ছবি - সংগৃহিত
মেঘলা আকাশ
অভিষিক্তা দে ( দোলা )
প্রচন্ড গরমে এক বৈশাখের বিকেলে স্নিগ্ধা স্কুটি নিয়ে গঙ্গার ধারে ঘুরতে যায়। হঠাৎই ঝড় ও মুষলধারে বৃষ্টি নামে। তাই সে সামনে একটা পেস্ট্রির দোকানে দাঁড়ায়। প্রায় আধঘন্টা কেটে যায় কিন্তু বৃষ্টি থামার নাম নেই।
সে তখন দোকানের ভিতরে পেস্ট্রি খেতে ঢুকে পড়ে। সেখানে হঠাৎই তার চোখ পড়ে একটা মেয়ের দিকে। সে দেখে মেয়েটা বসে আছে, আর সে তার বৃদ্ধা মাকে এটা সেটা খাবার নিয়ে আসতে বলছে। ব্যাপারটা স্নিগ্ধার মোটেও ভালো লাগে না।
এদিকে বৃষ্টি অল্প থামতেই মেয়েটা বাড়ি যাওয়ার জন্য তার মাকে একটা টোটো দেখতে বলে। কথাটা পাশ থেকে শুনে স্নিগ্ধার আরও রাগ হয়। স্নিগ্ধাও তখন ভদ্রমহিলার সঙ্গে বাইরে যায় ও তাঁকে বলে - "আন্টি আপনি দাঁড়ান, আমি আপনাদের জন্য টোটো দেখে দিচ্ছি।" কিন্তু বৃষ্টিতে রাস্তায় জল জমে যাওয়ায় কোন টোটোর দেখা মেলে না। স্নিগ্ধা এদিক ওদিক দেখে সেই ভদ্রমহিলার পাশে এসে দাঁড়াতে, তিনি বলেন - "আমাদের একটা উপকার করবে?"
স্নিগ্ধা বলে - "বলুন না আন্টি, কি করতে হবে?" তিনি বলেন - "আসলে আমার মেয়ের হাঁটুতে একটা অপারেশন হয়েছে, ও ভালো করে হাঁটতে পারছে না। আমাদের বাড়ি কাছেই। তুমি যদি ওকে একটু তোমার স্কুটি করে পৌঁছে দাও তাহলে খুব উপকার হয়।"
এতক্ষণে স্নিগ্ধা নিজের ভুল বুঝতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে সে সম্মতি জানায় ও মেয়েটিকে ধরে বাইরে নিয়ে আসে। মেয়েটি স্নিগ্ধার খুব প্রসংশা করে ও তার নাম জানতে চায়। স্নিগ্ধা নিজের নাম বলে কিন্তু লজ্জায় তার মাথা হেঁট হয়ে যায়।
মেয়েটি বলে, "আমরা ডাক্তার দেখাতে এসে বৃষ্টিতে আটকে পড়েছি। কিন্তু তুমি এক কথায় আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছ, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ, তোমার মত মানুষ এখন আর সহজে পাওয়া যায়না।"
এই বলতে বলতেই হঠাৎ সামনে একটা টোটো এসে দাঁড়ায়। স্নিগ্ধা, মেয়েটিকে ধরে টোটোতে তুলে দেয়। তখন আবারও মেয়েটি ও তার মা দুজনেই তাকে ধন্যবাদ জানায়। কিন্তু স্নিগ্ধার এতটাই অপরাধ বোধ হচ্ছিল যে, সে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে, এমনকি তার নামটাও জিজ্ঞাসা করতে পারে না। শুধু মেয়েটিকে বলে "ভালো থেকো।" সে তখন নিজের মনে ভাবে "কারোর সম্পর্কে ধরনা পোষণ করার আগে তার সম্পর্কে ভালোভাবে সম্পূর্ণ জানা উচিৎ।" সেদিন সে এই শিক্ষা আর অনেকটা খারাপ লাগা নিয়ে স্কুটি করে বাড়ি ফিরে আসে।
আজ অনেক দিন পর জানলার সামনে বসে আছে স্নিগ্ধা। অবিশ্রান্ত বৃষ্টি হচ্ছে, থামার কোনো নাম নেই। হঠাৎ স্নিগ্ধার সেই মেয়েটির কথা মনে পড়ে মনটা যেন কেমন করে উঠলো। সে জানে না সেই নাম না জানা মেয়েটি আজ কোথায় আছে কেমন আছে।
------------------------------------------
অভিষিক্তা দে ( দোলা )
45, নিবেদিতা সরণী,
দুর্গাপুর, বালী
হাওড়া ।