একুশের চেতনা
অশোক দাশ
আজ ভোর থেকেই অসীমবাবু ব্যস্ত। অতি প্রতূষে স্নান। পরনে শ্বেতশুভ্র বসন। বাগানে পুষ্প চয়ন, মালা গাঁথা। পরম মমতায় ছবিগুলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে, পুষ্পমাল্যে টেবিলে সাজানো।
সারা ঘর ফুলের সুগন্ধে, ধূপের ধোঁয়ায়, স্বর্গীয় পরিবেশে ধ্যানমগ্ন অসীম বাবু। হঠাৎ নাতনি জুঁই-এর সশব্দ হাসির আওয়াজে তার সম্বিত ফেরে। দাদু তুমি অমন করে চুপ মেরে কি করছো? ওই টেবিলে সাজানো ছবিগুলো কাদের ?ওদের গলায় কেন মালা দিয়েছো? একটার পর একটা প্রশ্ন বানে অসীম বাবু ধাতস্ত হয়ে বলেন, দিদি ভাই, ওরা হলো রফিক, বরকত, জব্বার, সালাম, সালাউদ্দিন। বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য নিবেদিত প্রাণ অমর ভাষা শহীদ। জুঁই বলে সে আবার কি? দিদিভাই তুমি যখন বড় হবে পড়তে শিখবে, তখন সব জানতে পারবে। শুধু এটুকু জেনে রাখো,
ঠিক আজকের দিনেই ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। আর সেই মিছিলের উপর পাকিস্তান সরকারের বর্বর পুলিশ বাহিনী নির্মমভাবে গুলি চালায়। রক্তে ভেসে যায় ঢাকার রাজপথ। শহীদ হয় ওই সমস্ত তাজা যৌবন, অঙ্গুলী নির্দেশ করেন টেবিলে সাজানো ছবি গুলির দিকে। এরপর অবিরাম রক্তঝরা লড়াইয়ের গণআন্দোলনের ফলে বাংলা ভাষা কে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি সরকার।
তারই উত্তরণের ফসল স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ। তারও অনেক বছর পর আজকের দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
এতক্ষন এক মনে নিরবে দাদুর কথাগুলো মন দিয়ে শুনছিল জুঁই। এবার বলে ওঠে দাদু আমি এবার থেকে প্রতিদিন ওই সমস্ত শহীদদের চরণে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করবো।
নাতনীর কথা শুনে আনন্দে অসীম বাবুর আনন্দাশ্রু তে চোখ ভরে যায়। জুঁই কে বুকে জড়িয়ে অসীম বাবু বলতে থাকেন, তোমরাই তো আগামী দিনের কান্ডারী। তোমরাই তো পারবে একুশের চেতনাকে মানুষের মাঝে বিকশিত পল্লবীত করতে।
মাতৃভাষাকে যারা অবহেলা করে, তাদের মনের অন্ধকার মুছে আলোর রোদ্দুর ছড়াতে তোমরাই পারবে। তোমরাই পারবে মাতৃভাষাকে সসম্মানে বিশ্ব সভায় মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করতে।
তোমরাই ভাবি কাল তোমরাই যোগ্য উত্তরসূরী। হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে অসীমবাবুর মুখ,চোখ দিয়ে ঝরে পড়ে শহীদের পদতলে ফোটা- ফোটা তপ্ত অশ্রুর মুক্ত কণা।
=====================
ছবিঋণ - ইন্টারনেট।
অশোক দাশ
ভোজান, রসপুর, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।