সাইন্স সিটি
অঙ্কিতা পাল
কলকাতা শহরের সবচেয়ে অন্যতম দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে একটি হল সাইন্স সিটি। যেটা কিনা বাচ্চা থেকে শুরু করে বড়দের ও মন কেড়ে নেয় । আমাদের বাড়ি থেকে সাইন্স সিটির দূরত্ব প্রায় ২৬ কিলোমিটার , সেখানে পৌঁছতে প্রায় এক ঘণ্টার মতন লাগে। ছোটবেলায় আমি একবার গিয়েছিলাম স্পষ্ট করে তেমন কিছুই মনে নেই তাই কচিকাঁচা দের পরীক্ষা শেষ , তাদের আবদারে এ বছর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম দূরের ভ্রমণ না করে কলকাতার মধ্যেই ছোট ছোট যায়গায় ভ্রমণ করাই ভালো , তাতে করে কলকাতা শহরের সাথে আমাদের যোগাযোগ সুন্দর হবে এবং বাচ্চা দের ও পরিচিতি বাড়বে।
তাই কাল সকাল সকাল উঠে ভাত ডাল ডিম সিদ্ধ খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম সাইন্স সিটি র উদ্দেশ্যে , একটি ম্যাজিক গাড়ির মাধ্যমে সেখানে পৌঁছাতে প্রায় দুপুর একটা বেজে গেল। বাচ্চারা গাড়ি থেকে নেমেই লাফালাফি শুরু করে দিল , তাদের মধ্যে এত উত্তেজনা কাজ করছিল যে "ভাবেই এইতো এসে গেছি সাইন্স সিটি তে। " তারপর সাবওয়ে পার হয়ে ই সাইন্স সিটি র দোরগোড়ায় আমরা সবাই । সেখানে ঢুকেই একটা সুসজ্জিত পার্ক চোখে পড়ল , যেখানে বড় বড় করে সুন্দর ফুলের মধ্যে Science City বোর্ড লাগানো ছিল। এবার টিকিট কেটে ভিতরে ঢোকা যাক ঢুকেই দেখলাম কিছু বাহারি কাগজ ফুলের গাছ , ফোয়ারা, বিশাল একটি ট্যাপ কল দিয়ে জল পরছে, ছোট ছোট দুটো ফোয়ারা, রকেট, বিমান, মনীষীদের মূর্তি, একটি রবি ঠাকুরের মূর্তি, একটা বৃহৎ আকৃতির মাছ যেটার তে কথা বললে অন্য প্রান্তে শোনা যায়, দোলনা, ঢেঁকি ও স্লিপ, যেগুলো চরে বাচ্চাকাচ্চারা খুব আনন্দ করল। আর একটা ঝিলের মধ্যে কিছু মাছ, একটি বিশাল ডাইনোসর এর মূর্তি যেখানে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা হল। আর তার সাথে রোপওয়ে ও টয় ট্রেন তো আছেই কিন্তু তাতে চড়া হলো না।
এবার আরেকটি টিকিট কেটে ভিতরে ঢোকার পালা, দেখলাম বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। এক বিশাল পৃথিবী অনবরত ঘুরেই চলেছে আর তার পাশে ছোট্ট একটি চাঁদ মামা। একটি সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠলাম দেখলাম বিভিন্ন ধরনের আয়না যেখানে নিজেকে ছোট থেকে বড় মোটা থেকে সরু সব রকম আকৃতি দেখা যাবে, বেশ মজাদার ব্যাপারটা। এবার আরেকটি টিকিট কাটলাম, একটা অন্ধকার ঘরে বসিয়ে সেখানে সামুদ্রিক প্রাণীদের বড় পর্দায় দেখানো হলো । আহা কি চমৎকার দৃশ্য মনে হল যেন সামুদ্রিক জন্তুরা ক্রমশ এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে।
