ছবিঋণ- ইন্টারনেট।
কাঁটাতার
সুস্মিতা পাল
চারদিক আলোয় আলো । আজ দীপাবলি।একদিন পরেই ভাইফোঁটা । সন্ধ্যা বাপের বাড়ি চলে এসেছে ; গত আট বছরের মতো।
সাত বছরের ছেলে মামাতো দিদি দাদার সঙ্গে বাজি ফাটাতে ব্যস্ত । মেয়েটা কোলের , ঘুমোচ্ছে দেখে বাইরে এল সন্ধ্যা। মা আর বৌদি প্রদীপ জ্বালাচ্ছে।ছাদের কিনারে, বাড়ির চারদিকে ।
ঠাকুমার ঘরটা একধারে । উৎসবের আঁচ লাগে না তেমন
। নব্বই পুরলো গত শ্রাবণে । ঠাকুমার গায়ে কেমন পুরনো গাছের গন্ধ ।নাকি পুরনো দিনের ।
ছোটবেলায় মা কাজে ব্যস্ত থাকত।সুনসান দুপুরগুলো ঠাকুমাকে জড়িয়ে কেটে যেত ।
"সেই গল্পটা বলো না ঠাম্মা।"
"কোনটা রে ?"
" সেই লেবুগাছের "
নির্জন দুপুরের রোদ উঁকি দিত জানালায় ।ছোট্ট একটা মেয়ের কল্পনায় ধরা দিত শান্ত, নতমুখী এক গেঁয়ো বৌয়ের ছবি ।ঠাম্মার মুখের শব্দ দিয়ে বুনত তার অবয়ব।
বেলা গড়ালে খিড়কির পুকুরে বাসন মাজা সারা হলে একদিন বৌটি চুপিচুপি একটা কাজ সেরেছিল ।অনেকদিনের শখ তার ।বাড়িতে অতিথি এলে লেবুপাতা ভেজানো সুগন্ধি চা খাওয়াবে ।চারাটা লাগানো হলে রোজ দেখতো।বাড়ছিল তো, ফলও ধরত হয়তো ।তার আগেই উথাল পাথাল হলো মেঘনা নদীর জল ।দেশভাগের আগুনে পুড়ল মানুষ, গাছ,নদী ।ইচ্ছেগুলো পড়ে রইল ওপারে ।
বড় মন কেমন করত সন্ধ্যার।শেষ বিকেলের হাওয়া লেবুপাতার সুবাস বয়ে আনত ।আজ অনেকদিন পরে সেই গন্ধটা টের পেল।
ঠাকুমাকে ধরে বসাল সন্ধ্যা ।না ধরলে হাঁটতে পারে না আজকাল ।প্রদীপটা জ্বেলে হাতে নিল ।
"চলো, বাইরে আলোটা দিয়ে আসি ।"
বুড়ি ফোকলা মুখে একগাল হাসল।
সন্ধ্যা জানে , এই প্রদীপের আলো ঠিক পৌঁছে যাবে ।মেঘনা পাড়ে এক অজ পাড়াগাঁর খিড়কি বাগানে ।লেবুগাছের পাতায় পাতায় ।আলো কোনো কাঁটাতারের বাধা মানে না ।
==========================
৩৪, আর্য্য বিদ্যালয় রোড
কলকাতা -৭০০০৭৮