে উদয় হয়েছে ও তা জানে। ওর কাকা ওকে গোচাতে আমার কাকাকে ভুলভাল বলে রাজী করায়। কাকা বাবাকে, বাবা মাকে আর শেষে মা আমাকে মেয়ের নামে ভালো কথা শোনায়। বউ পাচ্ছি ভেবে ফুলশয্যার রাতেই নতুন বউয়ের মুখশ্রী আর চেহারা দেখেই বুঝে ফেলি সব, ঠকে গেছি, দেখি চালু বাজার ফেরত নকল সোনা।
-- রাতে একটু আস্তে কথা বলো না .....
-- কেন? আমি কি তোমায় সোহাগ বিলাচ্ছি? বেহায়া স্বামীকে শায়েস্তা করছি! সবাই শুনুক জানুক।
-- একেবারেই দাজ্জাল মা...
-- কি বললি বেজন্মার বাচ্ছা? আমি দজ্জাল মাগী? তোর মা ছিল দজ্জাল, তোর বাপের রক্ষিতা।
-- আর সেই আমিই ভুল করেছিলাম বলেই তুমি এই ঘরের বউ, এটা মনে রেখো।
বউয়ের হাত থেকে ছুটে আসা সাঁড়াশিটা সজোরে কপালে লাগতেই আমি চিৎপটাং,
-- বাপরে, গেলুম,
-- ঘাটে যা মিনসে, চুলোয় ওঠ গিয়ে ....
জ্ঞান হারা। চোখ মেলা দায়! শরীর নড়ে না আসলে কিছু নাই,
-- আমি কোথায়?
-- যমালয়ে,
-- তুমি কে?
-- আমি যম। তুই মারা গেছিস, খুন হয়ে।
-- বাঁচলুম।
যমের মুখ বেঁকে গেল। কালো লোমে ভরা সারা গা নাচিয়ে বড় বড় চোখে তাকালো আমার দিকে,
-- তোর কপাল খারাপ। অসময়ে এলি, স্বর্গ পেলি না তোর এখনও অনেক কাজ বাকি তাই আমার এখানেই তোকে আমার চ্যালা চামুন্ডার সাথে থাকতে হবে।
যাক তাও ভালো। বউয়ের মুখ দেখনের চেয়ে কুৎসিত যমের মুখ দেখা যে বড় ভালো।
-- রাজী গুরু! আমার করনের কি কাম?
-- তোকে পিছু নিতে হবে। যার মৃত্যু আসন্ন এমন লোকের পিছু পিছু বারো ঘন্টা ঘুরতে হবে। তেরো ঘন্টায় পড়লেই তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসতে হবে।
-- টাইনা হিঁচরাইয়া ক্যান?
-- সে তো আসতে চাইবে না রে .....
ভালো করে ব্যাপারখানা বুঝে নিলাম। পরদিন থেকেই কাজ শুরু হল। নাম ঠিকানা দিয়ে দিলে আমি তার পিছু পিছু ঘুরে মরি পাক্কা বারো ঘন্টা।
সে বেচারি বুঝতেই পারে না, সেই বিখ্যাত উক্তি,
" যম আছে তোর পিছে " ।
যখন সে বোঝে তখন সে যমের কব্জায়, যমালয়ের চাতালে।
ভালো কাজ। বেশ রহস্য আছে আর আছে চমক। লোককে বোকা বানানোর ব্যাপার আছে, বউয়ের চোখ রাঙানি নেই উপরন্তু নিজেকে বড় হিরো হিরো লাগে। কয়েক বছর কেটে গেল এই কাজে। বেশ মজার কাজ!
রোজই একজন করে তুলি। আমার মত অনেকেই এই কাজ করে। মহিলা ক্যান্ডিডেট হলে খুব মজা হয়, স্বামীদের বেহাল আর মহিলাদের বেলেল্লাপনায় মন ভরে, বারো ঘন্টায় মন ভাল হয়।
একদিন এরকমই এক মহিলার কেস পেলাম, ঠিকানা ধরে খুঁজে খুঁজে ঘুরে মরলাম বারো ঘন্টা। মহিলা সুন্দরী তার স্বামীকে নিয়ে সারাদিন হোটেলে শপে ঘুরে রাতে বাড়ি ফিরলেন। আমি আশেপাশে আছি রাত দুটোয় আমি ওকে তুলবো।
ঠিক দুটোয় আমি শোবার ঘরে গিয়ে চমকে উঠলাম এ কে?
ভালো করে চোখ কচলে দেখি এযে আমারই সেই কুৎসিত স্ত্রী।
তাহলে আমি সারাদিন কার পিছনে ঘোরাঘুরি করলাম? সে তো বড় সুন্দর দেখতে ছিল। তবে সে কি অন্য কেউ ছিল?
মোবাইলে যমকে ধরলাম। সব শুনে যম হিঃ হিঃ করে হেসে জানালো,
-- আরে মাথামোটা এটা তোরই বউ। নিজের বউকেও চিনতে পারলি না? অবশ্য তোর কি দোষ! তোর বউ যে এখন বিউটি পার্লারে গিয়ে উর্বশী সেজে ঘুরে বেরায়, তুই মরে যেতেই আবার বিয়ে করে নিয়েছে। সকালে দুর্গা সুন্দরী আর রাতে যে সে কেলে কালী!