রূপান্তর ফার্নিচার
অনিন্দ্য পাল
রাজন্যা গাড়ি থেকে খানিকটা লাফিয়েই নামল। অম্লানের হাতটা শিথিল হতেই কোনরকমে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে। সুমনের হৃদযন্ত্র বিকল হবার পর থেকে সব কাজে যাকে পেয়েছে, তার সব প্রয়োজনে পাশে পেয়েছে যাকে, আজ তার হাত থেকেই নিস্তার পাওয়ার জন্য তার আকুলি-বিকুলি। শরীরটাকে কেমন নর্দমার মত লাগছে, রাজন্যার গা গুলিয়ে উঠল, বমি উঠে এল। রাস্তাটা চাপচাপ অন্ধকারে ঢাকা। আরও কয়েক পা এগিয়ে মোড় ঘুরতেই টিমটিমে রাস্তার আলোয় চোখে পড়ল একটা ছোট্ট দোকান। সামনে অনেক ভাঙাচোরা কাঠের ফার্নিচার। আর একটু এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ল একটা বিবর্ণ কাঠের টুকরোর উপর কালো কালিতে আঁকাবাঁকা অক্ষরে লেখা, "রূপান্তর ফার্নিচার "। পায়ে পায়ে দোকানটার দরজায় গিয়ে দাঁড়ালো রাজন্যা। ভিতরে একজন বেশ বয়স্ক মানুষ একমনে একটা পুরনো কাঠের আলমারিতে কিছু একটা ঘসছেন। হঠাৎ লোকটা তার দিকে মুখ ঘুরিয়ে একটা অদ্ভুত চাউনিতে দেখল। তারপর একটু ঘড়ঘড়ে স্বরে বললো,
-- পুরনো আসবাবকে মেজে ঘসে আবার নতুনের মত করে বিক্রি করা হয়। এদের সবার একটা জীবন ছিল, ইতিহাস ছিল। সেগুলোর কিছুই থাকবে না। নতুন জীবন, নতুন আকার, নতুন রং। একদম চিনতে পারবেন না!
তারপর অদ্ভুত হেসে বললো, -- লাগবে ?
গাড়ির ভিতর থেকে জড়ানো কন্ঠে চিৎকার ভেসে এল, " রাজো? এই রাজো! আমি এদিকে তাঁবু খাটিয়ে বসে আছি, আর তুই ফেনা তুলে যাচ্ছিস? আর কত মুতবি রে বিচ্? এবার আয়, নাহলে সব স্যোসাল মিডিয়ায়…"
রাজন্যার মনে হল তার ভিতরে কোথাও একটা পরিবর্তন হচ্ছে। বদলে যাচ্ছে অনেক কিছু। কয়েক মুহুর্ত পরে রাজন্যার মুখে একটা বাঁকা হাসি খেলে গেল। আরও কয়েকপা এগিয়ে গিয়ে লোকটার পাশে রাখা একটা বাটালি তুলে নিল। তারপর ঘুরে আবার গাড়ির দিকে যেতে লাগলো।
পিছন থেকে ভেসে এল, -- নামটা মনে রাখবেন, "রূপান্তর ফার্নিচার"।
====================
অনিন্দ্য পাল,
চম্পাহাটি, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা,