ছবিঋণ - ইন্টারনেট।
রাধা বল্লভী
গীতা রাউথ
বাইরের খাবার খুব একটা পছন্দ নয় গোপালের।বাজারের হাজার রকমের মুখরোচক নানান পদের খাবার নাপসন্দ।সুগার,প্রেসার জর্জরিত শরীরটি ঠিক রাখতে উপযুক্ত ডায়েট করেন তিনি।গিন্নির কড়া প্রহরা। এটা ওটা খাওয়া নিষেধ।
আশুরা -২ ব্লকের জয়েন্ট বিডিও ছিলেন তিনি।প্রশাসনিক বিভিন্ন কর্মকান্ডের প্রতি সম্যক জ্ঞান তাকে অন্যের থেকে আলাদা করেছে।কাজের প্রতি আনুগত্য ও ভালবাসা আদর্শরুপে পরিগণিত হয় ।
"তাড়াতাড়ি চলে এসো নদীতে জল বাড়ছে।নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে সন্ধ্যায়।"ওপার থেকে ফোনে সতর্ক করে দেয় মঞ্জু।
মঞ্জু গৃহবধূ ,দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জননী।বড় কন্যা বিবাহিতা।ছোটো কন্যাটি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে নার্স।এক বছর হল চাকরি পেয়েছে ।ছেলে সৌম্য সবার ছোটো, বেলুড় মঠের পদার্থবিদ্যায় প্রথম বর্ষে পাঠরত।
অবসরের পর অফিস ভুলতে পারেননি তিনি।তাই অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দপ্তরের চুক্তিভিত্তিক কর্মীর বিজ্ঞপ্তি বেরোতেই আবেদন করেন।লোকসভা ভোটের আগে আগেই নিয়োগপত্র পান। নাগরা ব্লকের স্টাফ হিসেবে কাজে যোগদান করেন গোপাল। বাড়ি থেকেই যাতায়াত করেন তিনি।আনুমানিক তিরিশ কিলোমিটার দূরে নাগরা ব্লক।
শ্রাবণের মেঘ অন্ধকার করে রেখেছে চারিদিক। গিন্নির ফোন পেতেই সম্বিৎ ফিরল তাঁর। অফিস গুটিকয়েক EWS আবেদনকারী, ছাব্বিশ পয়েন্টের প্রশ্নোত্তরের জেরক্স কপি সবাইকে ধরিয়ে দিয়ে রাজস্ব পরিদর্শক,পঞ্চায়েতের কার্যনির্বাহী সহায়ক অথবা সচিবের স্বাক্ষর সহ গৃহের ফটো জমা করার কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দেন।
মিষ্টি মধুর সম্বোধনে সবাই বেশ খুশি। গোপালের ব্যবহারে মন্ত্রমুগ্ধের মতো অফিসের কলিগরা শোনে।জটিল কোন কেস হাতে আসলে তাঁর পরামর্শ নেন। তিনি সবার আগে এগিয়ে আসেন সুচিন্তিত মতামত পরিবেশন করেন।
দুপুর একটার দিকে ব্লক অফিসের প্রবেশদ্বার অতিক্রম করে দেখেন বেলচাগামী একটি বাস দাঁড়িয়ে।রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ে হাত দেখাতে থাকেন । স্ট্যান্ড ম্যানেজার পূর্বপরিচিত।তাই তিনি বাসকে দাঁড় করিয়ে রাখেন।বাসে উঠে ফাঁকা সিটে জানালার ধারে বসে একান্তে বৃষ্টি ভেজা গাছপালা দেখতে দেখতে এগিয়ে চলে।
বেলচা পৌঁছানোর একটু আগে মুষলধারে বৃষ্টি নামে।বাসের জালালা বেয়ে জল বসার সিটকে কাকস্নান করিয়ে দিল। ইউ টি এস অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট বুকিং করে নেয় যেতে যেতেই।
প্লাটফর্মে ঢুকলেই এই অ্যাপস কাজ করে না তাই সোনামুরা আসতে না আসতেই বুকিং ডান মেসেজ আসে ।
বেলচাতে ঢোকার মুখে " রাধা বল্লভী পাওয়া যায়"লেখা দেখে ঢুকে পড়েন।বেশ পরিচ্ছন্ন , কাচ দেওয়া ।হরেক মিষ্টির সম্ভার সাজানো রয়েছে থাকে থাকে।
"রাধা বল্লভী আছে দাদা? কত করে দাম?"
"আছে। সাত টাকা পিস।"
"আচ্ছা ,আমাকে দশটা দিন।"
এদিক ওদিক চোখ ফেরাতে মিষ্টির প্রতিও লোভ এলো।কিসমিস কাজু বাদামের কি যেন একটা সন্দেশ ভালো লাগে । সেটারও দশপিস নেয় সে ।
প্রথমে ভেবেছিল রাধা বল্লভী কোন মিষ্টি হবে হয়তো।কিন্তু এত কচুরির মতো কি একটা দিল।অর্ডার করে দিয়েছে তাই আর নাও বলতে পারেনা।চেনেনা সেটাও বলা সম্ভব নয় । তাই টাকা মিটিয়ে গুটি গুটি পায়ে স্টেশনের দিকে এগিয়ে যায় ।
"কেন নিলাম এগুলো? বাড়িতে গিন্নি বকাবকি করবে হয়তো!" মাথায় কথাটা কিলবিল করে ঘুরছে।
প্লাটফর্মে খেতেও পারছতে না।পলিতে বাঁধা কিসব তরকারি দিয়েছে মনে হয়। থালা বাটি ছাড়া খাওয়া সম্ভব নয়।ট্রেন এসে গেল।ট্রেন ছাড়ার সাথে সাথেই অঝোরে বৃষ্টি শুরু হল । শ্যাটার পর্যন্ত বন্ধ করতে হল এত জলের ঝাপটা ।
খড়িপুর স্টেশনে নামতে গিয়েই বিপত্তি দেখা দেয়। প্ল্যাটফর্মের ছাউনী শেষ হয়ে গেলো বৃষ্টি থামার নাম নাই।তাই ট্রেন থামার আগেই ঝাঁপ দেয় সে।বৃষ্টির জলে প্লাটফর্ম পিছল হয়েছে।পা পিছলে ট্রেনের দিকে চলে আসছিল প্রায় ।হাতের ব্যাগ পিঠের ব্যাগ জলে গড়াগড়ি খাচ্ছে ।পায়ে,কোমরে মারাত্মক রকমের চোট পেয়েছে।বৃষ্টির মধ্যে কে টেনে তুলবে তাকে।
চোখের চশমা খুলে গেছে।বৃষ্টির বড়ো বড়ো ফোঁটা গায়ে কাঁটার মতো বিঁধছে।হঠাৎ রাধা বল্লভীর কথা মনে পড়ে। চোখে বৃষ্টির জল মুছে দক্ষিণ পার্শ্বে তাকাল সে।সেকি ! সর্বনাশ! সব কুকুরে খাচ্ছে!!!
হায় ভগবান আমাকে আর রাধা বল্লভী খেতে দিল না।
----------------------------
গীতা রাউথ
বারোমানিয়া,পশ্চিম মেদিনীপুর