Click the image to explore all Offers

প্রবন্ধ ।। রহস্যময় তুষার মানব ।। শ্যামল হুদাতী

 

                                                                                                                                                               

 রহস্যময় তুষার মানব 

শ্যামল হুদাতী 



পাহাড়ে বিরাট বিরাট আকারের পায়ের ছাপ। যুগের পর যুগ ধরেই বিশ্বে নানা রকম পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। তা নিয়ে রয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা। এসব পায়ের ছাপ একেকটা একেক রকম। কিন্তু এসব পায়ের ছাপ সম্পর্কে মানুষের জানার আগ্রহ দীর্ঘদিন ধরে। এমনই এক পায়ের ছাপ আদম পাহাড়ে। 

এ পাহাড় ও পাহাড়ের পদচিহ্ন নিয়ে একটি বই লিখেছেন মারকুস অকসল্যান্ড। বইটির নাম 'দ্য স্যাক্রেড ফুটপ্রিন্ট: এ কালচারাল হিস্ট্রি অব আদমস পিক'। এতে বলা হয়েছে, এ পাহাড়টি ২২৪৩ মিটার উঁচু। আকৃতি কোণের মতো। ভারত মহাসাগর থেকে এ পাহাড় পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। আগেকার দিনে আরবের সৌখিন ব্যক্তিরা সমুদ্র যাত্রায় এসে পিরামিডের আকৃতির এ পাহাড় দেখে পুলকিত হতেন। তাদের কেউ কেউ এটাকে বিশ্বের সর্বোচ্চ পাহাড় বলেও অভিহিত করেছেন। প্রাচীনকালে সিংহলিরাও এ পাহাড়কে বিশাল উচ্চতার বলে মনে করতেন। কেউ কেউ মনে করতেন এটিই বিশ্বের সর্বোচ্চ পাহাড়। ৮৫১ সালে এ পাহাড়ে পদচিহ্ন প্রথম দেখতে পান আরবের সোলাইমান। রত্নপুরা হয়ে পবিত্র এ পাহাড়ে আরোহণ করেছিলেন বিখ্যাত আরব দার্শনিক ইবনে বতুতা। 

শ্রীলংকার মুসলমানরা বিশ্বাস করেন পৃথিবীর আদি মানব হজরত আদম প্রথম এই শ্রীলংকায় পদার্পণ করেছিলেন।আর ওই পাহাড়ে যে পায়ে ছাপ রয়েছে ওটা তারই পায়ের ছাপ। তার জন্য সে পাহাড় ও পাহাড়ের ওই পায়ের ছাপ মুসলমানদের কাছে পবিত্র হিসেবে পরিণতি হয়ে আসছে। তার নাম আদম পাহাড়। ইংরেজিতে একে বলা হয় 'আদমস পিক'। নানা কারণে এ পাহাড়টি রহস্যে ঘেরা। এ পাহাড়ের চূড়া সামান্য একটি সমতল ক্ষেত্র। ১৮১৬ সালে লেফটেন্যান্ট ম্যালকম এর পরিমাপ করেন। তাতে দেখা যায় এর দৈর্ঘ্য ৭৪ ফুট এবং প্রস্থ মাত্র ২৪ ফুট। মোট আয়তন ১৭৭৬ বর্গফুট। এর চূড়ায় রয়েছে একটি প্রকাণ্ড পাথরখণ্ড। এর উচ্চতা ৮ ফুট। এর ওপরেই রয়েছে ওই পদচিহ্ন। এর দৈর্ঘ্য ৬৮ ইঞ্চি। ৩১ ইঞ্চি চওড়া। ৮৫১ সালে এ পাহাড়ে পদচিহ্ন প্রথম দেখতে পান আরবের সোলাইমান। নানা কারণে এই পাহাড়টি রহস্যে ঘেরা। এই পাহারটিতে রয়েছে বিরাট আকারের এক পায়ের ছাপ। আর সে পায়ের ছাপ নিয়েই যত রহস্য । এই পায়ের ছাপটিকে সব ধর্মের মানুষই পবিত্র হিসেবে মনে করেন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিশ্বে নানা রকম পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। তা নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। এসব পায়ের ছাপ সম্পর্কে মানুষের জানার আগ্রহ দীর্ঘদিনের। পাহাড়ের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে রহস্য। এ পাহাড়ের চূড়ায় যে পদচিহ্ন রয়েছে সেখানে পৌঁছান খুব ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার। তবে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে সেখানে গেছেন। তারা নিজের চোখে ওই পায়ের ছাপ দেখে বিস্মিত হয়েছেন।শুধু মুসলমানদের কাছেই নয়, এই পায়ের ছাপ একই সঙ্গে বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও হিন্দুদের কাছেও পবিত্র। তারাও মনে করেন তাদের ধর্মের সঙ্গে এর রয়েছে ওতপ্রোত সম্পর্ক। তাই আদমের পাহাড় সব শ্রেণির মানুষের কাছেই পবিত্র।এ্যাডামস পিক- এ আরোহণ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। চূড়ায় পৌঁছার যে পথ তা চলে গেছে গভীর জঙ্গলের ভিতর দিয়ে। সেই জঙ্গল নানারকম ঝুঁকিতে ঠাসা। আছে বিষধর কীটপতঙ্গ। তবে চূড়ার কাছাকাছি একটি ধাতব সিঁড়ি আছে। তাতে রয়েছে ৪০০০ ধাপ। এর প্রতিটি ধাপ নিরাপদ নয়। তার ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে শীর্ষে যেতে হলে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা সময় লাগে। জটিল এক আবহাওয়ার এক অঞ্চলের মধ্যে এর অবস্থান। বছরে মাত্র তিন থেকে চার মাস এ পাহাড়ে আরোহণ করা যায়। বছরের অন্য সময়টাতে এতে আরোহণ অসম্ভব হয়ে ওঠে। কারণ, কাব্যিক অর্থে বলা যায় এ পাহাড় তখন মেঘের ভিতর লুকিয়ে যায়। চারদিক থেকে মেঘে জেঁকে ধরে। 

২০১৯ সালে ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, নেপালের মাকালুর কাছে তাদের টিম অস্বাভাবিক পায়ের ছাপ দেখেছে। তাঁরা দাবি করেছিলেন মাকালু বরুণ ন্যাশানাল পার্কের কাছে বড় আকারের পায়ের ছাপ তারা দেখেছেন। পায়ের আকৃতি ছিল ৩২x ১৫ ইঞ্চি। 

তবে এবার বাঙালি পর্বাতোরোহীদের দাবি তাঁরাও পাহাড়ে বরফের উপর অস্বাভাবিক বড় পায়ের ছাপ দেখেছেন। তবে সেই পায়ের আকৃতি প্রায় সাড়ে সাত ইঞ্চি লম্বা আর সাড়ে ছয় ইঞ্চি চওড়া। 

হাওড়া ডিস্ট্রিক্ট মাউন্টেনার্স অ্য়ান্ড ট্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশন ও হিমালয়ান অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে এই অভিযান হয়েছিল। হিমাচল প্রদেশের ইন্দ্রাসন শৃঙ্গে পৌঁছে ছিলেন অভিযাত্রীরা। প্রায় ৬ হাজার ২২১ মিটার উচ্চতায় এই শৃঙ্গ। এরপর তাঁরা দেওটিব্বা শৃঙ্গতেও যান। এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী মলয় মুখোপাধ্য়ায় ও দেবাশিস বিশ্বাস এই টিমে ছিলেন। 

এদিকে দেবাশিস বিশ্বাস ও তাঁর টিমের সদস্যদের দাবি, দেওটিব্বাতে যাওয়ার সময় ক্যাম্প ওয়ান থেকে ২তে যাওয়ার সময় বরফের উপর বিশাল আকৃতির পায়ের ছাপ তারা দেখেন। সেই ছবি তারা ক্যামেরাবন্দি করেন। কিন্তু এগুলি কাদের পায়ের ছাপ তারা বুঝতে পারেননি। তবে শেরপাদের দেখালে তারা বলেন এগুলি ভাল্লুকের পায়ের ছাপ। 

তবে সেনাদের তরফে ২০১৯ সালে যখন এই ধরনের বিরাট পায়ের ছাপ দেখানো হয়েছিল তখনও বলা হয়েছিল এগুলি ভাল্লুকের পায়ের ছাপ। কিন্তু এখানেই অনেকের প্রশ্ন, অত উঁচুতে খাবার কিছু নেই। সেক্ষেত্রে ভাল্লুকরা কি সেখানে থাকবে? 

তবে ফেরার সময় ওই পায়ের ছাপ আর দেখা যায়নি। তুষারপাতের কারণে সম্ভবত তা ঢেকে যায়। 

কিন্তু এবার প্রশ্ন এই পায়ের ছাপ আসলে কিসের?

তবে কি গল্পের ইয়েতির পায়ের ছাপ সত্যিই দেখলেন পর্বতারোহীরা? তুষারমানব কি ঘুরছে পাহাড়ের আড়ালে? নাকি অন্য কোনও প্রাণীর পায়ের ছাপ? 

এ নিয়ে পর্বতারোহীদের মধ্যেও নানা চর্চা চলছে। এই পায়ের ছাপ আসলে কাদের? 

ইয়েতি আছে কি নেই সেই প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি। আজও রহস্যময় তুষার মানব। তবে গল্পে সিনেমায় তারা থাকে। কিন্তু বাস্তবে এগুলি কাদের পায়ের ছাপ তা নিয়ে নানা চর্চা।

হয়তো এনিয়ে সঠিক উত্তর কোনওদিনও মিলবে না। তবে পাহাড়ে চড়ার টানে বার বারই ছুটে যান পর্বতারোহীরা। আর পাহাড় রহস্যে মোড়া। নির্জন। তার মাঝেই বরফের উপর একের পর এক পায়ের ছাপ। কে হেঁটে বেড়াচ্ছে?
 

   ছবিঋণ - ইন্টারনেট।

-----------------------------
 

Shyamal Hudati
Address: 357/1/13/1, P.A.Shah Road,
Kolkata - 700068


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.