ছবি - সংগৃহীত ।
রহস্য
শ্যামল হুদাতী
পতিতাপল্লীর পাশ দিয়ে আসার সময় আমার স্ত্রী সাহানাকে দেখে রিকশা থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম আমি। কিছুতেই আমি আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। বেশ কয়েকবার ওর সামনে যাবো ভেবেও শেষমেষ যেতে পারিনি। তার আগেই একজন পুরুষ ওকে ডেকে ভিতরে নিয়ে গেলো।
উদ্ভ্রান্তের মতো এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি করে সামনের একটা দোকান থেকে সিগারেট কিনে টানতে লাগলাম। কি করবো, কি করবো ভাবতে ভাবতে শেষমেষ সাহানাকে কল করলাম।
"আমি একটু ব্যক্তিগত কাজে আছি, ঘরে ফিরতে দেরি হবে। তুমি ফ্রিজ থেকে খাবার গরম করে খেয়ে নিয়ো।" - সাহানা বলল।
সাহানার কথা শুনে গায়ে জ্বালা ধরে গেলো। ইচ্ছা করছিলো তখন সমগ্র পৃথিবীটাকে গুড়িয়ে দিই। ঠিক সেই সময় একজন দালাল এসে আমাকে বললো, "স্যার অনেকক্ষণ ধরে দেখলাম আপনি দাঁড়িয়ে আছেন, কিন্তু ভিতরে ঢুকছেন না। লজ্জা পাচ্ছেন বুঝি খুব?"
ওর কথা শুনে আমার রাগে গা ঘিনঘিন করতে লাগলো। তারপরও আমি চুপ করে রইলাম।
আমার নীরবতা দেখে দালালটা আবার বললো, "স্যার, অনেক সুন্দর সুন্দর মাল আছে আমার কাছে। আপনার পছন্দ হবেই হবে" ।
"না আমি অন্য কাজে এসেছি," জবাব দিলাম
"স্যার, একটু চোখ বুলিয়ে নিন না ফটোগুলোর ওপরে " দালালটা বলল
মনে একটু কৌতূহল হল - ফটোগুলোর মধ্যে সাহানার ফটো আছে কি?
"দেখি তোমাদের ফটোগুলো" বলেই ফটোগুলোর মধ্যে সাহানাকে খুঁজতে লাগলাম।
" স্যার আপনার পছন্দ হবেই হবে" দালালটা নিশ্চিত ভাবে জোর গলায় বলল
"না, আজ পছন্দ হল না, অন্যদিন আসব" বলেই চটপট চলে আসলাম।
বাড়িতে এসে খেয়েদেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম কিন্তু কোনমতেই ঘুমাতে পারছিলাম না। প্রায় রাত দুটো নাগাদ সাহানা বাড়িতে এলো। খাওয়া দাওয়া করে আমার পাশে শুয়ে পড়লো অন্যান্য দিনের মতো।
ঘুম থেকে উঠে, একই চিন্তা আমাকে পর্যুদস্ত করে দিচ্ছিল। অফিস যাওয়ার আগে খাবার সময় দু'জনের মধ্যে কোন বাক্য বিনিময় হল না। বের হবার সময় সাহানা বললো, "শোনো আমার আজকেও ফিরতে দেরী হবে। তুমি খেয়ে নিও প্লিজ।"
জিজ্ঞেস করলাম, কি কাজ?
-শান্ত ভঙ্গিতে বললো, ব্যক্তিগত কাজ।
-ওহ হ্যাঁ। ভুলে গেছিলাম, তোমার ব্যক্তিগত কাজ।
-পতিতাপল্লীতে তোমার কি কাজ?
-আমার ব্যক্তিগত কাজ সম্পর্কে জানাতে বাধ্য নই।
ব্যক্তিগত'র রহস্য উদ্ধার করতে নেমে পড়লাম। কিন্তু কিভাবে এগাবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ব্যক্তিগত'র রহস্য নিহিত পতিতাপল্লীতে আর, আমাকে সবার প্রথমে সাহানার সাথে পতিতাপল্লীর সংযোগস্থলটা বের করতে হবে। অনেক চেষ্টা করেও কানেকশনটা বার করতে পারলাম না।
শেষ পর্যন্ত প্রাইভেট ডিটেকটিভ এজেন্সির শরণাপন্ন হলাম। স্বপন বোস এজেন্সির হেড বারবার প্রশ্ন করলেন,
"সাহানার স্বভাব চরিত্র কি রকম" জিজ্ঞাসা করলেন
-"কোন রূপ সন্দেহের অবকাশ পাইনি"
- "কোন বয়-ফ্রেন্ড ছিল?
- " না"
- "পড়াশোনায় কিরকম ছিল"
- "খুব ই ভালো"
- " এডুকেশনাল কোয়ালিফিকেশন?"
- "এমএসসি সোশ্যাল সাইন্স"
" মেধাবী ছাত্রী সাহানা কেন পতিতাপল্লীতে যেতে পারে?"
এইসব নিয়ে চিন্তায় যখন আমি পর্যুদস্ত তখন সাহানা বললো, "কি ভাবছো এতো? এরকম করলে তো শরীর ভেঙে পড়বে।"
-আমি কোন উত্তর দিলাম না।
"সাহানা পিএইচ ডি কাজে ব্যস্ত" স্বপনদার কথা শুনে আমি অবাক।
প্রশ্নের উত্তরে সাহানা বললো,
রহস্য সমাধান করার মজাই আলাদা, তাইনা ?
-বললাম, হ্যাঁ।
- রহস্য তৈরি করে দেখিও, ওটারও আলাদা একটি মজা আছে।
---------------------------------
শ্যামল হুদাতী
৩৫৭/১/১৩/১, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড
কলকাতা ৭০০০৬৮