এবার একটা বটগাছের নিচে বসে সামান্য কিছু জলখাবার খাওয়া হলো। জলখাবারে ছিল কেক, বিস্কুট, কোল্ডড্রিংস ও আইসক্রিম । খানিকক্ষণ বিশ্রামের পর, এবার আরেকটি টিকিট কাটলাম এবারই তো আসল মজা সেই বিখ্যাত ডাইনোসরদের দেখতে যাব আমরা, ভয়েই তো কচিকাদের মুখ শুকিয়ে গেল। সেখানে একটা ট্রেনের মতন ব্যবস্থা ছিল যার ওপরে বসে অন্ধকার গুহার মধ্যে ঢুকে পড়লাম আমরা। সেখানে ছোট থেকে বড় বিভিন্ন রকমের ডাইনোসর দেখতে পেলাম, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় । এগুলো দেখে বাচ্চাকাচ্চা তো ভয় পেলোই না বরং উল্ল্যসিতহ য়ে চিৎকার করতে লাগলো। আমার ছোট বাচ্চা তো বলেই উঠলো - টাটা ডাইনোসর আবার দেখা হবে। আর বড়টা বললো- Human evolution.অর্থাৎ মানুষের বিবর্তন । যাইহোক এগুলো দেখে তারা খুব উল্লাসিত হলো। আমার ছোট মেয়ে বড় মেয়েকে বলল- দিদি চলো ডাইনোসর গুলোকে বাড়িতে নিয়ে যাই। এরপর আমরা আরেকটি কক্ষে প্রবেশ করলাম, সেখানে বিজ্ঞানের ওপর বিভিন্ন দৃশ্য দেখলাম যেমন - বিভিন্ন রকমের দোলক, বৈদ্যুতিক কারুকার্য, উচ্চচাপ নিম্নচাপ পার্শ্বচ চাপ, একটি পিয়ানোর মতন যার ওপর পা দিলে টুংটাং শব্দ হয় ইত্যাদি। আর সবশেষে দেখলাম বিভিন্ন মাছের সমাহার যেটাকে আমরা aquarium বলি। এইসব দেখা হয়ে গেলে আমরা আবার বিনোদন পার্কটা ঘুরে দেখতে শুরু করি বিকালে সুন্দরর আবহাওয়ায় আর ফুরফুরে বাতাসে পরিবেশটা খুব মনোরম লাগছিল, এক সময় ঘুরতে ঘুরতে খুঁজে পেলাম পলাশ গাছকে সেখানে একগুচ্ছ লাল পলাশ ফুল ফুটেছিল , লাল পলাশ মাথায় দিয়ে কালো শাড়ি তার সাথে অর্পিতার সুসজ্জিত গয়না পরে বসন্তকালে পলাশ ফুলের সাথে সুন্দর ছবি না তুলে থাকতেই পারলাম না, মনে যেন অন্যরকম অনুভূতি লাগছিল - তাই রবি ঠাকুরের ভাষায়, " রাঙা হাসি রাশি রাশি অশোকে পলাশে, রাঙা নেশা মেখে মেশা, প্রভাত আকাশে। যাইহোক সেই সময়টা যদিও প্রভাত ছিল না ছিল গোধূলি, গোধূলি বেলার লাল আভা আর তার সাথে লাল পলাশের মিশ্রণটা যেন স্মৃতি হয়ে থাকল আমার কাছে। এবার পার্কে বসে কফি খেতে খেতে মনটা যেন প্রাণবন্ত হয়ে উঠল, এবার ওঠা যাক বাড়ি ফিরতে হবে। জায়গাটি বলতে গেলে আমার বাড়ির পাশেই কিন্তু বিকেলে ও গোধূলি বেলার পরিবেশটা অত্যন্ত সুন্দর মনে হচ্ছিল সেখানেই থেকে যাই।
সেখান থেকে একটা বাস ধরে সন্ধে ছটায় পৌঁছে গেলাম আমি আমার বাড়িতে।
=============================
নাম - অঙ্কিতা পাল
ভাঙ্গড় , দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা।