ছবি - সংগৃহীত
বিশ্ব বই দিবসে পাঠক- বই সম্পর্ক
চিরায়ত হোক
পাভেল আমেন
২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস। একজন পাঠকের কাছে বছরের প্রত্যেকটা দিনই বই দিবস হিসেবে পরিগণিত। কথায় আছে পড়া ও জানার কোন শেষ নাই। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ ও বিশ্বস্ত সঙ্গী বই। বইয়ের মধ্যে দিয়েই দেশ জাতি রাষ্ট্রের আগামীর দিশা নির্ধারিত হয় যার নেপথ্যে নাগরিকদের সহযোগিতা গঠনমূলক মানসিকতা।বই দিবসের মূল উদ্দেশ্য বই পড়া, বই ছাপানো, বইয়ের কপিরাইট সংরক্ষণ করা ইত্যাদি বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো। লেখক, পাঠক, প্রকাশকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের দিনটি যেন উৎসব নিয়ে আসে সংশ্লিষ্টদের মনে।সুস্থ ও মুক্তচিন্তার বিকাশ ঘটায় বই। মস্তিষ্কে সৌন্দর্যের ফুল ফোটায় বই। একজন বইপ্রেমীর ভালো থাকার সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ বই।শরীর সুস্থ রাখার জন্য যেমন স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন, ঠিক তেমনিভাবেই ব্রেন তথা মস্তিষ্ককে সুস্থ, কার্যক্ষম ও সচল রাখার জন্য খাদ্য দেওয়া প্রয়োজন। সাম্প্রতিক সময়ের গবেষণা জানাচ্ছে, বই পড়ার অভ্যাসটিই হলো মস্তিষ্কের খাদ্য!বলা হতে পারে, ব্রেনকে সুস্থ ও সচল রাখার জন্য নিয়মিত ফিশ অয়েল কিংবা হলুদ খেলে, অথবা নতুন ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাস, পালজ বুক কিংবা অংক সমাধানের চেষ্টা করলেই তো হয়। যা একইসাথে স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় কার্যকারিতা বৃদ্ধি করবে।এছাড়া বই পড়া মানসিক চাপ কমায়, স্মৃতিশক্তি প্রখর করে, বৃদ্ধি পায় কল্পনাশক্তি, যৌক্তিক চিন্তায় দক্ষ হওয়া যায়, মনোযোগ বৃদ্ধি করে, রাতে দ্রুত ঘুমাতে সাহায্য করে, অনুপ্রাণিত হওয়া যায়, আপনাকে করবে সহমর্মিতাপূর্ণ, বৃদ্ধি পায় সৃজনশীলতা, সিনেমার চেয়েও বই উত্তম। বই পড়ার হাজারো কারণের মাঝে সবচেয়ে বড় কারণটি হলো, একমাত্র বই-ই হতে পারে আপনার জীবনের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে, নিজেকে আরো পরিণত করে তোলার সুযোগটি নিশ্চয় হাতছাড়া করতে চাইবেন না কেউ।মন খারাপে পড়া হয়, মন ভালোতে পড়া হয়। বইয়ের জন্য আলাদা দিন লাগে না। তবু, ১৯৯৫ সাল থেকে বছরের একটি দিন শুধুই বইপ্রেমীদের। তেইশে এপ্রিল বিশ্ব বই দিবসের মূল ধারণাটি আসে স্পেনের লেখক ভিসেন্ত ক্লাভেল আন্দ্রেসের কাছ থেকে। ১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল মারা যান স্পেনের এক বিখ্যাত লেখক মিগেল দে থের্ভান্তেস। আন্দ্রেস ছিলেন তার ভাবশিষ্য। নিজের প্রিয় লেখককে স্মরণীয় করে রাখতেই ১৯২৩ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে আন্দ্রেস স্পেনে পালন করা শুরু করেন বিশ্ব বই দিবস। এরপর দাবি ওঠে প্রতিবছরই দিবসটি পালন করার। অবশ্য সে দাবি তখন নজরে আসেনি কারোরই। বহুদিন অপেক্ষা করতে হয় দিনটি বাস্তবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য।