রঞ্জন, সুরঞ্জন
দেবাশীষ সরখেল
দেহপটে নট সকলি হারায় । সুরঞ্জন তুমিও ।
ভোর হওয়ার আগেই ,জোড়ের দিকে চলে যাও , অস্পুটে বল -জবাকুসুমশঙ্কাস । তিনি নরম কিরণ মেলে ধরেন । পাখিরা ডাকে , জোড়ের জলের মৃদু শব্দ , শব্দের ভেতর শব্দ মোহ বন্ধন ।
পুরনো দিনের ডায়লগ বলতে থাকো । শ্রোতা গাছপালা পাখি ও জোড়ের জল।
তুমি মালতি নাট্যের গোবিন্দ , সলিল অপেরার ত্রিলোক । প্রীতিনাট্য সংঘের কালকেতু । তুমি ত্রিরিশ খানা যাত্রাপালার নায়ক কিংবা সহনায়ক ।
কত মানুষজন কত সহস্র হাততালি , কত খাতিরদারি ।কত রমণীর আঁখি পল্লবের নিবিড় ছায়া ।
নায়ক একা ।নায়ক অনন্য । নায়ক এখন সঙ্গীহীন ,গল্পহীন । নীরবতার গল্পে নিমজ্জিত ।
যৌবনের ঝাড়বাতি নিভে গিয়ে এখন টিমটিমে আলো ।জীবন চলেছে উত্তাপহীন ।
কিন্তু সে সব রাত ,ডায়লগ ,না ভুলে তুমি সুরঞ্জন সামনে তোমাকে দাঁড় করাও ।তুমিই এখন সহস্র হাততালি ।
যুগ চলেছে যুগান্তর দিকে ।ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দাপটে যাত্রাবাতি প্রায় নিভু নিভু ।
তবু তুমি সুরঞ্জন ।তুমি নায়ক ।তুমি লেখক ।যাত্রাপালাকার ।তুমি নির্দেশক ।
তুমি জানো ,শিল্পী চলে যায় ,শিল্প নয়।
গ্রাম জীবনে এখনো কিছু যুবক নিজের গাটের কড়ি খরচ করে , পালা নামায় ,ফিমেল আনে ।
পালা শুরু হয়ে গেলে , রাতের অন্ধকারে তুমি সামান্য দর্শক হিসেবে শেষের সারিতে বসে থাকো ।
পালা শেষ হওয়ার আগেই চম্পট ।
এবার পড়লে ফেরে ,নিজের গাড়ি খুঁজে পাওনা । দু চাকার পুরনো টু হুইলার ।
রাতের অন্ধকারে বিমর্ষ বিগত শিল্পী । নিজেকে বল , না এলেই ভালো ছিল ।
না এলেই ছিল ভালো ।
হঠাৎ এক যুবকের উদয় ।
--- গাড়ি হারিয়েছেন ? আমি খুঁজে দেব ।আপনি সেই রক্তকরবীর রঞ্জন না ? নন্দিনী না খুঁজে পেলেও আমি আপনাকে ঠিক পেয়েছি ।
আমরাও আপনাকে খুঁজছি ,আজ পেয়ে গেলাম ।
সেই রাস্তায় আবার হাটে রঞ্জন ,কিন্তু রক্তকরবীর রাজার জাল ছিন্ন করতে পারেনা ।
প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন মরেও মরে না কখনো ।
========================