ছেলে ধরা
অঙ্কিতা পাল
রিমা সীমা তাহারা দুই বোন, পড়ন্ত বেলায় উঠানের একপাশে একটি আম গাছের তলায় ছায়ায় বসে পুতুল খেলছিল। সেই সময় উমা নামের একটি মেয়ে, রিমাকে বললো - এই জানিস তো উপেনদের গাছে লাল ফুল ফুটেছে , নিয়ে আসি চল ।
সীমা বলল- না গো উমা দিদি, আমার দিদি এখন যাবে না, মা খুব বকাবকি করবে । উমা এদের দুজনের থেকে বয়সে অনেকটাই বড় এবং চালাক ও দুষ্টু ছিল।
সে তার দুষ্টু-বুদ্ধি দ্বারা রিমাকে ঠিক ভুলভাল বুঝিয়ে সেখান থেকে নিয়ে চলে গেল, সেও সরল মনে সাত পাচ না ভেবে উমার সাথে চলে গেল। সীমা তখনও সেই গাছের তলায় একাকী বসে খেলা করছে। সন্ধ্যায় নেমে এল মা (করুনা ) ডাক দিলেন - সীমা রিমা চলে আয়, আর কত খেলা করবি । মায়ের হাক শুনে, বেখেয়ালী সীমা তাকিয়ে দেখে তার দিদি সেখানে নেই।
সে অত্যন্ত ভয় পেয়ে এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে। মা আবারও হাক দেয়.......
মায়ের হাক ডাকে সীমা কোন উত্তর দেয় না ; বরং ভয়ে কাটার মত সেটিয়ে থাকে দরজার এক পাশে। মা এবার বেরিয়ে এসে রাগান্বিত কন্ঠে সীমাকে প্রশ্ন করে - কি হয়েছে রে ? এখানে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আর সেটা কোথায় লুকিয়েছে সন্ধ্যে নেমে এলো।.......
রাগে গজ গজ করতে করতে কোন উত্তর না পেয়ে তিনি সীমাকে ঝাকরাতে শুরু করেন; তখনো সীমা ভয়ে কাটার মতো চুপ করে থাকে এবং দু'চোখে অবিশ্রান্ত জলধারা । মায়ের হাতে লাঠি, উচিয়ে চেচিয়ে বললেন - দিদি কোথায় ?
সীমা তখন চিৎকার করে কেঁদে উঠলো ; আর চিৎকার শুনে তার বাবা (বরুন বাবু) ছুটে এলন । ছোট মেয়ে সীমার গলা জড়িয়ে শান্তভাবে জিজ্ঞেস করলেন- কি হয়েছে মা দিদি কোথায়?
সীমা তখনো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে, আর বলছে- উমা দিদি এসে দিদিকে নিয়ে চলে গেল উপেনদার বাড়িতে ফুল আনতে এখনো আসেনি। আমি অনেকবার দিদিকে বলেছি মা বকাবকি করবে।
মা আরও রেগে গিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে এবং উনার চিৎকারের আওয়াজে পাড়া-প্রতিবেশী সকলে ছুটে আসে। তাদের মধ্যে একজন টুম্পা বউ জিজ্ঞেস করেন - কি হয়েছে সীমার মা এত হাক ডাক কিসের ? আমিতো জানালা দিয়ে দেখলুম সেই শয়তানিটা তোমাদের বাড়ির দিকেই আসতেছে। করুনাদেবী আর কি করেন বাধ্য হয়ে সব কথা প্রতিবেশী এবং টুম্পাকে খুলে বলতে হল। তাদের মধ্যে তাপস বাবু একজন ছিলেন তিনি বললেন - বরুণদা আর সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না চলুন রিমাকে খুঁজে আনা যাক। এভাবে চেঁচামেচি করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে।
তারপর সকলে মিলে সেই সন্ধ্যেবেলা রিমাকে খুঁজতে শুরু করলো -
তখন চারিদিকে আধার ঘনিয়ে এলো;
প্রথমে উমার বাড়িতে তারপর উপেনের বাড়ি তে খোঁজাখুঁজি করা হলো। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না রিমাকে, সকলে হতাশ কোথায় গেল মেয়েটি।
কিন্তু উমা এবং উপেন , কেউ স্বীকার করলো না রিমা কোথায় গেল।
তখন টুম্পা চিৎকার করে বলল- এইশয়তানি বল রিমা কোথায় গেল?
তখন উমা বলে _ আমিতো জানি না গো পিসিমা, রিমা প্রথমে আমার সাথেই ছিল কিন্তু পরে যে কি হলো........
উমা এবং উপেনের পরিবার কিছুতেই কোন কথা স্বীকার করল না।
তপন তাপস বাবুকয়েকজন ছেলেদের খবর দিল তারা উপেন কে মারতে শুরু করল ; কিন্তু তাতেও কোন লাভ হলো না।
এদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স জ্যেষ্ঠ নগেন বাবু বলে উঠলেন - চলো সব থানায় যাই, পুলিশের ঘা পড়লে সব কথা বেরোবে।
তারা সবাই মিলে অন্ধকারে থানার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল , এমন সময় বড় রাস্তার ধারে একটা গোগানির শব্দ কানে ভেসে এলো। রাস্তার পোষ্টের আলোয় মুখটা ভালো বোঝা না গেলেও , দেখে মনে হচ্ছিল মেয়েটির হাত-পা মুখ বাঁধা আছে।
এবার সবাই মিলে সেখানে গিয়ে দেখল রিমার দেহটা জঙ্গলে পড়ে আছে। এদের মধ্যে কোন একজন পুলিশকে ফোন করল ; এবার সবাই মিলে রিমাকে নিয়ে আসা হলো। তখনো রিমার মনে আতঙ্কের ছাপ, সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে
পুলিশের কাছে এমন বর্ণনা দিল যা , তার মনে আতঙ্কের ছাপ সৃষ্টি করেছিল।
সে এভাবে ঘটনার বর্ণনা দিতে লাগলো যে - উমা তাকে লাল ফুল দেখাতে উপেনের বাড়িতে নিয়ে আসে। উমা এবং রিমা দুজনেই ফুল তুলতে ব্যস্ত ছিল, এমন সময় উমার খুব চেষ্টা পায়এবং সে জল খেতে যায়। তারপর আর উমাকে দেখা যায়নি ।
তখনৎ উপেনের কিছু লোকজন, তার হাত পা বেঁধেএকটা গাড়িতে তোলে। সে বাঁচাও বাঁচাও করেৎপ্রচন্ড চিৎকার করতে শুরু করে তাই তার মুখ ও বেঁধে ফেলা হয়। তাকেওই গাড়িতে করে বড় রাস্তা পর্যন্ত নিয়ে আসা হয় , তাদের ইচ্ছা ছিল তাকে একটা বড় লরিতে তুলে দেবে।
কিন্তু রিমা চালাকি করে চুপ করে থাকে ; যাতে তারা ভাবে রিমা মারা গেছে । তারপর তার শরীরটাকে জঙ্গলে ফেলে দেওয়া হয়।
সবকিছু ঘটনার শুনে পাড়া-প্রতিবেশী করুণা ও বরুন বাবু ভয়ে আতঙ্কিতহয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।
পুলিশ উপেন ও উমাকে গ্রেফতার করে, রিমা সুস্থ হয়ে নতুন করে পড়াশোনা শুরু করে।
===============================
অঙ্কিতা পাল
ভাঙ্গড়, দক্ষিণ 24 পরগনা।