ছবিঋণ- ইন্টারনেট।
প্রেমিকের শেষ চিঠি
তপন মাইতি
প্রিয়তমা,
মনে হয় এখন তুমি আগের চেয়ে বেশি সাথে থাক।পাশে থাক।কাছে থাক।নিজের হয়ে থাক।একটা ঘোরের মধ্যে থাক।মুহুর্তে মুহুর্তে মন-ক্যানভাসে ভেসে ওঠে তোমার মুখ।যদি কেউ বাস ট্রেন ট্রাম ট্যাক্সি অটোর জানালার পাশে বসে থাকে। কারোর ধীর স্থির শান্ত ভাবে পথে চলে যাওয়া।কারোর কলেজ টাইমে মোড়ের মাথায় উদগ্রীব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা।কারোর টিয়া রঙের পোশাকে মুচকি হাসির ঝিলিক।বিকেলে নির্জন নদীর ধারে বসে থাকা বোকাটে বেকার ছেলের মোবাইল রিচার্জ করে দেওয়া।যে একটা লাল গোলাপেই সন্তুষ্ট।যে রাত জেগে জেগে খোঁজ খবর নেওয়ার মধ্যে।ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলার পর মনে থেকে যায় তার রেশ।আরও একটু সময় ধরে কথা বললে ভালো হত। যাকে বলা যায় আর কিছুক্ষণ থেকে গেলে কি বা ক্ষতি হত?আর কিছুক্ষণ থেকে যাওয়া যায় না? যার ফোনে ব্যস্ত দেখলে মনটা কু কু করে।কার সাথে কথা বলছে?অন্য কোন ছেলে সাথে নয় তো?উল্টো পাল্টা ভাবে।এই বুঝি হারিয়ে গেল!এই বুঝি হাত ছাড়া হল কাছের মানুষ।কারোর হয়ে যাওয়ার ভয়!কারোর হয়ে গেলে কি হবে আমার?আর পাঁচটা মেয়ের মত মুহুর্তে মুহুর্তে পরিবর্তন হওয়ার মনের ভাষা।যদি ওর হয়?হওয়া স্বাভাবিক!কি আছে আমার?না চাকরি আছে!না কিছু করি!না বাবার বিশ তিরিশ বিঘা সম্পত্তি আছে?না খাটা খাটনির মজবুত শরীর আছে?না জমানো কোন অ্যাসেট আছে?কিছু নেই!না ধারে না ভারে!না ফাটকা কলে কোন ইনকাম!যে সামান্য কথায় অভিমান হওয়া।অভিমান ভাঙানো!অভিমানে সারাদিন মুখে তোলেনি কোন দানাপানি।শরীর খারাপ অজুহাতে কলেজ না গিয়ে ভার্চুয়ালে ভিডিও কল করা।ফাঁকা পকেট বুঝতে পেরে কোন কিছু না খাওয়া।না কেনা। শুধু হাত ধরে হেঁটে যাওয়া।স্যাম্পু সিলকি চুলে চিরুনি দেওয়া।কপালে বাঁকা লালটিপ সোজা করে দেওয়া।সুন্দর টানা চোখে কাজল পরিয়ে দেওয়া।কানে ঝুমকোলতা পরাতে পরাতে রক্ত বের হয়ে আসা।ফল ফুল মিষ্টি বয়ে এনে।বাস ট্রেন জার্নি করে স্টেশনে বসে দুঘণ্টা অপেক্ষা করা।রেস্টুরেন্টে প্রথম খাইয়ে নিজে খেয়ে বিল পেমেন্ট করে দেওয়া। চাকরি চলে যাওয়ার পর তিন মাস ভাড়াটে বাড়িতে থেকে চাকরি খোঁজা। পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।শপিংমলে নিয়ে গিয়ে ফরমাল পোশাক কিনে দেওয়া।দোল পূর্ণিমায় পলাশ ফুলের মালা গেঁথে পরিয়ে দেওয়া।রঙ খেলে রঙিন হয়ে সেলফি তোলা।বৃষ্টির দিনে কদম ফুল চাওয়ার সুন্দর আবেদন ভিত্তিক কথা বলা।যে যখন অবসরে খুব মন খারাপ করে। ভাল্লাগেনা কিছু। যখন খুব একা একা লাগে। তখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে মিষ্টি সহজ সরল নিষ্পাপ নরম কচি সেইশমুখটা। সুন্দর কুঁচি করে পরা গরদের শাড়ি। তবে কি আমি বিরহ বিষাদকে ভালবেসে ফেলেছি?না পাঁচবছর দীর্ঘ একটা সম্পর্ক অভ্যেসে দাঁড়িয়ে পড়েছে। আজ তোমার বিহনে আমি ফ্যাকাসে।বিলীয়মান দিগন্ত বেরঙিন।দুঃখের মরুভূমি জীবন।দুঃস্বপ্ন।বিকেল হলে কান্না পায়।এখনও বিশ্বাস হয় না তুমি আমাকে ছেড়ে দিয়েছ। এখনও রাতে তোমাকে স্বপ্ন দেখি। একা একা বসে থাকি। ভার্চুয়ালে সময় কাটাই। কারোর সাথে তেমন কথা বলি না।যোগাযোগ ছিন্ন করেছ সবদিক থেকে।যত তোমাকে ভোলার চেষ্টা করি তত বেশি মনে পড়ে তোমাকে প্রিয়তমা।মনে হয় এইতো তুমি আছো সেলফিতে। ফুলদানিতে। কলমের আঁচড়ে। লেখকের লেখায়। আমার মনে অন্দরমহলে। এভাবে আর হয়তো লেখা হবেনা কোন চিঠি।
ইতি
তোমার ছোট করে ডাকনাম তপু।
নামঃ তপন মাইতি
ঠিকানাঃ গ্রামঃ পশ্চিম দেবীপুর; পোঃ দেবীপুর;
থানাঃ মৈপীঠ কোস্টাল; জেলাঃ দঃ২৪পরগণা; পশ্চিমবঙ্গ। ভারত।