অনিন্দ্য পাল
দরজার ভিতরে দাঁড়িয়ে আছে একটা ভিড়। ভিড় বলতে যা বোঝায় এটা তেমন নয় ঠিক। এখানে এখন সব পরিচিত মুখ অন্য কোন অপরিচয়ের ধাক্কায় বদলে ফেলেছে আকৃতি, রং, এমনকি তাদের কথা বলার ধরনও গেছে পাল্টে। যেটুকু কথা তারা বলছে, সেটা যেন অনেকটা ষড়যন্ত্রের শাব্দিক রূপ।
না, এখানে, দরজার এই দিকে যারা দাঁড়িয়ে আছে, তাদের কেউ ষড়যন্ত্রী নন, বরং বলা যায় তারা সুলভ খাদ্য হয়ে পড়েছেন। দরজার এপাশে একমুখ নিরবতা নিয়ে তাঁরা অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু কিসের অপেক্ষায় আছেন? খাদ্য হবার? ষড়যন্ত্রের শিকার হবার? না কি শুধুমাত্র নীরব দর্শক হয়ে হাজার হাজার মানুষের স্রেফ বাষ্প হয়ে যাওয়া দেখার অপেক্ষায় আছেন! কে দেবে এই প্রশ্নের উত্তর? আদৌ আছে কি উত্তর? উত্তর আছে কি নেই, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন।
দরজাটা বন্ধ আছে এখনও। তবে খুলে যেতে পারে যে কোনও সময়। দরজার ওপাশে কি আছে? লক্ষ লক্ষ মানুষ! তারা কারা? তারা কি দরজার এপাশে আসতে চাইছে? যদি চায় কেন চাইছে? নাকি তারা চাইছে দরজার ভেতরটাকে এক লপ্তে ধ্বংস করে দিতে। নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইছে ভিতরে দাঁড়িয়ে থাকা গুটিকয় মানুষের অস্তিত্ব!
কে বানালো এই দরজাটা, কে গাঁথলো এই দেওয়াল? এতে লাভ কার হল? রাজমিস্ত্রির? ছুতোরের? ইট, বালি, সিমেন্টের ব্যবসায়ীর নাকি এদের চেয়েও বড় কোনও ব্যবসায়ীর? তার কাছেই কি দরজার ভিতরে ঢোকার টিকিট রয়েছে? আর সব পথ তাই বন্ধ হয়ে গেছে একেবারে। লক্ষ লক্ষ লোক শুধু সেই টিকিটের জন্য হাত পেতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু টিকিট পাচ্ছে মাত্র কয়েকজন। যে পাচ্ছে, সে কেন পাচ্ছে? মেধার জোরে? শারিরীক শক্তির জন্য? না কি এসব ছাড়াও পিছনের দিকে, অন্ধকার ঘুপচি গলির গভীরে আদান-প্রদান হচ্ছে অন্য কোন মহার্ঘ্য কিছুর-- যার জোরে যোগটা বিয়োগ আর বিয়োগটা যোগে পরিণত হতে বেশি সময় লাগে না।
দরজার এপাশে যারা আছে, ওপাশের কোলাহল, তর্জন গর্জন আর টিকিট নিলামের শব্দ এসে পৌঁছেছে। যারা এসব ছাড়াই এসে পড়েছে দরজার এপাশে, তারাও স্বস্তিতে নেই। যারা টিকিট নিলাম হয়ে এসেছে তারাও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, হৃদপিণ্ডটিকে যতটা সম্ভব মন্থর করে। সবাই অধীর হয়ে উঠছে, এর পর কে আসে -- কলিংবেলটা কখন বাজে!
কতটা পুরু এই দেওয়াল? বাইরের কোলাহল যদি একযোগে আছড়ে পড়ে তবে সামলে নিতে পারবে তো সেই অভিঘাত? নাকি ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবে এক লহমায়! যদি যায়ই, তবে কার লাভ হবে? যারা ভিতরে আছে তাদের? নাকি যারা বাইরে থেকে দরজা, দেওয়াল সব তছনছ করে ভিতরে ঢুকবে তাদের? আসলে এরা সবাই বাঁধের দুদিকে থাকা জলের মতই মিশে যাবে, প্রবল স্রোতে ভেসে চলে যাবে অনির্দিষ্ট দিকে। আর সেই অন্ধকার, সেই টিকিটের ব্যবসাদার? সেও থাকবে না। বান ডাকলে বাঁধা নৌকাও ভেসে যেতে বাধ্য। তার ফাঁকি দিয়ে গড়ে তোলা সুখের সঞ্চয় নিমেষেই ওই প্রবল স্রোতে ভেসে হারিয়ে যাবে অনন্তের মুখগহ্বরে।
সবাই, দরজার এপাশে এবং ওপাশে যারা আছে, তাই অপেক্ষায় আছে কখন শেষ কলিংবেলটা বেজে ওঠে? একটা নতুন নদী জন্ম নেবে তারপর, সব প্লাবন থিতু হলে।
----------------------------------------
অনিন্দ্য পাল
প্রজত্নে -- বিশ্বনাথ পাল
গ্রাম -- জাফরপুর
পোঃ-- চম্পাহাটিি
পিন - ৭৪৩৩৩০
থানা -- সোনারপুর
জেলা -- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত