ছবিঋণ - ইন্টারনেট।
অপরাজেয়
অশোক দাশ
আজ আমি আপনাদের ছোট্ট এক কাহিনী শোনাই। এক হতদরিদ্র চাষির সন্তান অলকেশ। ছেলেবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী। প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি পার হয়ে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক, স্নাতকোত্তর অবশেষে বি,এড ট্রেনিং শেষ করে কৃতিত্বের সাথে। আপনারা হয়তো ভাবছেন যার পিতা হতদরিদ্র তার দ্বারা কিভাবে সম্ভব হল উচ্চশিক্ষায় পড়াশোনা করার। সেই কথাই শোনাবো। অলকেশ যখন ক্লাস সিক্সে পড়ে তখন সে তারি স্কুলের শিক্ষক নরেন বাবুর নজরে পড়ে। নরেন বাবু অংকের শিক্ষক। একদিন তিনি লক্ষ্য করলেন একবার বুঝিয়ে দেওয়ার পরেই অলকেশ সমস্ত অংক নির্ভুলভাবে সবার আগেই করে ফেলছে। ছেলেটির শুকনো মায়া ভরা মুখের দিকে তাকিয়ে নরেন বাবু স্থির থাকতে পারলেন না। তিনি স্বস্নেহে অলকের মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কি কোন শিক্ষকের কাছে টিউশন পড়ো? অলকেশ ভয়ে ভয়ে মাথা নিচু করে বলে ,স্যার আমরা খুব গরীব। বাবা ক্ষেতমজুর চাষী। সব দিন আমরা খেতে পাই না টিউশনের শিক্ষক কোথায় পাবো। সেদিন থেকেই নরেন বাবু অলকেশ কে বলে তুমি সকালে আমার বাড়িতে চলে আসবে আমি তোমাকে বিনা বেতনে পড়াবো। তুমি কোন চিন্তা করো না। শুরু হলো গুরু শিষ্যের যুগলবন্দী। নরেন বাবু অলকেশকে তার বাড়িতে রেখে খাওয়া-দাওয়া বই- পত্র শিক্ষা দীক্ষায় তাঁকে নতুন জীবন দিলেন।
গুরুর অনুমতি নিয়ে চাকরির সন্ধানে অলকেশ চেষ্টা করতে লাগলো, আর টিউশনি করে যেটুকু অর্থ পায় তা তার দরিদ্র পিতা-মাতার জন্য পাঠিয়ে দেয়। এভাবেই দিন যায় মাস যায় বছর কেটে যায় ইন্টারভিউ এর পর ইন্টারভিউ চলে কিন্তু নিয়োগ হয় না।
কত প্রতিবাদ মিছিল, কত ধর্না
রোদ জল বৃষ্টি কে উপেক্ষা করে রাজপথে পড়ে থেকেও মেধার ভিত্তিতে চাকরি হয় না। অর্থ আছে যার চাকরি তার। এটা যেন এখন এই রাজ্য তো বটেই গোটা দেশেই এই সংক্রমণ ব্যাধির স্কীকার।এক দল মুনাফা লুটছে অন্যরা ধুঁকে ধুঁকে মরছে।
অলকেশ হাল ছাড়বার পাত্র নয়। অবশেষে সে হাজির হয় তার গুরুর কাছে এবং বলে স্যার চাকরি আশা ছেড়ে দিলাম। আপনি আমাকে একটু সাহায্য করুন। আমি এক ছোট্ট ব্যবসা করতে চাই। আমি অসহায় অথব্য যে সমস্ত মানুষ রান্না করে খাওয়ার সামর্থ্য নেই তাদের বাড়িতে রান্না খাবার পৌঁছে দেব।
শুরু হলো গুরু শিষ্যের লড়াই। অল্পদিনেই অলকেশের সময়ানুবর্তিতা অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের মুখে হাসি ফোটালো। দিন দিন খরিদ্দার এর সংখ্যা বাড়তে লাগলো। এখন অলকেশ তাকে কাজে সহায়তা করার জন্য হোম ডেলিভারি দেওয়ার জন্য পাঁচ জন বেকার যুবককে তার সাথে এই কর্মে যুক্ত করেছে।
কর্মের প্রতি একাগ্রতা নিষ্ঠা থাকলে অনেক কিছু অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। তার দৃষ্টান্ত অলকেশ। হতাশায় ভুগে পরাজয় বরণ না করে, ভাগ্যের উপর দোহাই না দিয়ে, মানুষ যদি তার ইচ্ছাকে পূরণ করতে চায়, তাহলে কর্মে উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে হবে। কারণ কর্মই আসল শক্তি ।মানুষই পারে আঁধারের বুকে আলোর মশাল জ্বালাতে। অলকেশরা হারতে জানেনা তারা অপরাজেয়।
===========================
অশোক দাশ
ভোজান, রসপুর, হাওড়া ,পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।