গল্প ।। তুমি শুধুই আমার ।। প্রহ্লাদ কুমার প্রভাস
তুমি শুধুই আমার
প্রহ্লাদ কুমার প্রভাস
ফারহান ও মুশফিকা দুজনে খুবই ভালো বন্ধু। ছোট থেকেই তাদের এই বন্ধুত্ব। তাদের বন্ধুত্ব এতটাই গভীর যে তারা একে অপরকে না দেখে থাকতেই পারত না। একটু দুষ্টুমি একটু ঝগড়া না করে যেন তাদের দিন কাটেই না। তাদের বিকেলের অধিকাংশ সময় কাটে মোড়লের নন্দন পার্কে। হাজার বাধা আসলেও তারা দিনে একবার হলেও গ্রামের মোড়লের পার্কে দেখা করবেই। দুজনের মধ্যে যেমন বন্ধুত্ব ছিল তেমনি দুজনে ঝগড়াও করত খুব। তবে কেউ কাউকে ছেড়ে যেত না। কেউ কাউকে ছাড়া থাকতেই পারত না। তাদের পুরো নাম মো: ফারহান শেখ ও মুসফিকা আক্তার লিজা। তাদের সেই বন্ধুত্বের সম্পর্ক ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্কে পরিণত হয়। দুজনে যেন একে অপরের জন্য সৃষ্টি হয়েছে। এমন মনে হয় যেন দুই দেহে এক আত্না। ফরহানের বয়স যখন ১২ বছর। বয়স তখন তাকে মাধ্যমিক পড়ার জন্য তার বাবা তাকে বাইরে যাওয়ার জন্য জোর করে। কারণ তার বাবা ছিল গ্রামের সবচাইতে ধনী ব্যক্তি। তাই তিনি চাইতেন তার ছেলেকে শহরে নিয়ে গিয়ে পড়াশুনা করাতে। যাতে গ্রামে তার সম্মান ও আভিজাত্য বজায় থাকে। কিন্তু ফরহান কিছুতেই শহরে যেতে রাজী হচ্ছিলো না।
একদিন তার বাবা তাকে ডেকে বলে" শোন বাবা আমি তোকে শেষ বারের মতো বলছি তোকে বাইরে যেতেই হবে। গ্রামে আমার একটা সম্মান আছে। আমার ছেলে এই মহিউদ্দিন শেখের একমাত্র ছেলে গ্রামের গাইয়া স্কুলে গিয়ে ওইসব ফকির মিসকিনদের সাথে বসবে?? না, না আমি এটা সহ্য করব না। কখনই না। এতদিন তোকে অনেক আগেই পাঠিয়ে দিতাম কিন্তু তোর মায়ের জন্য পারি নাই। শোন আমি এক কথার মানুষ।যদি তুই শহরে না যাস তাহলে তুই আমার মরা মুখ দেখবি তবে হ্যা আমি মরলে তুই কখনই আমার মুখ দেখতেও আসবি না। যা চলে যা"।
ফরহান মনে মনে অনেক কষ্ট পেল এবং সে ছুট্টে মুশফিকার কাছে গেল এবং বলল " মুশফিকা, আমার তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে। কিন্তু বুজতে পারছি না কীভাবে বলব!! যদি অভয় দাও তো বলি??
মুশফিকা: আরে এত আমতা আমতা করছো কেন? বলো নির্ভয়ে যা বলার।
ফারহান: দেখ কথাটা বলতে কষ্টে আমার বুকটা ফেঁটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। তবু কি করব বলতেই হবে।
মুশফিকা: কি হয়েছে? বলো আমায়।
ফারহান: দেখ আমাকে মাধ্যমিক পড়ার জন্য বাবা শহরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আমাকে যেতেই হবে কিছু করার নেই। বাবা আমাকে তার দিব্যি দিয়েছে।
জানো আমি তোমাকে ছাড়া এক মূহুর্ত থাকতে পারি না। তুমি এক নজর চোখের আড়াল হলেই যেন মনে হয় আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। তোমাকে আর দেখতে পাবো না ভেবে আমার মনে হচ্ছে যেন আমার চারিদিকে ঘোর অন্ধকার নেমে এসছে। জানো কাল সারারাত ঘুমাতে পারি নি। শুধু ছটপট করেছি কখন তোমাকে একটা বার দেখব আর এসব কীভাবে বলব ভেবে।
মুশফিকা: ফারহান, দেখ তুমি কষ্ট পেও না। তুমি জানোই তো যে তুমি কষ্ট পেলে বা তোমার চোখের জল দেখলে আমি ও থাকতে পারি না। আমার মনে হয় যেন আমার থেকে কেউ আমার প্রাণটাকেই বের করে নিচ্ছে চিরে চিরে।
মুশফিকা চোখ মুছতে মুছতে মিছকি হেসে বলে "আরে পাগল সবসময়ই প্রেম করলেই কি হবে? একটু জীবন নিয়ে ও তো ভাবতে হবে। তুমি নিশ্চিতে পড়া শেষ করে ফিরে এসো। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব। আমার চিন্তা করো না। আমি ভালো থাকব।
ফারহান বলে " জান আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না। I love u. তোমাকে ছেড়ে কখনও যাব না।
মুশফিকা তখন ছুট্টে পুকুর থেকে এক দলা কাদা তুলে নিয়ে আসে। এবং সুন্দর দুইটা পুতুল বানায়। একটা মেয়ে আর একটা ছেলে। মেয়ে টা কে ফারহানের হাতে দেয় এবং ছেলে টাকে সে নিজে নেয়।
এবং বলে " এটা আমি আর এইটা তুমি।যখন তোমার আমার কথা মনে পড়বে তখন তুমি এই পুতুল টা বুকের কাছে ধরে আমার নাম ধরে ডাকবে আর আমি তোমার কথা শুনে নিব। তোমার নিশ্বাসের প্রতিটা শব্দ আমি গুনে নিব। আমিও তোমার কথা মনে পড়লে এটা বুকের কাছে নিয়ে জোরে জোরে ডাকব তোমায়। তখন তুমি উত্তর দিও হ্যা??
এসো লক্ষীটি মন খারাপ করো না Please.এ কটা বছর তো আমার তোমার কথা ভাবতে ভাবতেই চলে যাবে। দেখো তুমি বুঝো না কেন? আমি শুধুই তোমার। আর তুমি শুধুই আমার। বুজলে আমার লক্ষীটি? তুমি আমার, তুমি আমার লক্ষীটি। নাও এবার হাসো! হা।
ফারাহান চলে গেল ঢাকা। এভাবেই যখনই মুশফিকাকে মনে পড়ত সে ওই পুতুলের সাথে কথা বলত। একদিন সে পুতুলটাকে নিয়ে বলে উঠে " মুশফিকা, কেমন আছো, আমার কলিজা? তোমাকে ছাড়া আমার এক মুহুর্ত ভালো লাগছে না। নিজেকে খুব একা একা মনে হচ্ছে। জানো মাঝে মাঝে নিঃশ্বাস টাও বন্ধ হয়ে যায়। তুমি কোথায় গো? কবে যাব তোমার কাছে?? কথা বলতে বলতে হঠাৎই তার হাত থেকে পুতুল টা মেঝেতে পড়ে গেল এবং ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।
পড়ে যেন পুতুলটা নয় তার পাজরের হাড় গুলো ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। সে প্রচন্ড ভেঙ্গে পড়ল এবং আবার ও সারারাত মুশফিকার কথা ভেবেই কাটিয়ে দিল। সে কি করছে? কেমন আছে? এটা ভেবেই সে পাগল হয়ে যাচ্ছে। যাইহোক খুবই কষ্টে অতিবাহিত করল বাকী দিনগুলো।
১৩ বছর পর
এখন ফারহান ২৫ বছরের। পড়াশুনা শেষ। দেখতে পাগলের মতো হয়ে গেছে। মুখভর্তি দাড়ি মাথায় লম্বা লম্বা চুল একেবারে ঘাড় ছাড়িয়ে পিঠে পড়ছে। যেন দীর্ঘ কয়েক মাস সেলুনের ধারে কাছেও ঘেঁষে নি।
যাইহোক গ্রামে এসেই সে বাড়িতে না গিয়ে স্টেশন থেকেই মুশফিকাদের বাড়িতে গেল তার খবর নিতে। কিন্তু তাদের বাড়িতে গিয়েই সে জানতে পারে তারা এখন আর ওখানে থাকে না। ওই জায়গার বাড়ি ঘর ভেঙ্গে বড় বড় বিল্ডিং করা হয়েছে। বদলে গেছে অনেক কিছুই এই ১৫ বছরে। পাল্টে গেছে সেই প্রিয় মানুষটাও। হারিয়ে গেছে সময় অতল গর্ভে। মুছে গেছে তার ঠিকানা সময়ের নির্মম চক্রে। দাড়িয়ে সে দীর্ঘ শ্বাস ফেলতে থাকে। তীব্র হাহাকারে তার বুকের এক একটা পাজর যেন এপার থেকে ওই পারে ঢেউ খেলতে লাগল। তীব্র রক্তক্ষরণ শুরু হলো তার হৃদয়ে। চিৎকার করে কেদেঁ উঠলো। তার নাম ধরে জোরে জোরে চিৎকার করে বলতে লাগল মুশফিকার সেই শেষ কথাটি " তুমি শুধুই আমার মুশফিকা, তুমি শুধুই আমার, আমি শুধুই তোমার, মুশফিকা"।
এভাবেই সে ওখানেই বছরের পর বছরের বসে কাটিয়ে দেয় এবং শুধু ওই একটি কথাই বলতে থাকে।। শুধুই একটাই বাক্য।।
=================
প্রহ্লাদ কুমার দাশ (সংক্ষেপে-P.k)
জেলা- সাতক্ষীরা
থানা - আশাশুনি
গ্রাম- বল্লভপুর
বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্টান- সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ডিপার্টমেন্ট অফ ম্যাথমেটিক্স ( অর্নাস প্রথম বর্ষ)