কার্মাটার
সুশান্ত সেন
বার বার বলা সত্বেও অনুপ কথা শুনলো না, এক বিকেলে ট্রেনের টিকিট কেটে কার্মাটার রওনা হয়ে গেল।
সেই কার্মাটার যেখানে বিদ্যাসাগর মশাই বাংলার মানুষজনের ওপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে জীবনের শেষ দিকে বেশ কিছুটা বছর কাটিয়েছিলেন। সাঁওতাল পরগনার এই মধুর প্রাকৃতিক পরিবেশে তিনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শুরু করেছিলেন , স্থানীয় সাঁওতালরা তাঁকে ভালবাসত , তিনিও তাদের।
কার্মাটারে বিজন বাবুর একটা বাড়ি আছে , অনুপ সেই বাড়িতেই গিয়ে উঠলো। প্রথম দিন ত বেশ কাটলো। দ্বিতীয় দিন সকাল থেকে অনুপের পুরনো পেটের ব্যথাটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। গোবিন্দ এই বাড়ির দেখাশোনা করে , কেউ এসে থাকলে তার রান্নাবান্না করে দেয়। অনুপ এর এই রকম পেটের ব্যথা দেখে সে ব্যাকুল হয়ে উঠলো।
অনুপ এর এই পেটের ব্যথাটা বেশ পুরোনো, মাঝে মাঝে হয়। অনুপ অনেক চিকিৎসা করিয়েছে অ্যালোপ্যাথি হোমিওপ্যাথি কবিরাজি ইউনারি , কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় নি। ব্যথাটা দুদিন থাকে তারপরে নিজে নিজেই কমে যায়।
গোবিন্দ অনুপের এই অবস্থা দেখে আর ব্যথার ইতিহাস শুনে বলল - আমাদের এখানে এক বিদ্যাসাগর'ই হোমিওপ্যাথ আছেন , তিনি অনেকের অনেক রোগ সরিয়েছেন। আপনি অনুমতি দিলে আমি তাকে নিয়ে আসতে পারি।
অনুপ অবাক হয়ে গেল চিকিৎসককে দেখে। ঠিক বিদ্যাসাগরের মত ধুতি খাটো পাঞ্জাবি গোছের জামা তার ওপরে সাদা উড়নি পায়ে বিদ্যাসাগর'ই চটি। নাম জানা গেল চুনি মুর্মু। জানা গেল বংশ পরম্পরায় তারা চিকিৎসা করে আসছেন আর চুনি মূর্মুর চার পুরুষ আগের প্র - প্রপিতামহ খোদ বিদ্যাসাগরের কাছ থেকে হোমিওপ্যাথি বিদ্যা শিখেছিলেন।
সব থেকে অবাক কান্ড চুনি মুর্মুর ওষুধে অনুপের পেটের ব্যাথা এক দিনেই সেরে গেল।
সেরে গেল চিরদিনের জন্য।
-----------------------------------
সুশান্ত সেন
৩২বি , শরৎ বোস রোড কলিকাতা ৭০০০২০