বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন :

গল্প ।। রহস্য ।। শ্যামল হুদাতী

 
                                                                                                                                                                       ছবি - সংগৃহিত

 রহস্য

 শ্যামল হুদাতী



আমার বড়দা খুব বড় নামকরা ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। বাংলার হয়ে সন্তুষ্ট ট্রফি অনেকবার এনে দিয়েছে। এখন নামকরা পুলিশ অফিসার। সবাই এক ডাকে চেনে। যেমন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং ব্যবহার ও অমায়িক। তার পুলিশ দাপটে নাকি বাঘ আর ছাগল এক ঘাটে জল খায়।

বড়দার এখন পোস্টিং কালনায়। এর আগের পোস্টিং ছিল নৈহাটিতে। এই সবে দুমাস হল কালনায় বৌদি এবং আমার ভাইজি, তৃণাকে নিয়ে কালনায় পাড়ি দিয়েছে। তৃণা এখন ক্লাস থ্রিতে পড়ে। আমরা সবাই ওকে খুব ভালবাসি। তৃণাকে ওখানকার ভালো স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে। 

হঠাৎ দাদার তলব। তুই তিন চার দিনের জন্য এখানে চলে আয় খুব আর্জেন্ট কাজ আছে, বড়দা ফোনে জানাল। আমি তখন কলেজের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে চাকরির জন্য বসে আছি। পরের দিনেই ছুটলাম।

বড়দা স্টেশনে আনতে আসলো। খোলা জিপে যেতে যেতে কালনা শহরটা ভালই লাগলো। ছিমছাম কালনা , তবে স্টেশনের কাছাকাছি একটু ঘিঞ্জি আছে। মোটামুটি ভালই লাগলো। আমার খুব কৌতুহল হচ্ছিল কেন আমাকে হঠাৎ ডাকলো, তাও আবার আর্জেন্ট ব্যাপার।  যেতে যেতে জিজ্ঞেস করলাম, কি আর্জেন্ট ব্যাপার রে? চল ঘরে গিয়ে বলবো সব।

মিনিট ১০-১৫  মধ্যেই পৌঁছে গেলাম। বৌদির মুখটা খুব থমথমে ভাব লক্ষ্য করলাম। তৃণা তখনো স্কুল থেকে ফেরেনি। কিছু একটা গোলমাল আছে মনে হল বৌদির মুখ দেখে। দাদা আমাকে পৌঁছে দিয়ে আবার ডিউটিতে চলে গেল।  আমি চান টান খাওয়া দাওয়া করে আনন্দবাজার পত্রিকা মন দিয়ে পড়ছি, বৌদি র সাথে তার কাজের মেয়ে কমলাকের নিয়ে আমার ঘরে হাজির।
 "আর পারছিনা ঠাকুরপো, এই বাড়িতে খুব ভুতের উপদ্রব", বৌদি জানাল।  আমি একদম ভুতটুত  বিশ্বাস করি না, তুমি তো জানোই। আর এইসব গল্প শুনতে আমার খুব ভালো লাগে, আমি জানাই।
না গো দাদাবাবু, আমরা সত্যি সত্যি ভূতকে দেখেছি, কমলা বলল। 
- কি রকম দেখতে?
- ও পাড়ার গজা ভূত আসছে...
- গজা কে?
- মন্ডল বাড়ির ছেলে ছিল। গলায় দড়ি দিয়ে মরল।
- ও এখানে আসবে কেন? মন্ডল বাড়ির আশেপাশে থাকবো।
- ভূতটা কি করে?
- শুধু আমাদের বাড়ির আশেপাশে ঘোরে। দুপুর বেলা, রাত্রিতে খুচরো পয়সা ফেলার আওয়াজ পাওয়া যায়। কিন্তু কোন পয়সা দেখা যায় না।
- খুব ইন্টারেস্টিং। আর কি করে?
- অনেক রাত্রিতে ওই দূরের কালভার্টে বসে ও গান গায়।
- বৌদি তুমি চিন্তা করো না। এর সমাধান করেই আমি যাব। পুলিশের বাড়িতে ভূতের উপদ্রব কোনদিন কি তুমি শুনেছ?

