সত্তা
অশোক দাশ
বসন্তের রঙ লেগেছে অপরূপা প্রকৃতি অঙ্গনে। কোকিলের কুহুতান, পলাশ কৃষ্ণচূড়ায় লাল আগুন। ঝরা পলাশে রাঙা কার্পেটে ঢাকা মেঠো পথ।
আগামীকাল দোল পূর্ণিমা আজ থেকেই চাঁদের জোছনায় ভাসছে সারা মাঠ ঘাট প্রান্তর বন বনানী। এই নিভৃত রাতে ছাদে একা বসে আছে অরণ্য।সে তরুণ বেকার যুবক । বয়স প্রায় ত্রিশ। উসকো খুসকো চুল ওবিন্যস্ত বেশভূষা। দুর গাঁ থেকে ভেসে আসছে উল্লাসধ্বনি,'আজ আমাদের নেড়া পোড়া কাল আমাদের দোল'। চাচোরের আগুনের হল্কা, পটকার শব্দ রাতের নৈশব্ধ কে ভেঙে খান খান করে দিচ্ছে। অরণ্যের পাথর চাপা বুকে কে যেন শশব্দে আঘাত হানে! মনের গভীরে ভুলে থাকা যন্ত্রণার ঢেউ উথলে ওঠে। ভুলতে চাইলেও সে ভুলতে পারেনা তার কৈশোর প্রেমের প্রেয়সী কে। আজ থেকে বছর পনেরো আগে, সে তখন দশম শ্রেণীর ছাত্র আর তার অরুনিতা নবম শ্রেণী। এমনই এক দোল পূর্ণিমার দিনে প্রথম রঙের ছোঁয়ায় মন রাঙিয়ে দিয়েছিল অরুনিতা। সেই থেকে তাদের দেখা চেনা খুনসুটি মজা খুশি আনন্দ একে অপরে ভাগ করে চলতো। কত সুখ দুঃখের ইতিহাস লুকিয়ে আছে দুটি হৃদয়ের অন্তরালে। এখনো কানে বাজে অরুনীতার কন্ঠের সেই গান-'তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সে কি মোর অপরাধ'কি সুন্দর গাইতো মেয়েটা, তার কন্ঠের মাধুর্যে আমার অন্তরের ভালোবাসার কোরক গুলো কখন যে ফুল হয়ে ফুটে উঠেছিল তা বুঝতে পারিনি।
বেশ চলছিল। আমাকে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হল শহরে। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তি হলাম।
ও চলে গেল বহু দূরে ওর মামার বাড়িতে। তখন প্রতিদিন নিয়ম করে ওকে চিঠি লেখার অভ্যাসে পরিণত হলো। তখন ছিল না মুঠোফোন। তাই যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হলো চিঠি। হঠাৎই চিঠি আসা বন্ধ হল। পাগলের মত ওর সন্ধানে অনেক খোঁজ খবর করে অনেক চেষ্টা করে জানতে
পারলাম অরুনিতা আর নেই ইহ জগতে। জানতে পারলাম কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে একদল উন্মত্ত দুষ্কৃতীদের হাতে লাঞ্ছিতা ধর্ষিতা হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে।
সেদিন থেকেই অরণ্যের মনে নেই আনন্দ নেই সুখ নেই শান্তি। তাদের ভালোবাসা ছিল পবিত্র, ছিল না কোন কলঙ্কের দাগ। দুটি সত্তার অভিন্ন মিলন ই তো প্রকৃত ভালোবাসা। আজও নিয়ম করে এই দোল পূর্ণিমার দিনে অরন্য তার প্রিয়তমা অরুনিতার উদ্দেশ্যে গঙ্গার বুকে ভাসিয়ে দেয় রঙে বোঝাই ভালোবাসার তরী।
============================
অশোক দাশ
ভোজান, রসপুর, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।