প্রতি বছর বই দিবসে জাতিসংঘ ঘোষণা করে বইয়ের রাজধানী। পরবর্তী এক বছরের জন্য বইয়ের রাজধানী হিসেবে ঠিক করা নির্দিষ্ট একটি শহরকে। এতে মূলত সেই শহরে বইয়ের প্রচার, প্রসার, মানুষের আগ্রহ সৃষ্টিতে কাজ করা হয়। ২০২৩ সালে বইয়ের রাজধানী ঘানার আক্রা শহর। এবছর ২০২৪ সালে রাজধানী ফ্রান্সের স্ট্রসবার্গ।
আমরা প্রায়ই বলি, পৃথিবী বইয়ের হোক। কিন্তু একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, পৃথিবী সবসময় বইয়েরই ছিল। আমি, আপনি বই না পড়লেও দুই এই মলাটের বিস্ময়ের সদম্ভ পদচারণায় মুখর ছিল পৃথিবী, থাকবে আগামীতেও। একটা সময় বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে রাখতো বইপ্রেমীরা। নব্বইয়ের দশকের বাঙালি কিশোর-কিশোরীরা লুকিয়ে, ঘুম বাদ দিয়ে বই পড়তে গিয়ে মায়ের হাতে মার খায়নি- এমন খুব কমই পাওয়া যাবে। প্রযুক্তির আধুনিকায়নে এখন পড়ার আগ্রহ কমেছে। নতুন পাতার ঘ্রাণ মাখার বদলে হাতের মুঠোয় এসেছে পিডিএফ, ইবুকের মতো আধুনিক সংস্করণ। তবু, যারা পড়ুয়া তারা সবসময়ই পড়েন। পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের এগিয়ে নেন বাকি আর দশজনের চেয়ে।উল্লেখ্য, ২৩ এপ্রিল শুধুমাত্র বিশ্ব বই দিবসই নয়, শেক্সপিয়র, সত্যজিৎ রায়, ইনকা গার্সিলাসো ডে লা ভেগাসহ প্রমুখ খ্যাতিমান সাহিত্যিকদের জন্ম ও প্রয়াণ দিবসও। আর এ কারণেও ২৩ এপ্রিলকে বিশ্ব বই দিবস হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই। বিশ্ব বই দিবসে আমরা জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি বিবেক চেতনা ও মনুষ্যত্বের জাগরণ ঘটাতে আরো বেশি বইয়ের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে ওঠে। বর্তমান ডিজিটাল কম্পিউটার যুগে একটা সময় মনে হয়েছিল মুদ্রিত বইয়ের দিন হয়তো শেষ হয়ে আসছে কিন্তু এখনো মানুষের কাছে মুদ্রিত বইয়ের গুরুত্ব অসীম। প্রযুক্তিকে স্বীকার করেও বলছি মুদ্রিত বইয়ের পাতা উল্টিয়ে পড়ার অভ্যাসটা চিরন্তন। বিশ্ব বই দিবসে আপামর সমস্ত পাঠকেরা মননের বিকাশ চিন্তার উৎকর্ষতা সর্বোপরি ব্যক্তি সত্তার প্রস্ফুটন ঘটাতে অবশ্যই বই পড়ার অভ্যাসকে চিরায়ত করে তুলতে হবে। বিশ্ব বই দিবসে আমরা আরো বেশি বইয়ের সঙ্গে তন্নিষ্ঠ ভাবে যুক্ত হয়ে বইকে ক্রয় করে আমাদের বাড়িতে ছোট বইয়ের গ্রন্থগার করে বইয়ের সঙ্গে নিবিড় ভাবে সম্পৃক্ত হয়ে পাঠক হয়ে উঠি।
-------------------------------------------------------
রচনা- পাভেল আমান -হরিহরপাড়া- মুর্শিদাবাদ