ছবিঋণ- ইন্টারনেট।
একটু সহানুভূতি
মিঠুন মুখার্জী
গতবছর শীতকালের ঘটনা। সেদিন কলকাতায় ছয়-সাত ডিগ্ৰি ঠান্ডা ছিল। রাত দশটা। গৃহশিক্ষক উদয় একটি বিশেষ কাজে বাজারে গিয়েছিলেন। কয়েকটি দোকান তখন খোলা ছিল। রাস্তায় হাতে গোনা পাঁচ থেকে সাতটি লোক। ঠান্ডায় সব ঘরে ঢুকে গেছে । উদয় মেয়ের জন্য দুধ কিনছিলেন। হঠাৎ তার নজর যায় একটি কুকুরের উপর। কুকুরটি তার চারটি ছোট ছোট সন্তানকে নিয়ে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে ছিল। কুকুরের বাচ্চাগুলো মায়ের বুকের মধ্যে মুখ পুড়ে দিয়ে শরীরটাকে একটু গরম করার চেষ্টায় ছিল। কিন্তু ঠান্ডার কাছে হার মানছিল তারা। এই দৃশ্য দেখে উদয়ের খুব খারাপ লাগে। তিনি ভাবেন, "আমরা মানুষেরা কত সুখী। প্রতিকূল পরিবেশ থেকে বাঁচার জন্য অন্তত মাথার নীচে একটি ছাঁদ আছে। খাওয়া-পড়ার কোনো অভাব নেই। তবুও আমরা জীবন নিয়ে খুশি নই। আমাদের চাহিদার শেষ নেই। অথচ এই অবোলা জীবেরা খাওয়া - দাওয়া, আশ্রয় থেকে বঞ্চিত হয়েও সন্তানদের ও নিজেকে এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। আমরা বেইমানি করলেও এরা প্রভুর সঙ্গে কখনো বেইমানি করে না। সমাজে অসৎ বেইমান মানুষের পাশে লোকের অভাব নেই, অথচ প্রভুভক্ত কুকুরের মতো সৎ মানুষের সমাজে কদর কম।"
তিনি আরও ভাবেন, "সারারাত এই ভাবে লড়াই চালিয়ে যাবে এরা। নিমোনিয়ায় মারা গেলেও দেখার কেউ নেই। কোনো ডাক্তার এদের স্পর্শ করে না। কারণ এরা রাস্তার কুকুর। সারাটা জীবন মানুষের অবহেলায় অত্যাচারে বেঁচে থাকে এরা। একটু করুণা করে না কেউ। এদেরও জীবন, আমাদেরও। " একসময় তিনি কয়েক প্যাকেট বিস্কুট কিনে কুকুরগুলোকে খেতে দেন। ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে লেজ নেড়ে সেই বিস্কুটগুলো খায় তারা। তিনি যখন হেঁটে বাড়ি যান তখন ছানা-পোনা নিয়ে কুকুরটি তার পিছু নেয়। সেই রাতে গাড়ি রাখার ঘরে তাদের জায়গা দেন তিনি। মনে মনে ঠিক করেন আজ থেকে এরা এখানেই থাক। পরদিন প্রত্যেক কুকুরের জন্য একটি করে জামা তৈরি করে দেন তিনি। তার পত্নী করবীকে বলেন ---- "এরা রাত জেগে মানুষের উপকার করে, কিন্তু বিনিময়ে কপালে জোটে মানুষের লাথি - ঝাঁটা। তাই এদের একটু উপকার করে আজ আমার খুব আনন্দ হচ্ছে।"
==========================
মিঠুন মুখার্জী
C/O-- গোবিন্দ মুখার্জী
গ্ৰাম : নবজীবন পল্লী
পোস্ট+থানা -- গোবরডাঙা
জেলা -- উত্তর ২৪ পরগণা