ছবি - সংগৃহীত ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)
ও তাঁর প্রাসঙ্গিকতা
অভিজিৎ দত্ত
এইবছর (২০২৪ সাল) বুধবার (০৮/০৫/২৪) কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪ তম জন্মদিন পালন করা হবে।রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অনেক অনুষ্ঠান হবে।চলবে বক্তৃতা, গান, কবিতা আবৃত্তি , ছবি আঁকা সহ নানাধরনের অনুষ্ঠান। আচ্ছা এর মাধ্যমে কী আমরা রবীন্দ্রনাথকে প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতে পারছি? প্রকৃত শ্রদ্ধা তখনই জ্ঞাপন করা হবে যখন আমরা তার জীবন ও বাণীকে নিজেদের জীবনে অনুসরণ করতে পারবো।সত্যিই কী তাই হয়? রবীন্দ্রনাথ বাঙালি তথা ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ আইকন।গোটা বিশ্বে যেভাবে রবীন্দ্রচর্চা চলছে, তার বিষয়গুলিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হচ্ছে , তাকে নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে তা যথেষ্ট গর্বের। অথচ আমরা কী করছি? রবীন্দ্রনাথ আমাদের জীবনে, মরণে।আমাদের চিন্তা -চেতনায়। কজনই বা এই রকম ভাবে?আজকে আমাদের সমাজে রবীন্দ্রচর্চা, রবীন্দ্র সংস্কৃতির বদলে পাশ্চাত্যের অপসংস্কৃতির রমরমা।রবীন্দ্রনাথকে আমরা কেন মনে রাখবো?তার বহুমুখী প্রতিভার জন্য নাকি সাহিত্য চর্চার জন্য?না ভারতীয়দের মধ্যে সাহিত্যে প্রথম নোবেল প্রাইজ পাবার জন্য?নাকি তাঁর লেখা গান তিনটে দেশের জাতীয় সংগীত হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে বলে?রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনে ৫২টি কাব্য গ্রন্থ,৩৮টি নাটক,১৩টি উপন্যাস, ৩৬ টি প্রবন্ধ,৯৫ টি ছোট গল্প,১৯১৫টি গান, ২০০০টি ছবি সৃষ্টি করেছিলেন বলে?নাকি এমন একজন মানুষ যিনি জীবিত অবস্হায় অনেক দুঃখ, কষ্ট সহ্য করেছিলেন বলে? কবির মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে মাতৃবিয়োগ,৪২বছর বয়সে পত্নী বিয়োগ,৪৩ বছর বয়সে কন্যা রেণুকার মৃত্যু,৪৫ বছর বয়সে পিতার মৃত্যু, ৪৭ বছর বয়সে পুত্র শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু।এত প্রিয়জনদের মৃত্যুও কবিকে দমাতে পারে নি।দমাতে পারে নি বলেই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ লেখাগুলো আমরা পড়তে পারছি।রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক। বিদ্যালয়ের চারদিক ঘেরা প্রাচীরে তার পড়ায় মন বসতো না বলেই প্রকৃতির মধ্যেই পড়াশোনা চালু করতে চেয়েছিলেন। চেয়েছিলেন গোটা বিশ্বের মধ্যেই শান্তি ও সৌর্হাদ্যের বাতাবরণ গড়ে তুলতে।গ্রামীণ উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের ভিতকে মজবুত করে তুলতে।এইজন্যই তৈরী করেছিলেন বিশ্বভারতী ও শ্রীনেকেতন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন আন্তর্জাতিক মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি। সেই সঙ্গে প্রচন্ড দেশপ্রেমি।যেখানেই অন্যায় দেখেছেন কবির কলম গর্জে উঠেছে। ইংরেজদের জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের জন্য, নাইট উপাধি ত্যাগ করেছিলেন। শুধু কি তাই ১৯০৫ সালে ইংরেজরা যখন বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করতে চেয়েছিল তখনও কবির কলম গর্জে উঠেছিল। এমনকি রাখি বন্ধনের মাধ্যমে তিনি হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রীতির ধাগা পড়িয়ে দিয়েছিলেন অথচ আজ আমাদের দেশে কী ঘটে চলেছে?
রবীন্দ্রনাথ নেতাজীকে খুব স্নেহ করতেন।মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গেও তার সম্পর্ক খুব ভাল ছিল। বিশ্ববন্দিত বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইন, দার্শনিক রোমান রোঁল্যা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন খ্যাতনামা ব্যক্তিদের সঙ্গে তাঁর আলাপ বা সম্পর্ক ছিল। রবীন্দ্রনাথ ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত ৫টি মহাদেশের ৩০টির বেশী দেশে ভ্রমণ করেন। ১৯২৪ সালে চীনে গিয়েছিলেন। ১৯৩৪ সালে সিংহল (যার বর্তমান নাম শ্রীলঙ্কা) ভ্রমণ ছিল তার শেষ ভ্রমণ। এই ভ্রমণ গুলো সম্বন্ধে বিভিন্ন বিবরণ তার লেখা থেকে পাই। রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতিকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি নগর সভ্যতার ভয়াবহ দিক উপলদ্ধি করে বলেছিলেন, "দাও ফিরে সে অরণ্য, লহ এ নগর"।রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি ছিলেন মানবতাবাদী। মানুষের হিতসাধনাই ছিল তার কাছে একমাত্র ঈশ্বর উপাসনা।হায়,আমরা কী এখনও পর্যন্ত সেটা উপলদ্ধি করতে পারছি? রবীন্দ্রনাথ কে জীবদ্দশায় অনেক নিন্দা বা গাল-মন্দ শুনতে হয়েছিল। তার শিক্ষাব্যবস্হা নিয়ে অনেকেই সেসময় বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। শুধু কী তাই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় স্হাপন করতে ও চালাতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের বাজারে অনেক দেনা হয়ে গিয়েছিল।কেউ তাকে সাহায্য করেনি। উপরন্তু জমিদার পরিবারের সন্তান, এদের আবার অভাব বলে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ পর্যন্ত করেছিল।শেষ পর্যন্ত কবি পত্নী মৃণালিনীদেবী স্বামীর সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলেন। তার সমস্ত গহনা বন্ধক দিয়ে কবি ধার শোধ করতে পেরেছিলেন। এছাড়াও বিশ্বভারতীর বিপুল ব্যয়ভার চালাতে গিয়ে কবিকে বৃদ্ধ বয়সে বিদেশ ভ্রমণ করতে হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথকে ভালো করে চিনতে ও জানতে হবে একমাত্র তবেই যদি আমাদের মানসিকতার উন্নতি ঘটে। কাজেই রবীন্দ্রনাথের আদর্শে যদি আমরা অনুপ্রাণিত না হতে পারি তবে সভ্যতার সংকট দেখা দিবে।ভবিষ্যত দ্রষ্টা কবি এটা জানতেন। তাই" সভ্যতার সংকট" গ্রন্থে সেটা লিখেছিলেন। হিংসায় উন্মুক্ত এই পৃথিবীতে আমরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ কবে হবে আমাদের হুঁশ?কবে আমরা কবিগুরুর জীবন ও বাণীকে আমাদের মর্মে প্রবেশ করিয়ে সতিকারের প্রকৃত মানুষ হবো?
=============================
ABHIJIT DUTTA,
AT-MAHAJANPATTI,
P.O.JIAGANJ
,DIST.MURSHIDABAD,
PIN.742123,WEST BENGAL