দুপুরবেলায় একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। রাতে ঠিক ঘুম আসছিল না। হঠাৎ শুনি, বারান্দায় খুচরো পয়সা ফেলার আওয়াজ। সময় রাত ১২টা হবে। লাইট না জ্বেলে বারান্দায় গিয়ে দেখি, কালো চাদরে মুখ ঢেকে এক ভদ্রমহিলা খুচরো পয়সাগুলো তুলছে। আর দূরে একটা ছেলে চলে যাচ্ছে। 
সকালে দাঁতে ব্রাস করার পর - - ভূতটা কত পয়সা দিল? কমলাকে জিজ্ঞেস করলাম।
- আমি তো কিছুই জানিনা দাদাবাবু আমি ঘুমাচ্ছিলাম।
- আমি তোমাকে কি সময়ের কথা বলেছি? ঘুমানোর কথা আসল কেন?

ভূতটুত সবটাই বুজরুকি এটা নিশ্চিত হলাম। কিন্তু উদ্দেশ্যটা কি বোঝা গেল না। পরে দাদার সাথে কথা বলতে হবে।

কিভাবে মানুষ ভূতকে ধরা যাবে, সেই চিন্তাভাবনা করতে লাগলাম। 

মানুষ ভূত ধরতে - রাত ঠিক বারোটার আগে কালো চাদরে মুখ ঢেকে লেবু গাছের পেছনে বসে রইলাম। আধ ঘন্টার অপেক্ষার পর, সেই  ভূত বারান্দায় খুচরা পয়সা ছড়ালো। 

তারপর চোখের নিমিষে মিলিয়ে গেল। হঠাৎ দেখি, একজন সাদা কাপড় সর্বাঙ্গে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার সন্দেহ ওই ভূতটাই বারান্দায় পয়সা ছড়ালো। পায়ে পায়ে একটু তাড়াতাড়ি এগিয়ে গেলাম ওর দিকে। ভূতটা দেখি হাওয়ার মত ভেসে ভেসে এগতে লাগলো। কিছুতেই নাগাল পাচ্ছিলাম না। কি করব চিন্তা করতে করতে, ঠিক করলাম, যা হবে দেখা যাবে, ভূতটাকে ধরতেই হবে। হঠাৎ দৌড়ালাম ওর পেছনে। 

ভূতটা হতচকিত আমার দৌড় দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে দৌড়াতে চেষ্টা করল। খুব সম্ভবত গর্তে পা পড়ে বেসামাল হয়ে মাটিতে পড়ে গেল। আমি দৌড়ে ধরে ফেললাম। 

এখন ব্যাপারটা আর ও স্পষ্ট হলো। ভূতটা কে অনেক লম্বা দেখাচ্ছিল। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম "রনপা" লাগিয়ে হাঁটছে। না আমার ধারনা ভুল। দেখি , খুব সম্ভবত একটা লেপের ওয়ার, পুরো শরীর ঢুকিয়ে দুটো হাত মাথার উপর তোলার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়েছিল। দূর থেকে দেখলে যেন মনে হবে এক বিরাট আকারের ৮/৯ ফুটের ভূত। পিঠে দু ঘা ঘুসি পরতেই, "দাদা আমাকে ছেড়ে দিন আমি ভূত নই আমি মানুষ"।

- দাঁড়া, তোকে ছাড়লে হবে। পুলিশের বাড়িতেই ভূতগিরি । তোর মজা দেখাচ্ছি চল।

বাড়ির সামনে এসে চিৎকার করতে লাগলাম- ভূত ধরেছি, ভূত ধরেছি.......
আমার চিৎকারে বাড়ির সবাই উঠে পড়েছে। রাত একটা হবে।
'আরে এযে কমলার ভাই' , বৌদি চিৎকার করল।
কমলা এককোণে চুপ করে দাঁড়িয়েছিল।

রহস্যের সমাধান করতে পেরে খুব ভালো লাগলো।

-------------------------------
Shyamal Hudati
 Prince Anwar Shah Road
Kolkata 



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.