Click the image to explore all Offers

গল্প ।। আশীর্বাদ ।। প্রবীর বারিক

 

 
আশীর্বাদ 
 প্রবীর বারিক 

  অষ্টাদশী সুন্দরী মানসী এবছরই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।কয়েকটা সম্বন্ধ এসেও পরিণতি পায়নি।
পূর্ব পরিচিত এক মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে প্রস্তাব আসে।প্রস্তাবটি করে পাড়ার নগেন বেরা।নগেন নিতান্তই ভালো ।একটাই দোষ স্বভাবী মাতাল।প্রতি মঙ্গলবার সুবর্ণরেখার চরে হাট বসে। হাটে সাপ্তাহিক বাজার শেষ করে বসে যায় মদের ঠেকায়। শাক সবজি লণ্ডভণ্ড,মাছ এর পচন শুরু হয়ে গেছে ।সেদিকে তার খেয়াল নেই।বোতলের পর বোতল মদ গিলে যাচ্ছে।

হন্তদন্ত হয়ে নরেন ছুটে আসে পরেশের বাড়ি।---------পরেশ কাকা বাড়ি আছো?খুব ভালো একটা কথা আছে। 
এমন ভরদুপুরে কে এলো আবার? পরেশ সুগড়ি হাতটা লুঙ্গিতে মুছে বারান্দায় পাতা খাটিয়াতে দোক্তা দলতে দলতে বলল , কি রে কি বলছিস? বল।
--- কাকা মানসীকে বিয়ে দিবে না।একটা ভালো পাত্র আছে। সরকারী চাকুরে।স্বভাব চরিত্র জলের মতো স্বচ্ছ।পান পর্যন্তও মুখে তুলে না।এমন পাত্র হাতছাড়া করো না।
কথাটা একনিশ্বাসে বলতে বলতেই চেয়ার উল্টে মাটিতে মিশে গেলো।

পরেশ কাকা মরে গেলাম, কোমরটায় খুব লেগেছে।যন্ত্রণায় গোঙ্গরাতে থাকে নরেন।

নরেনের এমন কথায় বিশ্বাস করাটা নেহাতই নির্বুদ্ধিতা ছাড়া কিছু নয়।
দুদিন বাদে এক মহিলা ফোন করে বলে,"কি গো দিদি চিনতে পেরেছো?আমি সেই মলির পিসি গো।"
খানিকক্ষণ স্মৃতি রোমন্থন করে  বলে ওঠে, "ও তুমি কি সেই হীরা দি।সেবার বর্ষার সময় মলির সাধভক্ষণে ব্যাগ মাথায় করে ভিজে ভিজে এসেছিলে।বাপ মা হারা মলি বৌমার তোমরাই তো সব।"
একটা কথা বলার ছিল। বলেই কিছুটা থমকে যান শান্তা দেবী।
"দিদি বলো কি কথা" ফোনের ওপারে মানসীর মার তর সইছে না।
"তোমাদের ছোটো মেয়েটাকে বিয়ে দেবে আমার ছেলের জন্য ।"
কথাটা যেনো বিশ্বাসই করতে পারছে না বাসন্তিদেবী।এমন প্রস্তাব সত্যিই অবাস্তব ও অকল্পনীয় ।
ঢোঁক গিলে বাসন্তী বলে, "তোমরা কি সত্যি করবে? আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না।"
পাত্রী দেখার প্রক্রিয়া সেইসঙ্গে পাত্রের বাড়ি, লোকজন, সম্পত্তি ইত্যাদি শেষ হল।
বিয়ের দিন স্থির হল ।এদিকে এক বিপদ আসলো মাথার উপর।বড় জামাতা রাধেশ্যাম অদ্ভুত দাবি করে বসে।"আমাকে বাইক দিতে হবে ।"

এ তো শিরে সংক্রান্তি ।এমনিতে বিয়ের সরঞ্জাম,আয়োজন সামলাতে গিয়েই হিমসিম অবস্থা ।টাকার যোগান কোথায় পাব?

