বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন :

গল্প ।। হকার ।। প্রতীক মিত্র

ছবি - সংগৃহিত

হকার

প্রতীক মিত্র 

 
একে তো ট্রেনের কামরা এই বেলা দুপুরে গরমে পুড়ে যাচ্ছে। তার ওপর দুই হকারের ঝগড়া। একজন জল বেচে তো অন্য জন লস্যি। দু'জনে একে অন্যকে দোষারোপ করছে এই বলে যে কেন অন্যজনকে আগে উঠতে দেখেও সে এই কামরাতেই উঠলো। প্রথমে ব্যাপারটা চোখ রাঙানি থেকে শাসানি হয়ে গালিগালাজ অবদিই ছিল। তারপর দু'জনে একটি গুরুত্বহীন স্টেশনে নেমে যায়। সেখানে নামে সমরও। ওর ওখানে একজনের থেকে একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নেওয়ার কথা। জিনিসটা বসকে দেবে। অফিসের নয়, ব্যক্তিগত। জিনিসটা আসছে এক মহিলার থেকে। কিন্তু এর বেশি সমর কিছু জানে না। ইচ্ছেও হয়নি।কি দরকার!অফিস থেকে আগেভাগে শুধু বেরোচ্ছেই না কিছু বাড়তি টাকাও মিলবে। এটাই তো দারুণ! এক কাপ চা নিয়ে বসে সেই লোকটার জন্য অপেক্ষায় তার সামনেই ততক্ষণে চলতে থাকে দুই হকারে মারপিট। সমরের এইসব দিকে মন যাওয়ার কথা নয়। তার নিজের আরো অনেক কাজ এবং সমস্যা দুইই আছে। তবু চোখ এবং কান দুইই ওদিকে চলে যায়। ওদের মতন লস্যি এবং জলের বোতলের বিক্রেতা আরো অগুন্তি আছে। ক্রমেই নাকি ভীড় বাড়ছে হকারির এই লাইনে,বাড়ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও। ট্রেনের সময়ের কোনো মাত্রাজ্ঞান নেই। দু'জনের একজনের নাম রসিদুল, অন্যজনের নিত্যানন্দ। মারপিটের তীব্রতা দেখে তো সমরের বেশ মনে হচ্ছিল দুজনের ঘনিষ্ঠতা বেশ।খানিক্ষণ এইসব চলার পর লোকজন এগিয়ে এলো ওদের থামাতে। হাত থামলে কি হবে মুখ তখনও চলছে তারস্বরে। আর সে কি ভাষা! যাজ্ঞে ভাগ্যিস আশপাশের লোকজন থামালো।ওদের থামার যেন ইচ্ছে নেই। ওদের চিৎকার থেকে যা জানা গেল যে একজন মহাজনের থেকে চড়া সুদে ধার নিয়েছে তো অন্যজন বাবা-মা'য়ের জমানো আমানত পুরোটা গাপ করেছে। এবং ফেঁসেছে।  এ বলে ওর জন্য ধার নিয়েছে তো ও বলে ওর জন্য।জুয়া। অনলাইন জুয়ায় নাকি টাকা রাতারাতি বেড়ে যাবে।চেহারা দেখলে আহারে বলতেই ইচ্ছে করে। রসিদুল তো আর একদিন না খেলে ভেতরের কঙ্কালটাই বেরিয়ে পড়বে। নিত্যানন্দের মুখটা কি মিষ্টি!একে অন্যের গোষ্ঠীর লোক এনে ওরা দাঙ্গা করারও হুমকি দেয়।  সমর যা বুঝলো ওদের ঝগড়া এমনি এমনি থামেনি। রীতিমতো লোকজনেরা টাকা দিয়ে থামিয়েছে।মানে পরিস্থিতি এমন ছিলো যে ওদের জোর করে হাতে টাকা গুঁজে দিচ্ছিল যাত্রী।ঠিকই তো ওদের যা বিপদ।তাছাড়া এদের বয়স অল্প আর এই যে অনলাইন জুয়া সে যে কি মারাত্মক জিনিস। জল লস্যিতে যা বিক্রি তা হওয়ার হল কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি ওরি পেল এই স্টেশনে। বিষয়টা সমরের মাথাতেই আসেনি।ব্যস্ততায় ভাবনা-চিন্তা সব লোপ পেয়ে যায়।


কয়েক মাস পরে সমরের আবারো ট্রেনে যাওয়ার ছিল। এটা আর হাওড়া নয় শিয়ালদা লাইন।এবারে ওর জিনিস দেওয়ার ছিল একটা বড় স্টেশনে। জিনিস দিয়ে এক কাপ গরম চায়ে চুমুক দিয়ে ও ভাবছিলো ছেলেটাকে পড়াতে খরচা কি চচ্চর করেই না বাড়ছে।শীত কালের শুরু। এই শেষ বিকেলের দিকে একটু ছ্যাঁকছ্যাঁক করে। অন্তত মাফলারটা থাকলে ভালো হত। দু'জন মানুষের কথায় ওর মনোযোগ ঘোরে। বোঝো এই তো সেই লোক দুটো! সেই যে সেই স্টেশনে নেমে মারপিট করেছিলো। আজকে ওদের খোশমেজাজে দেখে সমরের ভালো লাগলেও শীঘ্রই সে বুঝতে পারলো মক্কেলরা যা পকেট ভরার ভরে নিয়েছে। ওই নকল ঝগড়া করেই নির্ঘাত। এখন অবশ্য হকারির জন্য ওদের কাছে জল বা লস্যি নয় পাপড় ছিল। আচ্ছা এবারেও কি ওরা অত পরিশ্রমই করেছিলো?মানে লড়াই, ঝগড়া, গালাগালি ইত্যাদি?কেননা ওদের অভিনয় দিয়ে ওরা পরিবেশকে যত উত্তেজিত উত্ত্যপ্ত করতে পারবে ফায়দা ততই ওদের বেশি।না ও আর জিজ্ঞেস করেনি।ওর ততটা সময়ও ছিল না। 
----------------------------------------------

প্রতীক মিত্র

কোন্নগর-712235, পশ্চিমবঙ্গ।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.