অনিন্দ্য পাল
- তুমি ওনার গায়ে থুতু ছিটিয়েছ কেন?
- ধর্মাবতার, আমি এ রকম কাজ করতেই পারি না। করিওনি।
- কিন্তু তোমার নামে যে অভিযোগ হয়েছে, তাতে তো সাক্ষীও রয়েছে।
- থাকতে পারে। আমিও একবার সাক্ষী দিয়েছিলাম। পাঁচশো দিয়েছিল। ঘটনাটা আমি দেখিইনি। লোকটা আমাকে পাখি পড়াবার মত করে পড়িয়েছিল। নিজের বৌ-য়ের বিরুদ্ধে। আমাকে বলতে হয়, আমি একটা শুঁড়িখানায় বৌটাকে মদ গিলতে থেকেছি। আশ্চর্য ব্যপারটা কী জানেন হুজুর, আমি আজ পর্যন্ত কখনও কোন শুঁড়িখানায় যাইনি। যেমন আজ পর্যন্ত আমি ইচ্ছাকৃত কোনো মানুষের গায়ে থুতু ছিটাইনি।
-- তাহলে তুমি বলতে চাইছ, অনিচ্ছাকৃত ভাবে ছিটিয়েছ?
লোকটা এবার একটু থমকে গেল। কিন্তু দমে গেল না। কয়েক সেকেন্ড মাটির দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
-- ঘটনাটা তাহলে আপনাকে খুলেই বলি। সেদিন রাস্তায় খুব জ্যাম ছিল। আমি আমার একমাত্র বিয়ে করা বৌকে পিছনে বসিয়ে যাচ্ছিলাম বাইকে। আমরা বোধহয় বৃষ্টির কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলাম। অনেকদিন তার দেখা নেই তো!
-- ওহ, তুমি বাজে কথা না বলে সঠিক ঘটনাটা বলো।
-- হ্যাঁ, বলছি ধর্মাবতার। আমরা বৃষ্টির কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলাম। ঠিক তখনি আমাদের পাশ দিয়ে একটা বেশ পুরনো চারচাকার গাড়ি আমাদেরকে পেরিয়ে যাচ্ছিল। আমাদের থেকে একটু এগিয়ে গিয়ে হঠাৎ সেই গাড়ির ভিতর থেকে কেউ এক খাবলা থুতু বাইরে ফেলল। বুঝতেই পারছেন, যেহেতু আমরা জানালার পিছনে রয়েছি এবং গাড়িটার পাশ দিয়ে চলছি তাই সেই থুতুর একটা অংশ আমার দিকে আসবে এটাই স্বাভাবিক। এলও তাই, কিন্তু আমার মাথায় হেলমেট থাকায় থুতুটা হেলমেটে এসে পড়লো।
-- সেই জন্য তুমি ওনার গাড়ির ভিতরে থুতু ছেটালে?
-- না, না ধর্মাবতার। আমি ওনার গাড়ির ভিতরে থুতু ফেলিনি। আমিও বাইকের গতিটা বাড়িয়ে ওই গাড়ির জানালার পাশে চলে এলাম। তারপর রাস্তার দিকে থুতু ছিটিয়ে দিলাম। এবার আপনিই বলুন ধর্মাবতার, আমি কি ওনাদের গায়ে থুতু ছিটিয়েছি?
-- মানে? তুমি তাহলে কোথায় থুতু ছেটালে?
-- রাস্তায় ধর্মাবতার। রাস্তা তো আমাদের সবার তাই না। আপনি বাম দিক থেকে ডানদিকে ফেললে, আমিও তো ডান দিক থেকে বাম দিকে ফেলতে পারি। আর যদি বলেন পারি না, তবে আমি কিছুই বলবো না, শুধু আজ আবার রাস্তার ওইখানটাতে গিয়ে একবার থুতু ফেলে আসব।
-- সেটা কেন?
-- আমি দেখতে চাই ধর্মাবতার যে আমার থুতুতে এমন কী শক্তি আছে যার জন্য এত মানুষ এত সময় নষ্ট করে এত পয়সা খরচা করে, এমনকি আপনাকেও ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে? দেশের ডাকসাইটে চোর ডাকাত লুঠেরা খুনেদের কথা ভুলে গিয়ে সবাই এই থুতুতে মজে গেছে, সেটাই আমি বুঝতে চাই হুজুর, কি এত শক্তি আছে আমার থুতুতে যা ওই গাড়ির মানুষগুলোর থুতুতে নেই।
-- তোমাকে দশদিনের কারাদণ্ড দেওয়া হল।
-- নিশ্চয়ই হুজুর। আমি না হয় তারপরেই রাস্তায় গিয়ে পরীক্ষাটা করে দেখবো।
=============================================