ভাগ্যিস তুলসী দি বেঁচে ছিল।পরেশের মা তুলসী দেবীর সরকারি বাড়ি করার প্রথম কিস্তির টাকা ঢুকে গিয়েছে।প্রাণ যেনো হাতে ফিরল।বিয়ের সাত দিন আগে যেনো স্বয়ং ভগবান নেমে এলেন গরীবের কুঁড়ে ঘরে ।

এদিকে রূপশ্রী প্রকল্পের টাকাও একাউন্টে ঢুকেছে।আয়োজন মোটামুটি শেষের দিকে।সদ্য একুশে পা দেওয়া কৃষ্ণকান্তও বোনের বিয়েতে ঝাপিয়ে পড়েছে ।

রাধেশ্যাম বিয়েতে বিঘ্ন ঘটাতে পারে ।এই ভয়ে বিয়ের টাকা তার হাতে তুলে দিতে যারপর নাই সংকোচ করতে থাকে পরেশ ।

বিয়ের সাতদিন পূর্বে শ্বশুরবাড়িতে এসে তুমুল হই হট্টগোল বাধায়।মনিকা বাড়ির বড়মেয়ে।সে কিনা বিয়েতে থাকতে পারবে না বিয়েতে।এমনই বিধান শোনায় রাধেশ্যাম ।

এই উটকো ঝামেলা সহ্য করতে না পেরে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে বাসন্তী।বিয়ের হাঁড়ি, কড়াই সহ গৃহস্থালির হেঁশেল আনতে গিয়ে মূর্ছা খেয়ে রাস্তায় পড়ে যায়।

মনিকাকে তবুও বাপের বাড়ি আস্তে দেয় না ।এমন জেদ ধরে বসে থাকে তার স্বামী ।
চারদিক অন্ধকার দেখতে পায় মানসী।মায়ের জীবন আগে।তারপর বিয়ে।চাষের যেটুকু সম্বল জমি ছিল সেও বন্ধক দেওয়া।
আকস্মিক এমন বিপদে মাথায় বাজ পড়ে সকলের ।পাত্রপক্ষের লোকেরাও গাড়ি করে দেখতে হাজির বালিপুর গ্রামে।
শান্তাদেবী তার হবু বৌমাকে সারারাত আগলে রাখে মাতৃস্নেহে ।পাত্রপক্ষ থেকে মন্দিরে বিবাহ আয়োজনের প্রস্তাব দেন ধরিণীবাবু। ধরিণী বাবু সাদাসিধে মাটির মানুষ।সারাজীবন কৃষিকাজ করে অনেক কষ্টে ছেলেদের মানুষ করেছেন।সবাই বলে গোবরে পদ্মফুল ফুটেছে ।

পরেশ মাথা নত করার লোক নয়।কিছুতেই সে এই প্রস্তাব মেনে নেয় না।

বাসন্তী খুব শিগগির সুস্থ হয়ে ওঠে।হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায়।উঠেই নার্সকে বলে ,আমাকে বাড়ি নিয়ে চলো।বিয়ের অনেক কাজ বাকি।

সোনা গয়না পালঙ্ক ড্রেসিং টেবিল সব মিলিয়ে নাই নাই করে লাখ পাঁচ এর উপর খরচ হয়।দেউলিয়া হওয়ার মতো পরিস্থিতি।তবুও মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করে পরেশ ।

মনিকার আর আসা হলো না বিয়েতে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে ঘরে।সন্ধ্যার সময় পাশের বাড়ি থেকে লুকিয়ে ফোন করে বোনকে।
মানসী নিজের কান্না থামাতে পারলো না।
"আমি দূর থেকে আশির্বাদ করছি চিরসুখী হবি বোন "।
=====================
Prabir Barik 
Vill & PO - Dokra 
PS - Nayagram 
Dist - Jhargram





Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.